ধর্ম বিদ্বেষীদের শুধুমাত্র ইসলামের পেছনে লাগার কারন


বাংলাদেশকে অনেক সময় মুসলিম দেশ বলে ভুল করা হয়। বাংলাদেশ মুসলিম দেশ নয়। এটি একটি গনতান্ত্রিক দেশ। এখানে বেশীর ভাগ জনসংখা মুসলিম। কিন্তু দেশটি মুসলিম নয়। মুসলিম দেশের সংবিধান ইসলামিক হয়, বাংলাদেশে তা নয়। দেশে ইসলামের পাশাপাশি হিন্দু, খ্রস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী রয়েছে। এত ধর্ম থাকতে ইসলামের পেছনেই সবাই লাগে কেন? শুধু দেশেই নয়, সারা বিশ্বে ইসলামের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী প্রচারনা হয়।
যেমন, ধর্ম বিদ্বেষীরা সমালোচনা করে, প্রশ্ন করে, কেন ইসলামের নবী (সাঃ) ১১ টি বিয়ে করেছিলেন। কেন তিনি তার পালক পুত্রের প্রাত্তন স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন, ইত্যাদি। সেই সব ধর্ম বিদ্বেষীরা কিন্তু ভুলেও জিজ্ঞেস করেনা, কেন হিন্দু ধর্মের কৃষ্ণ এর ষোল হাজার স্ত্রী ছিল, কেন এর পরেও কৃষ্ণ তার মামী রাধার সঙ্গে রঙ্গ লীলা করেছিলেন। রাধা-কৃষ্ণ যে ভাগনে আর মামীর প্রেম কাহিনী তা অনেকেই যানে না। (হিন্দু ভাইয়েরা আমাকে ক্ষমা করবেন - ধর্ম বিদ্বেষীদের চোখে আঙ্গুল দেওয়ার জন্য আপনার ধর্মের নামে অপ্রিয় কথাগুলো আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলতে হল)। ধর্ম বিদ্বেষী তো সব ধর্মের বিরুদ্ধে বলবে। কেন তারা শুধু ইসলামের পেছনে লেগেছে? অবশ্যই এর যুক্তিযুক্ত কারন রয়েছে।

কোন ধর্মের অনুসারী দাবী করে এমন মানুষকে দেখে ধর্মকে চিনতে গেলে আপনি সেই ধর্মকে ভুল চিনবেন। ধর্ম চেনার একমাত্র উপায় হল সেই ধর্মের ধর্মগ্রন্থ। ধর্মগ্রন্থে যা লেখা আছে সেটাই ওই ধর্মের আসল রূপ। অনুসারীরা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল বুঝে ভুল অনুসরন করে। ইসলাম ব্যাতিত, সব ধর্ম ব্যাক্তিগত বিশ্বাস মাত্র। আপনি বিশ্বাস করলে করবেন, না করলে, পালন না করলে সেই ধর্মে কোন বাধ্য বাধকতা নেই। হিন্দু বা খ্রস্টান ধর্মগ্রন্থ খুজ়ে দেখুন, কোথাও লেখা নেই যে, মন্দিরে গিয়ে পুজা করা বা গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করা বাধ্যতামুলক। পুজা না করলে কোন শাস্তির ব্যাবস্থা নেই। কোলকাতাতে দুর্গাপুজা হচ্ছে সবচেয়ে বড় পুজা, আবার মাদ্রাজে হনুমান পুজা হচ্ছে সবচেয়ে বড় পুজা। খ্রস্টান ধর্মে রয়েছে যীশু ইশ্বরের পুত্র। যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার মাধ্যমে নিজে সবার পাপের শাস্তি পেয়েছেন। অতএব, পরকালে খ্রস্টানেরা শাস্তি পাবে না। সবাই ক্ষমা পাবে।

মোট কথা ধর্ম সমুহ ঐচ্ছিক একটি বিষয়। আপনি এটিকে বিশ্বাস করলে করবেন, পালন করলে করবেন এবং বিষয়টি আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয়। ধর্মগ্রন্থে লেখা নেই , কিভাবে আপনি আয় করলে সেটি আপনার জন্য বৈধ, কোন খাবার খাওয়া আপনার জন্য অবৈধ, কাকে বিয়ে করা যাবে না, আপনার সম্পত্তি কিভাবে উত্তরাধীকারীদের মধ্যে ভাগ করবেন, ইত্যাদি। জীবন কিভাবে পরিচালনা করবেন তার কোন নীতিমালা ধর্মগ্রন্থে নেই। ধর্ম সমুহ কিছুটা কোন একটা দল সমর্থন করার মতন। ফুটবল খেলায় কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা, কেউ জার্মানী কেউ ইটালী সমর্থন করে। তাদের এই সমর্থন কিন্তু খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের জীবনযাত্রায় এই সমর্থনের ভুমিকা সামান্য। ধর্ম সমুহর অনুসারীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তেমনি। তাদের এই অনুসরন, উপাসনালয় ও ব্যাক্তিগত বিশ্বাস ও সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। জীবন যাত্রার ব্যাপারে কোন নীতিমালা ধর্মে নেই তাই জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্র ধর্মের দরকারও নেই।

এদিক থেকে বিচার করলে ইসলাম কোন ধর্ম নয়। এটি একটি জীবন ব্যাবস্থা, মতবাদ, নীতিমালা, আইন, সমাজ ব্যাবস্থা। নিজেকে ইসলাম ধর্মের অনুসারী দাবী করার নুন্যতম যোগ্যতা হল একমাত্র আল্লাহকে উপাস্য মনে করা ও নিয়মিত নামাজ পড়া। এটি বাধ্যতামুলক। পুজা না করে বা গির্জায় উপাসনা না করে সারা জীবন হিন্দু বা খ্রস্টান থাকা যায়। কিন্তু নামাজ না পড়লে মুসলমান এর খাতায় নাম থাকে না। যারা এ কথাটি মানেন না, তারা আমার কথায় কান না দিয়ে কোরআন ও হাদিস পড়ুন। দেখুন নামাজ না পড়ে মুসলমান থাকা যায় কি না। ইসলাম ধর্ম যদি নামাজ রোজা ইত্যাদি বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকত তবে ধর্মবিদ্বেষীরা এভাবে ইসলামের পেছনে লাগত না।

ইসলাম যেহেতু একটি নীতিমালা, সেহেতু জীবন চলার পথে ইসলামের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালা গুলো, সমাজে প্রচলিত নীতিমালার বিরুদ্ধে যায়। আর এ কারনেই ইসলামকে হতে হয় সবচেয়ে বেশী সমালোচিত। যেমন, সারা বিশ্বের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে সুদ ব্যাবস্থার উপরে, সেই সুদ ইসলামে হারাম। সারা বিশ্বে নারীদের খোলামেলা পোষাককে আধুনিকতা মানা হয়, সেই নারীকে সম্পুর্ন ঢেকে রাখা ইসলামে বাধ্যতামুলক। সারা বিশ্বে শুকরের মাংশ সবার প্রিয়, সেই মাংশ ইসলামে হারাম। ইসলামে সম্পত্তি ভাগের রয়েছে নিজস্ব নিয়ম। ইসলামে রয়েছে জাকাত ব্যাবস্থা যা সুদ ব্যাবস্থার বীপরিত। অন্যান্য ধর্ম মানুষের জীবনযাত্রা বা সমাজ ব্যাবস্থা বা অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে মাথা ঘামায় না। কিন্তু ইসলাম মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে নীতিমালা দিয়েছে যা সমাজে প্রচলিত নীতির সঙ্গে সাঙ্ঘর্সিক। এর জন্যই ধর্ম বিদ্বেষীদের সবচেয়ে বেশী বিদ্বেষ ইসলামের উপরে। এটা নতুন কিছু নয়। ইসলামের শুরু থেকে এমন হয়ে আসছে - কেয়ামত পর্যন্ত এমনই হবে।

কোন কোন মুসলমান ভাই হয়ত মনে করতে পারেন, ইসলামকে অন্য ধর্মের মতন উপাসনালয়ে বা ব্যাক্তিগত বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে ক্ষতি কি? এতে ইসলাম সবার কাছে আরো গ্রহনযোগ্যতা পাবে। ইসলামের বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্বেষও কমে যাবে। এটি একটি শান্তিপুর্ন প্রস্তাব। এতে কোন ক্ষতি নেই। এতে সব কুলই রক্ষা হয়, কিন্তু আপনি ইসলাম থাকেন না। ইসলামের নীতিমালা পালন না করলে আপনি পাপ করছেন। কিন্তু যদি এর কোন একটি বাধ্যতামুলক নীতিকে (ফরজ) আপনি অস্বীকার করেন তবে আপনি অমুসলিম (কাফের) হয়ে যাবেন। এটাও আমার কথা নয়, এটা ইসলামের কথা।

ইসলামে "ফরজ" কথাটির সংগা হল - "যে কাজটি পালন করা বাধ্যতামুলক, যেটি না করলে বড় গুনাহ হয় এবং অস্বীকার করলে কাফের হতে হয়" যেমন নামাজ, রোজা, জাকাত, নারীর পর্দা।

আপনি যদি সুদ ব্যাবস্থাকে হালাল মনে করেন, আপনি ইসলামে থাকেন না। আপনি যদি পর্দা ব্যাবস্থাকে মধ্যযুগীয় মনে করে অস্বীকার করেন তবে আপনি ইসলামে থাকেন না। আপনি যদি যাকাতকে ঐচ্ছিক দান মনে করেন তাহলে আপনি ইসলামে থাকেন না। ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলে আপনাকে ইসলামের প্রতিটি নিয়ম মেনে নিতে হবে সেটা আপনার পছন্দ হোক বা না হোক। পছন্দ না হলে ইসলাম বাদ দিয়ে পছন্দসই অন্য ধর্ম ধরতে হবে বা নাস্তিক হয়ে যেতে হবে। আপনি নিজেকে ইসলামের অনুসারী দাবী করবেন আর এর আংশিক মানবেন এটা একেবারে হাস্যকর।

ইসলামকে যদি আপনি আংশিক মানেন বা এর সংশোধন এর চেস্টা বা দাবী করেন তবে আপনি যুক্তিগত ভাবেই ইসলামের মতন দেখতে অন্য কোন নতুন ধর্মের প্রবর্তক বা অনুসারী। সেটা ইসলাম নয়। মুসলিম হতে হলে কোরআন ও হাদিসে লেখা নীতিমালা (পছন্দ হোক বা না হোক) মানতে হবে ও পালন করতে হবে। আধুনিক হওয়ার জন্য বা গুটিকয়েক বিদ্বেষিদের খুশি করার জন্য ধর্ম পরিবর্তন করতে বা ত্যাগ করতে কেউ রাজী হবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।

Comments

  1. আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন সেই কামনা। এই রকম একটি প্রশন্ আমার মনের মাঝেও ঘুরপাক খাচ্ছিল । এই রকম সমাধানেই আশা করছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ।

    ReplyDelete

Post a Comment