কাকে সর্বশক্তিমান মানবো - জনগন নাকি আল্লাহ


একটি গনতান্ত্রিক দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। থাকতে পারে বিভিন্ন মতভেদ। এদের মধ্যে চলে সংঘাত। আমরা দেখেছি এক রাজনৈতিক দল আরেক দলের সঙ্গে কেমন নোংরামী করে। দেখেছি কিভাবে নিজেরাই নিজের দলের কাউকে হত্যা করে বিপক্ষ দলের নাম দেয়। দেখেছি কিভাবে সরকারী পদবী সমুহ দলীয়করন ও বংশীয়করন হয়। দেখেছি কিভাবে বিভিন্ন মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে ধংশ করার খেলা চলে। দেখেছি রিমান্ডের নামে বিরোধী দলের উপরে অত্যাচার। দেখেছি ক্ষমতাসীন দলের নেতা শত খুন ও ধর্ষন করেও হীরো আর অন্যদিকে বিরোধী দলের কেউ শুধু বাজে কথা বললেই তার উপরে চলে গ্রেফতার, রিমান্ড আর জেল। দেখেছি রাজনৈতিক দলের যাতাকলে পিস্ট হয়ে জনগনের দুর্ভোগ। হরতাল, দুর্নীতি, চাদাবাজী ও সন্ত্রাস এসব এর কথা নাইবা বললাম।
ধারনা ছিল অনেক কিছুই দেখে ফেলেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল প্রসঙ্গে হাইকোর্টের রায় দেখে বুঝতে পারলাম, দেখার অনেক কিছু বাকী রয়েছে। আওয়ামী লীগ (নিজেদের দলে রাজাকার থাকতেও) যেভাবে জামায়াতের নেতাদের যুদ্ধাপরাধী বলে বিচার করে ফাসী দেওয়ার চেস্টা করছে ঠিক তেমন ধরনের একটা কায়দা করে যদি জামায়াত নিষিদ্ধ করার চেস্টা করত তাহলে অখুশী হলেও হয়ত বিষয়টা মেনে নিতাম। যেমন, ওরা যুক্তি দেখাতে পারত যে জামায়াত সন্ত্রাসী দল, রগ কাটা দল, স্বাধীনতা বিরোধী দল।এসব যুক্তি ওরা সারা জীবন দেখিয়ে এসেছে এবং এগুলো বলে বলে প্রতিস্টিত করেও ফেলেছে। আওয়ামী প্রভাবিত হাইকোর্ট যদি ওসব যুক্তি দেখিয়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করতে চাইত তাহলে বুঝতাম যে ওরা জামায়াতের শত্রু তাই যেভাবেই হোক জামায়াতকে ধংশ করতে চাইছে। কিন্তু যে রায় দিয়েছে এবং রায়ের যে ব্যখ্যা দিয়েছে তারে ওরা প্রমান করে দিয়েছে যে ওরা জামায়াতের তো বটেই, ইসলামেরও শত্রু।

রায়ে বলা হয়েছে যে জামায়াতের নিজস্ব গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, তাই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। তো এই সংঘর্ষ কোথায়? বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী "জনগন সর্বময় ক্ষমতার উতস"। আর জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী "আল্লাহ সকল ক্ষমতার উতস"। এজন্য জামায়াতকে বাতিল করতে হবে। এক কথায়, আল্লাহকে জনগনের চেয়ে শক্তিশালী বলায় জামাতের নিবন্ধন বাতিল হতে চলছে। হাই কোর্টের রায় ব্যাখ্যায় দেশের বিভিন্ন্ আইনজীবির আলোচনায় এটাও বলা হয়েছে যে এমন কয়েকটি বিষয় পরিবর্তন করলে জামায়াত নিবন্ধন বাতিল হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে। এক কথায়, জনগনকে আল্লাহর চেয়ে বেশী শক্তিশালী মানলে জামায়াত বাতিল হবে না। সাধারন জনগন , এই রায়ের বিপক্ষে অনেকে অবস্থান নিলেও পক্ষের লোক একেবারে কম নয়।

এখানে একটি বিষয় পরিস্কার বোঝা গেল। আল্লাহকে শর্বশক্তিমান মানার জন্য জামায়াত বাতিল হতে চলছে। এর অর্থ, যারা এই বাতিল করছে বা করতে চায় তারা নিজেরা (অবশ্যই) আল্লাহকে শর্বশক্তিমান মানে না। শুধু তাই নয়, তারা "আল্লাহ সর্বশক্তিমান" কথাটার এমন ঘোর বিরোধী যে এটা মানার কারনে জামায়াতকে বাতিল করতে চাইছে। ইসলামের প্রথম কথা আল্লাহ এক, সর্বশক্তিমান ও একমাত্র উপাস্য। এটাই যে মানে না, সে মুসলিম নয়। এটা সাধারন যুক্তির কথা, আল্লাহকে সর্বশক্তিমান না মানলে একজন মুসলিম থাকে কিভাবে? অনেক রাজনীতিবিদ, সরকারী আমলা সাময়িক সুবিধার জন্য ইসলামকে ছোট করতে পিছপা হন না। তাদের কথা আলাদা। আমি লিখছি সাধারন জনগনের জন্য যারা বুঝে ও না বুঝে এমন এক সাঙ্ঘাতিক বিষয়ে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

প্রথম কথা - ইসলাম ও জামায়াত এক নয়। আপনি মুসলিম, তাই বলে যে আপনাকে জামায়াতের সমর্থক হতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। বাংলাদেশে আরো অনেক ইসলামিক দল রয়েছে। জামায়াতকে পছন্দ ও অপছন্দ করা সম্পুর্ন আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।

২য় কথা - আপনি অন্য ধর্মের হলে কিছু বলার নেই। কিন্তু আপনি মুসলিম হলে ইসলামের বিষয়ে আপনার ব্যাক্তিগত কোন পছন্দ ও অপছন্দের কোন মুল্য নেই। মুসলিম হলে ইসলামে যা আছে তার সবটুকুই মেনে নিতে হবে। পছন্দ না হলে আপনি এমনিতেই ইসলামের থেকে বের হয়ে যাবেন। হয়ত, আমার কথা পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু এটাই ইসলামের কথা।

ইসলামে নামাজ, রোজা ,জাকাত, পর্দা ইত্যাদি অবশ্য পালনীয় (ফরজ)। এগুলো আল্লাহর আদেশ এবং এসব পালন না করলে গুনাহ হয়। অস্বীকার করলে (অপছন্দ করলে) কাফের হতে হয়। ইসলামের থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। ঠিক তেমনি আল্লাহর যে কোন একটি বানী অপছন্দ করলে কাফের হতে হয়। আল্লাহ যে সর্বশক্তিমান সেটা আল্লাহ নিজেই (কোরআনে) বলেছেন। এটা যদি আপনার পছন্দ না হয় তাহলে আপনি ইসলামের থেকে এমনিতেই বের হয়ে যাবেন। জামায়াতকে অপছন্দ করেন ঠিক আছে। কিন্তু যদি মনে করেন আল্লাহ নয়, জনগন সর্বময় ক্ষমতার উতস তবে আপনি ইসলাম থেকে বের হয় যাবেন।

একটি স্কুলে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হচ্ছেন হেডমাস্টার। অফিসে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হচ্ছেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। দেশে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হচ্ছে জনগন এর নির্বাচিত প্রতিনিধি। এদের সবার উপরে ক্ষমতাবান হচ্ছেন আল্লাহ। আল্লাহর চেয়ে জনগন এর ক্ষমতা বেশি এটা একটি কুফুরী মতবাদ। আপনি মনে মনে এই ধারনা করলে অমুসলিম হয়ে যেতে হবে। এছাড়া সাধারন জ্ঞানেই "জনগন সর্বময় ক্ষমতাবান" এটা ভুল কথা। আপনি আমি তো সাধারন জনগন। আমাদের ক্ষমতা বেশি নাকি মন্ত্রী ও নেতাদের ক্ষমতা বেশী? ক্ষমতাবান হচ্ছে জনগন নির্বাচিত প্রতিনিধি। আল্লাহকে সর্বশক্তিমান মানায় যদি একটি দল বাতিল হয় তবে আগামীতে আরো অনেক কিছু দেখতে পাওয়া যাবে। হয়ত আল্লাহকে সর্বশক্তিমান মানে এমন লোকের (মুসলিমের) নাগরিকত্ব বাতিল হবে। জনগনের নাকি এত ক্ষমতা - এসব ফাইজলামী দেখেও সর্বশক্তিমান অসহায় জনতা কিছুই করতে পারছে না।

Comments