শিরক থেকে সাবধান (প্রচলিত শিরক সমুহ)


ইসলামের প্রথম কথা হল আল্লাহর একত্ববাদ। একে তাওহীদ বলে। এর বীপরিত হচ্ছে শিরক, যার অর্থ অংশিদারত্ব। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তার কোন অংশিদার নেই। তিনি সর্বময় ক্ষমতার একছত্র অধিকারী। মুসলমান মাত্রই এটি জ়ানা উচিত। কারন শিরক হল সবচেয়ে বড় গুনাহ। অন্য কোন গুনাহ আল্লাহ ইচ্ছে করলে মাফ করে দিবেন। কিন্তু শিরক কখনো মাফ করবেন না, যদি আমরা নিজেরা মাফ না চাই।
শিরকের শাস্তি - চীরস্থায়ী জাহান্নাম। অনেক মনে করেন মুর্তিপুজা বা অন্য কোন কিছু পুজা করা একমাত্র শিরক যা শুধু অমুসলিমরাই করে থাকে। কিন্তু ওদিকে আমাদের দেশের তথাকথিত আধুনিক মুসলিমেরা বুঝে বা না বুঝে একের পরে এক শিরক করেই যাচ্ছে। আল্লাহ আমাদেরকে সেই সব শিরক জানার ও তার থেকে মুক্তি পাওয়ার তওফিক দান করুন।

পীর ও আওলিয়াঃ আমাদের দেশে কোন বড় সাহেবের অফিস থেকে কোন কাজ উদ্ধার করতে হলে ওই অফিসের সহকারীকে হাত করতে হয়। ঘুষ দিতে হয় যাতে কাজ উদ্ধার হয়। এই ধারনাটা কিভাবে যেন ইসলামের মধ্যেও ঢুকে গেছে। আমরা পাপী বান্দা, আল্লাহ আমাদের দোয়া সহজে কবুল করেন না। এজন্য রয়েছে পীর। আমরা পীরকে বিভিন্ন উপহার (ঘুষ) দেই যেন আল্লাহ ওই পীরের উসিলায় আমাদের দোয়া কবুল করেন। পীরের রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ। পীরের মুরিদ হতে পারলে বেহেস্তে যাওয়া ঠেকায় কে। এমন কথাও প্রচলিত রয়েছে "যার পীর নেই, তার পীর শয়াতান"। অর্থাৎ মুক্তি পেতে গেলে আপনাকে অবশ্যই কোন পীরের মুরিদ হতে হবে। না, আমি কোন ভন্ড পীরের কথা বলছি না। আমি হাক্কানী (সঠিক) পীরের কথা বলছি। পীরকে উছিলা করে আল্লাহর দরবারে মুক্তি লাভের এই ধারনাটাই শিরক। হাসরের ময়দানে আপনি আমি যেভাবে মুক্তির জন্য হয়রান থাকব থীক সেভাবে পীর নিজেও তার নিজেকে নিয়ে হয়রান থাকবে। তার সময় ও সুযোগ বা ক্ষমতা হবে না আপনাকে মুক্তি দেবার। সে নিজে মুক্তি পায় কিনা সন্দেহ, আপনাকে বাচাবে কি করে?

মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় আপনি নিজেই। পরীক্ষার ফলাফল যেমন আপনার নিজের লেখা পড়ার উপরে নির্ভর করে ঠিক তেমনিই পরোকালে আপনার অবস্থা একমাত্র আপনার নিজের পাপ-পুন্যের উপরে নির্ভর করে। আর আমরা পাপী, এজন্য আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল না করে পীরের দোয়া কবুল করেন এটা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইতে হলে সরাসরি (আবারো বলছি - সরাসরি) আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলের ব্যাক্তিগত দোয়া শোনেন ও ইচ্ছে মতন কবুল করেন। আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়ার সময় (দোয়া) যদি আপনার ও আল্লাহর মাঝে কোন ব্যাক্তি বা বস্তু নিয়ে আসেন তাহলেই সেটা শিরক হবে। পীরতন্ত্র ইসলামে নেই।

মাজারঃ পীরতন্ত্রের ফসল হল মাজার। অনেকের ধারনে এই সব পীর মারা যাবার পরে আরো বেশী শক্তিশালী হয়ে যায়। কারন তখন সেই পীর পরোকালে অবস্থান করে আল্লাহর সাথে আরো সহজে যোগাযোগ করতে পারেন। তাই তো মাজারে গিয়ে অনেকে কবরে শায়িত সেই পীরের কাছে বিভিন্ন জিনিস চায়। কেউ আবার মাজারে সুতা বাধে, চাদর চড়ায়, মুরগী খাসী ইত্যাদি মানত করে। এগুলো শিরক, কারন আল্লাহর ক্ষমতার অংশ আপনি মৃত পীরকে দিচ্ছেন। মনে রাখবেন, মারা যাবার সাথে সাথে দোয়া করার সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সেই মৃত পীর নিজের জন্যই দোয়া করতে পারে না, আপনার ইচ্ছে পুরন করবে কিভাবে? বরং জীবিত ব্যাক্তি পারে মৃত ব্যাক্তির জন্য দোয়া করতে। তার মানে আপনি ওই মৃত পীরের জন্য দোয়া করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি তার চেয়ে বেশী শক্তিশালী। অনেকে আবার সরাসরি পীরের কাছে চায় না। তারা মনে করে পীরের মাজারের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করলে আল্লাহ ওই পীরের উসিলায় সেই দোয়া কবুল করেন। এটাও শিরক , কারন আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেও মাঝে পীরকে নিয়ে আসছেন। আবারো - কোন কিছু একমাত্র আল্লাহর কাছে সরাসরি চাইতে হবে। এর মাঝে কোন উছিলা (ব্যাক্তি বা বস্তু) আসলেই সেটা শিরক।

অনেকে মাজারে গিয়ে কিছু চায়না। তারা সওয়াবের আশায় মাজার জিয়ারত (পরিদর্শন) করে আসেন। এটিও শিরক। কোন কবর জিয়ারত করলে আপনার সওয়াব হয়না। এমনকি সেটা রাসুল (সাঃ) এর কবর হলেও। রাসুল (সাঃ) এর কবর এর আশেপাশে বন্ধ করে রাখা। কবরের কাছে যাওয়া যায়না। এমনকি জিয়ারতের নামে নাজায়েজ কাজ বন্ধ করার জন্য নিরাপত্তা কর্মীরা ওই কবর মানুষেকে ভীর করতে দেয়না। ব্যক্তি রসুল (সাঃ) ও তার আদর্শ আমাদের কাছে গুরুত্বপুর্ন। তার কবরের কোন গুরুত্ব নেই। যেখানে রাসুল (সাঃ) এর কবরের গুরুত্ব নেই সেখানে পীর এর কবরের কি গুরুত্ব রয়েছে? কবর জিয়ারত করলে সওয়াব তো হয়ই না বরং শিরকের ঝুকি থাকে।

কবর জিয়ারত জায়েজ করার জন্য অনেকে এই যুক্তি দিয়ে থাকেন যে, কবর দেখলে আমাদের মৃত্যুর কথা বেশি স্মরন হয় ও পাপ করার প্রবনতা কমে। এটাই যদি উদ্দেশ্য হয় তবে কবর দেখার জন্য বরিশাল থেকে সিলেট যেতে হবে কেন। আপনার বাড়ীর কাছেই বহু কবর রয়েছে। অনেকের বাড়ীর সীমানাতেই কবর থাকে। সেগুলো দেখে মৃত্যুর কথা স্মরন করুন। এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে, কবর জিয়ারত এত অপ্রয়োজনীয় কাজ হলে আমরা আমাদের মৃত আত্মীয় স্বজনের কবরও কি জিয়ারত করতে পারব না? এটা না করলে আমরা তাদের জন্য দোয়া করব কিভাবে? উত্তর - কোন কবর জিয়ারত (পরিদর্শন) এর উদ্দেশ্যে যাওয়া যায়েজ নয়। কবরটি যদি আপনার পথে পড়ে যায় তবে জিয়ারত করে আসতে পারেন। আর মৃত ব্যাক্তির জন্য দোয়া আপনি যে কোন যায়গা থেকে করতে পারেন। এর জন্য ওই ব্যাক্তির কবরের সামনে দাড়াতে হবে এমন কোন কথা নেই। উদাহরনঃ আপনার ছোট ভাইয়ের চাকুরীর সুপারিশ করার জন্য যখন বড় সাহেবকে ফোন করেন তখন কিন্তু আপনি যে কোন যায়গা থেকেই যেটা করেন। ছোট ভাইয়ের ঘরের সামনে দাড়িয়ে ফোন করেন না। ঠিক তমনি, মৃত দাদা বা নানার (বেহেশতের সুপারিশের) জন্য যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন তখন তার কবরের সামনে দাড়ানোর প্রয়োজন নেই।

মুল কথা, কবরের আশেপাশে যাওয়াটাই অপ্রয়োজনীয় এবং এটাকে ইসলামে নিরুতসাহীত করা হয়েছে। সেখানে কবরে গিয়ে পীরের কাছে কিছু চেয়ে শিরক করে চীরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়াটা বড় বোকামী হবে।

ওরসঃ মাজার পন্থীদের আর এক আবিস্কার এই ওরস। ওরস আরবী শব্দ যার অর্থ দাঁড়ায় বিবাহ, বাসর ইত্যাদি। পীরের মৃত্যু দিবসকে ওরস বলা হয়। মাজার পন্থীদের ধারনা ওই দিনে পীর মরে গিয়ে আল্লাহর সাথে মিলিত হয়েছে (নাউজুবিল্লাহ)। এই নাম থেকেই বোঝা যায় এটা কত বড় শিরক। ওরস আসলে এক ধরনের মেলা। এখানে অনেক লোকের সমাগম হয়, ব্যাবসা হয়। সরলমনা মুসলমানেরা ওখানে গিয়ে মনে করে না জ়ানি কত সোওয়াব করলাম। আসলে এটি শিরক এর মেলা। আর একটি কথা অনেক মাজারে বছরে ৩-৪ বার ওরস হয়। পীর তো মারা গেছে বছরের একটি দিনে। কিন্তু সেই পীরের মৃত্যু দিবস (ওরস) কিন্তু একাধিকবার পালন করা হয়। কারন একটাই - এই ওরস মেলা একাধিকবার করলে ব্যাবসা বেশী হয়।

তাবিজ কবজঃ ভাগ্য পরিবর্তন এর জন্য পাথরের ব্যাবহার আমাদের দেশে নতুন নয়। এটা যে শিরক সেটা অনেকেই জানেন। এসব পাথর যারা বিক্রি করে তাদের একটা বড় অংশ বেশ দাড়ি টুপি পড়া হুজুর। তার পরেও অনেক ক্রেতাই এটাকে ভুয়া মনে করে বর্জন করেছনে। কিন্তু অব্যাবসায়িক অনেক বস্তু এখনো আমাদের সমাজে রয়েছে যেটা একছত্রভাবে হুজুরেরাই চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারন মানুষ তো দুরের কথা অনেক হুজুরেরাই জানে না যে এগুলো শিরক। যেমন - তাবিজ, সুতা পড়া, পানি পড়া ইত্যাদি। এই ধরনের "পডা" এর একমাত্র জায়েজ পদ্ধতি হল শরীরে ফু দেওয়া। কোনআনের আয়াত পড়ে শরীরে ফু দেওয়া জায়েজ আছে। অন্যান্য সকল বস্তু "পড়া" হারাম ও শিরকের সহজ রাস্তা। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত হল তাবিজ। বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসার বড় হুজুরেরা এসব তাবিজ দিয়ে থাকেন। এমন কোন সমস্যা নাই যা এই তাবিজে সমাধান হয় না। তাবিজ শিরক। তাবিজে কোরআনের আয়াত থাকলেও সেটা শিরক। কেউ যদি মনে করে যে এই তাবিজের শক্তি রয়েছে এবং এই তাবিজ তার সমস্যা সমাধান করে তাহলে সেটা বড় শিরক। কেউ যদি মনে করে তাবিজে কোন ক্ষমতা নেই - আল্লাহই উদ্ধার করেন, তাবজ একটা উসিলা মাত্র। তাহলে এটি ছোট শিরক। কারন আল্লাহ উদ্ধার করেন তার নিজের ইচ্ছাতে। কিন্তু আপনি মনে করছেন এই বস্তু (তাবিজ) আল্লাহকে সেই উদ্ধার করতে বাধ্য করে বা উতসাহিত করে। এখানে আপনি আল্লাহ ও আপনার মাঝে তাবিজকে নিয়ে এসেছেন। সমাধানের বা উদ্ধার এর মালিক একমাত্র আল্লাহ। এই উদ্ধারের জন্য সরাসরি তার কাছে চাইতে হবে, কোন উছিলা ছাড়া। অন্য কেউ আপনার জন্যও সরাসরি দোয়া করতে পারেন। কোন বড় হুজুর যদি কোন তাবিজ দিতে চায় তাহলে তাকে বলবেন দোয়া করতে অথবা কোরআনের আয়াত পড়ে গায়ে ফু দিতে। এতে আপনি এবং সেই হুজুর শিরক থেকে রক্ষা পাবেন। যে যেভাবেই বোঝান না কেন - তাবিজ শিরক।

উপরের উল্লেখিত বিষয় সমুহের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে নির্দেশ রয়েছে। সেগুলো আপনি নিজে পড়ে বুঝতে পারেন বা বিজ্ঞ আলেমের সরনাপন্ন হতে পারেন। তবে একথা ঠিক যে উপরে উল্লেখিত কাজগুলো শিরক। আল্লাহ আমাদের সকলকে শিরক থেকে বাচার তওফিক দান করুন।

Comments