ইসলামের উদ্ভট গল্পের ব্যাখ্যা


অনেকে আছেন যারা ইসলামের পক্ষে বিভিন্ন লেখা লিখে ইসলামকে প্রসারিত করে চলেছেন। আবার অনেকে আছেন যারা খুজে খুজে ইসলামে কোন পয়েন্টে সমালোচনা করা যায় তা বের করেন। একথা আমাকে মানতেই হবে যারা ইসলামের বিপক্ষে লেখেন তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে অপেক্ষাকৃত এগিয়ে আছে। তারা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য, যুক্তি প্রমান, এগুলো হাজির করে। এর বেশির ভাগ প্রশ্নরই উত্তর খুজে পাওয়া যায় না। এটা নতুন কিছু নয়। হাজার বছর ধরেই এমন চলে আসছে। মুসলিম দলের চেয়ে কাফেরে দলে জ্ঞানী লোক বেশী ছিল। এই সব প্রশ্ন তাদের নিজেদেরকে আরো জ্ঞানী ভাবতে শেখায় আর মুসলমানদের ইমান দুর্বল করে দেয়। মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন ঈমান রক্ষা করে ভবিশ্যতে জ্বলন্ত কয়লা ধরে রাখার চেয়েও বেশী কঠিন হবে। তেমন দিন আসা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তাই তো এখন কাফের নয় - মুসলিমেরাই ইসলামের বদনাম করছে আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জ্ঞান বিজ্ঞান তাদের মাঝেই বেশী রয়েছে।

তারা কি বলে তাতে কারো কিছু যায় আসে না। আমি তাদের সাথে অযথা তর্ক করব না। আমি আসলে উদ্বিগ্ন মুসলমান ভাইদের নিয়ে যারা ওদের লেখা পড়ে মন ছোট করছেন। তাদের লেখাতে অকাট্য যুক্তি দিয়ে অনেক কথা বলা আছে যা পড়লে আপনি যুক্তিবাদী হলে অবশ্যই ইসলাম নিয়ে সন্দেহে পড়ে যাবেন। এভাবে মুসলমান ভাইয়েরা দোটানায় পড়ে যায়। বিজ্ঞান আর যুক্তি নিবে না ইসলাম নিবে – এর মাঝে হাবুডুবু খেতে থাকে। এতে ইমান কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। আমার এই লেখা ওই সব নাস্তিক সমীপে হলেও উদ্দেশ্য ঈমানদার ভাইদের কিছুটা সাহায্য করা।

তাদের কথামতন ইসলাম নাকি অসম্ভব, উদ্ভট ও গাজাখুরি গল্পের সমাহার। বদ্ধ পাগল না হলে নাকি এগুলো কেউ বিশ্বাস করে না। উদাহরন স্বরূপ মহানবী (সাঃ) এর মেরাজের ঘটনা, গাধার পিঠে চড়ে স্পেসস্যুট ছাড়া মহাকাশ ভ্রমন, চাদ দিখন্ডিত হওয়া ইত্যাদি তারা বর্ননা করে থাকেন।

আমি ছোট্ট একটি উদ্ভট গল্প দিয়ে শুরু করছি। সেদিন একটু দেরী করেই ঘুম ভাঙ্গল। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে সিড়ি ছাড়া ৬ তলা থেকে নীচে নামলাম। গেটের তালার সামনে চাবিটা ধরতেই তালাটা খুলে গেল। আমি রাস্তায় বের হয়ে হাটতে থাকলাম। কাছেই ট্রেন স্টেশন। স্টেশনে এসে আমার মানিব্যাগ দরজার সামনে ধরতে দরজাটা খুলে গেল। ট্রেনে উঠে আমি রওনা হলাম। গন্তব্যের স্টেশনে পৌছে ঢুকে গেলাম শপিং সেন্টার। সেখানে সুপার মার্কেটে কিছু বাজার করে ট্রলীতে ভরলাম। কাউন্টারে আসার পরে কাউন্টারের লোকটি প্রত্যেকটা জিনিস স্ক্যান করার পরে আমাকে জানালো কত টাকা দিতে হবে। আমি বললাম আমার ক্রিডিট কার্ড থেকে টাকাটা কেটে নিন। আমার পকেট থেকে ক্রেডিট কার্ড বের করে তার মেশিনে ঘষা দিতে হল না। কার্ডটি আমার পকেটেই থাকল, সে টাকা কেটে নিল। এবার আমি বাজার ভরে ট্রলীটি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে সেটি ঠেলতে লাগলাম। কিছুক্ষন পরে স্টেশনে পৌছালাম। ট্রলীটি স্টেশনের বাইরে রেখে হাতে ব্যাগগুলো নিয়ে আবার স্টেশনে ঢুকলাম। যথারীতি মানিব্যাগ দরজার সামনে ধরতে স্টেশনের দরজা খুলে গেল। আমি ট্রেনে উঠে পড়লাম। এক সময় টিকিট চেকার আসল। আমি মানিব্যাগ থেকে কার্ড (ক্রেডিট কার্ড নয়) বের করে তাকে দিলাম। সে কার্ডটির উপরে মোবাইল এর মতন দেখতে একটি যন্ত্র ধরলো। যন্ত্রে লেখা দেখা গেল আমি কোন কোন সময় কোন স্টেশনে গিয়েছে। আরো দেখা গেল আমার কার্ডে কত টাকা বাকী আছে। এর পরে আমাকে কার্ডটি ফেরত দিল। দশ মিনিট পরে আমি বাসায় পৌছালাম। বাসায় এসে টিভিটা অন করেছি, হটাত দেখি স্কাইপীতে আমার বন্ধু অনলাইনে রয়েছে। টিভিতে স্কাইপীতে ওর সঙ্গে কিছুক্ষন চ্যাটিং করলাম। এর পরে কিছু খেয়ে টিভি দেখতে দেখতে বিশ্রাম নিলাম। বিকালে আবার বেরুতে হবে।

এই গল্পটির যে কোন অংশ আপনার কাছে অদ্ভুত লেগেছে। কারো কারো কাছে হয়ত অদ্ভুত লাগেনি, মনে করছেন বিজ্ঞানের এই যুগে সবই সম্ভব। কিন্তু হয়ত বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে পারছেন না। কিভাবে মেশিনে ঘষা না দিয়ে টাকা কেটে নেয়। কিভাবে ট্রেনের কার্ডে টাকা থাকে আর ছোট একটি যন্ত্র দিয়ে কোন কোন স্টেশনে গিয়েছি তা দেখা যায় এটা ব্যাখ্যা করা একটু মুশকিল মনে হচ্ছে। অনেকের কাছে হয়ত মার্কেটের ট্রলী কিভাবে রাস্তায় নিয়ে আসলাম, কিভাবে টিভিতে চ্যাটিং করলাম সেটা অদ্ভুত মনে হচ্ছে। কিন্তু কারো কাছেই আমার সিড়ি ছাড়া ছয় তলা থেকে নেমে আসাটা অদ্ভুত মনে হয়নি। কারন সবাই লিফট চিনেন। সারা বিশ্বে এখনো কয়েক হাজার সুবিধা বঞ্চিত মানুষ খুজে (আফ্রিকার জঙ্গলে) পাওয়া যাবে যারা লিফট চিনে না। আমাদের দেশেই হয়ত এমন লোক পাওয়া যাবে। তাদের কাছে কিন্তু সিড়ি ছাড়া নেমে আসাটা অদ্ভুত লাগে। আপনার কাছে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। একবার চিন্তা করে দেখুন, লিফট না চেনা ঐ লোকটির কাছে আমার পুরো গল্পটা কতটা অদ্ভুত আর কতটা গাজাখুরি। তার ধারনা অনুযায়ী আমার গল্পটি বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না।

আমার গল্পটিতে উদ্ভট কোন কথা নেই। ঘটনাটি বানানো, কিন্তু আমি নিজে ওই সবগুলি ব্যবস্থা ও প্রযুক্তি বিভিন্ন সময়ে ব্যাবহার করেছি। এগুলি কিভাবে কাজ করে তার ব্যাখ্যা করে সময় নস্ট করব না। তবে কারো কৌতুহল হলে আমাকে যানাবেন, আমি ব্যাখ্যা করব। এখন কারো কাছেই আমার এই গল্প উদ্ভট মনে হচ্ছে না। সবাই গল্পটি বিশ্বাস করছেন। আপনি কিন্তু লিফট না চেনা ওই লোকের চোখে বদ্ধ উন্মাদ। তার ধারনা অনুযায়ী আপনি উদ্ভট ও গাজাখুরি গল্প বিশ্বাস করছেন।

এর থেকে এটা স্পস্ট হল যে উদ্ভট/আশ্চর্য/অলৌকিক আসলে সেই সব জিনিস যা আমরা সাধারনত দেখি না বা যে বিষয়টা আমরা যানি না। আমাদের উদ্ভট এর মানদন্ড আমাদের জানার পরিধীর উপরে নির্ভর করে। এখানে দুটি বিষয় প্রমান হয়।

১। আপনি একটা জিনিস জানেন না, তার মানে এই না, যে সেটার অস্তিত্ব নেই।

২। আপনি একটা জিনিসের ব্যাখ্যা খুজে পান না, তার মানে এই না যে সেটা হয়না।

লিফট না চেনা ওই লোকটিকে আপনি যেভাবেই বোঝান না কেন সে কিছুতেই আমার গল্পটি বুঝবে না। তার এটা বোঝার ক্ষমতাই নেই। ঠিক তেমনি ঈমান না থাকা কোন ব্যাক্তিকে আপনি যতই বোঝান সে কিছুতেই ইসলামের অবাক করা বিষয় গুলি বুঝবে না।

এবার আসুন দেখি অসম্ভব কাকে বলে। আপনি আমার এই লেখায় কমেন্ট করতে পারেন। আপনাকে যদি বলি, আমার এই লেখা পরিবর্তন করতে বা মুছে ফেলতে তবে সেটা আপনার জন্য অসম্ভব। আপনিও আপনার ব্লগে লিখতে পারেন যেটা পরিবর্তন করা আমার জন্য অসম্ভব। কিন্তু এই ওয়েব সাইটের মডারেটর কিন্তু আপনার আমার সবার লেখা পরিবর্তন করতে বা মুছে ফেলতে পারে। তার জন্য এটা সম্ভব। এবার সেই মডারেটরকে বলুন, ওয়েব সাইটের উপরে ব্যানারে যে ছবি রয়েছে সেটা পরিবর্তন করতে। এটা তার জন্য অসম্ভব। ওয়েব সাইটটি যে ডিজাইন করেছে তার পক্ষে এটা সম্ভব। ওয়েব সাইটের ডিজাইনারের পক্ষে এই ওয়েবসাইটের সব রকম পরিবর্তন করা সম্ভব। তার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। সীমাবদ্ধতা রয়েছে আপনার আমার মতন লোকের যারা এই ওয়েবসাইট আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারি। আপনাকে যদি বলা হয় – এই ওয়েব সাইটে তো সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড, এটাকে লাল করে দিন। আপনি এক কথায় বলবেন, সেটা অসম্ভব। কিন্তু ওয়েব সাইটের ডিজাইনারকে এটি করার জন্য মাত্র কয়েকটি ক্লিক করতে হবে। ডিজাইনার চাইলে আপনার সব পোস্টেই লাল ব্যাকগ্রাউন্ড আসবে। আপনার কিছুই করার থাকবে না। তখন আপনি কিন্তু, এটা আদৌ সম্ভব কিনা, তার চিন্তাও করবেন না। কারন আপনি জানেন, ডিজাইনার ওয়েবসাইটের সব পরিবর্তন করতে পারে।

এর থেকে বোঝা গেল, সম্ভব ও অসম্ভব বিষয়টা সম্পুর্ন নির্ভর করে ক্ষমতার উপর। ওয়েব সাইটের ডিজাইনার আমাদেরকে যেটুকু ক্ষমতা দিয়েছে আমরা সেটুকু করতে পারি। সেটুকু আমাদের জন্য সম্ভব। কিন্তু তার নিজের জন্য সবই সম্ভব। এই মহাবিশ্ব আল্লাহর তৈরি। তিনি এর ডিজাইনার। আমরা তার বান্দা, আমাদেরকে এর অংশবিশেষ ব্যাবহার করতে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে সীমাবদ্ধতা দিয়েছেন। এর বাইরে আমরা কিছু করতে পারিনা। কিন্তু আল্লাহ নিজে, সবই পারেন। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আমাদের পক্ষে অসম্ভব কাজগুলি তার জন্য খুবই সহজ।

মেরাজের ঘটনা, চাদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা এগুলো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর কুদরত। এটা কিভাবে সম্ভব, এটা আদৌ সম্ভব কিনা, বিজ্ঞানে এর ব্যাখ্যা কি ইত্যাদি চিন্তা করা একদিকে হাস্যকর অন্যদিকে তার ক্ষমতার উপরে সন্দেহ করা। অমুসলিম হলে অন্য কথা – কিন্তু মুসলিম হলে এই সব চিন্তা ঈমান ধংশ করে দেয়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে থাকার তৌফিক দান করুন।

Comments