আল্লাহর কুদরত দেখে আমাদের ফাদে পড়া


আপনারা হয়ত এই ধরনের ছবি আমার চেয়ে অনেক বেশী দেখেছেন। টমেটো, মাংশ , মৌচাক, মেঘ, গাছ, পাতা, পাথর ইত্যাদির উপরে আল্লাহ লেখা। রুকু বা সিজদা দিচ্ছে এমন আকারের গাছের ছবিও অনেকে দেখেছেন। বিভিন্ন বস্তুতে "মুহাম্মাদ" নামটি লেখা আছে এমন ছবিও পাওয়া গেছে। অনেকে আবার স্বচক্ষে এমন ঘটনা দেখেছেন। হ্যা, এমন ঘটনা ঘটে। কিন্তু ইন্টারনেটে যেসব ছবি দেখা যায় এর বেশির ভাগই ভুয়া। এগুলো তৈরি করা হয় মুসলুমানদের ঈমান দুর্বল করে দেবার জন্য। মজার ব্যাপার এই ধরনের ছবি অন্য ধর্ম নিয়েও দেখা গেছে।

বিষয়টা খুব সোজা। আপনি যখন কোন ছবিতে দেখলেন যে মৌচাকে আল্লাহর নাম রয়েছে, তখন নিজের অজান্তেই ইসলামের প্রতি আপনার বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। এই ধরনের আশ্চর্য বিষয় দেখে ইসলামকে সত্য ধর্ম মনে করেন। এই ঘটনাকে আল্লাহর কুদরত মনে করেন। অনেকে আবার ছবিটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে গর্বভরে ইসলামের কথা বলেন। শুধু আপনি নন, এমনটি লাখো লোক করে। এর কয়েক মাস বা বছর পরে যদি কোন একদিন সংবাদ শোনা যায় যে ঐ ছবিটি আসলে ভুয়া ছবি ছিল তখন আবার নিজের অজান্তেই বিশ্বাস কমে যায়। মনের কোনে প্রশ্ন উকি দেয় - আচ্ছা, আমি ইসলামের অন্যান্য বিষয়কে সত্য বলে জানি, সেগুলো ভুয়া নয় তো? পুরো ধর্মটি ভুয়া নয় তো? আমি জানি সবাই এমন করেন না, কিন্তু এভাবে চিন্তা করেন এমন লোকের সংখা কম নয়। এটা আসলে মানুষের সহজাত স্বভাব। প্রথমে বিশ্বাসের জোয়ার আসে এরপরে ভাটাতে সব বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এই কায়দায় আমাদের ঈমান (বিশ্বাস) নস্ট করার জন্যই ওই ভুয়া ছবি বানানো হয়। এগুলোর বেশিরভাগ ইহুদীরা বানায়। আর এই সব ছবি প্রচার করার জন্য ইসলাম বিরোধী তো সব দেশেই রয়েছে।

এই ফাদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রথমে আমাদেরকে যেটা করতে হবে সেটা হল আশ্চর্য হওয়া কমিয়ে দিতে হবে। এসব ছবি দেখে একেবারেই অবাক হওয়া যাবে না। একটি উদাহরন দিলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে।

আপনার হাতের মোবাইলটি ভালো করে দেখুন। লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন যে অনেক চিন্তা ভাবনা করেই ডিজাইনটি করা হয়েছে। এটি ব্যাবহার করে সারা বিশ্বের যে কোন আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে কথা বলতে পারেন। ছবি বা ভিডিও তুলে কারো কাছে পাঠাতে পারেন। রেডিও রয়েছে। রয়েছে গান বাজনা ও ভিডিও দেখার ব্যাবস্থা। রয়েছে ইন্টারনেট, ফেসবুক। অনেকে আবার আমার এই লেখা মোবাইলেই পড়ছেন। ১৯৭০ সালে এই একই কাজ করতে হলে আপনাকে এক ডজন যন্ত্রপাতি কিনতে হত এবং সেগুলো এত বড় ছিল যে আপনার পুরো বাড়ীতেই সবগুলো যন্ত্র রাখার যায়গা হোত না। আর খরচ হতো কয়েক লক্ষ টাকা। বর্তমান যুগে কয়েক হাজার টাকাতেই পকেটে রাখা যায় এমন একটি যন্ত্র (মোবাইল) কিনতে পারছেন। এবার দেখুন মোবাইল ফোনটির কোন এক স্থানে কোম্পানীর নাম (যেমনঃ নোকিয়া, স্যামসং ইত্যাদি) লেখা আছে। এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন কোনটি আপনার কাছে আশ্চর্য লাগছে ? মোবাইল ফোনটি নাকি ওর উপরে লেখা কোম্পানীর নামটি?

নামটি লেখা আছে সেটা মোটেও আশ্চর্যের বিষয় নয়। বরং নামটি লেখা আছে এটাই স্বাভাবিক। এই মহাবিশ্বের স্রস্টা আল্লাহ, সবই তার তৈরি করা। সব কিছুর উপরেই তার নাম লেখাটা স্বাভাবিক ছিল। সেখানে দু একটা জিনিসে তার নাম লেখাটা কি এমন আশ্চর্যের বিষয়? অন্য কোন নাম লেখা থাকলেই বা কি এসে যায়। নামতো সব আল্লহই লিখছেন। আসলে আমাদের স্বভাব হল - যেগুলো দেখে অভ্যাস নেই সেগুলো দেখলে অবাক হয়ে যাই।
যেই মৌচাকে আল্লাহর নাম লেখা আছে সেই মৌচাক দেখুন। মৌমাছির মতন ক্ষুদ্র প্রানি অঙ্ক ও প্রকৌশলী বিদ্যা না জেনেই প্রতিটি সমান সাইজের কুটুরী তৈরি করেছে। ওদের কোন যন্ত্র লাগে না। ইঞ্চি সেন্টিমিটার এগুলো বোঝে না। এই মৌচাকে আবার তাদের বাচ্চা রাখে। মধু সংগ্রহ করে এই ঘরে জমিয়ে রাখে। মৌমছিদের এক দল থাকে তারা কোথায় ফুলের বাগান আছে তা খুজে বের করে। এর পরে মৌচাকে ফিরে এসে এর বিশেষ নাচ এর মাধ্যমে (হ্যা, নাচ - ড্যান্স) অন্য মৌমাছিকে ফূলের দিক নির্দেশনা দেয়। এর পরে মধু সংরহকারী দলটি সেখানে মধু আনতে যায়। মধু একমাত্র খাদ্য যা পচে না। পিরামিডে চার হাজার বছর আগের মধু পাওয়া গেছে যা খাওয়ার উপোযোগী ছিল। এগুলো সবই আল্লাহর কুদরত। এত কিছু বাদ দিয়ে শুধু "আল্লাহ" লেখা রয়েছে এটা কুদরত হয়ে গেল? আল্লাহর সৃস্টি দেখলেই তার কুদরত দেখা যায়। কোথায় কি লেখা আছে তা মোটেও গুরুত্বপর্ন নয়।

 যেমন ইসলামের সমর্থনে ছবি দেখা যায় তেমন অন্য ধর্মের সমর্থনেও এমন ছবি দেখা যায়। ভুয়া ছবিগুলো মানুষের বানানো একটা ফাদ। আর সত্য ছবিগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষা। এগুলো দেখে আমরা কি করি সেটাই আল্লাহর পরীক্ষা। আমরা এই ধরনের বিষয় দেখে মোটেও অবাক হব না। মনে করব, আল্লাহর দুনিয়াতে কোন বন্তুর গায়ে আল্লাহ যা খুশি তাই লিখতে পারেন। আল্লাহর তৈরি বস্তু যে কোন আকারের হতে পারে সেটা আলাহর ইচ্ছা। আল্লাহর কুদরত অস্বাভাবিক বিষয়ের ভেতরে নয়। আল্লাহর কুদরত রয়েছে আমাদের আশেপাশে সব কিছুতেই। এমনকি আমরা নিজেরাও তার কুদরতে তৈরি ও তার কুদরতেই বেচে আছি।

Comments

Post a Comment