ইসলামকে ফ্যাশান বানানো খুবই জরুরি

দেশের তরুন প্রজন্মের কাছে নাস্তিকতা একটা ফ্যাশান হয়ে দাড়িয়েছে। অবস্থাটা এমন হয়েছে যে, কেউ ধর্ম বিশ্বাস করলে সে অবুঝ, বোকা ও পিছিয়ে থাকা দলে আছে। কিন্তু ধর্মকে অবিশাস করলে এবং খানিকটা বিজ্ঞান কপচাতে পারলেই একজন বিরাট জ্ঞানী হয়ে যায়। খুবই অল্প সংখক লোক আছে যারা ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামের নামে কটুক্তি করে। সারা দেশে এদের সংখা একশো জনও হবে না। কিন্তু ধর্ম অবিশ্বাস করে আধুনিক হয়েছে বা হওয়ার পথে আছে এমন তরুন বা যুবক আছে কয়েক লক্ষ। আর বিশ্বাস করেও ধর্ম থেকে দূরে এমন লোকের সংখা কয়েক কোটি। আমরা সবাই এর জন্য দায়ী। দায়ী আমাদের সমাজ, দায়ী আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা , দায়ী আমাদের ক্ষমতাবান নেতারা।


আমরা যতই অস্বীকার করি না কেন, "ধার্মিক হয়ে আধুনিক হওয়া যায় না" এই ধারনাটি আমাদের মুসলমানের মনে একেবারে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে। ধর্ম বিশ্বাসীরা নিজেরাই যদি এমন ধারনা পোষন করে তাহলে ধর্ম বিদ্বেষীদের তো খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। পরিবারের মেধাবী ছেলেটিকে ইংরেজী স্কুলে ভর্তি করে দুর্বল মেধার ছেলেটিকে আমরা মাদ্রাসায় ভর্তি করি। মাদ্রাসার শিক্ষা জিনিসটাকে আমরা মুল্যহীন মনে করি। তাই ইংরেজী স্কুলে লাখ টাকা বেতন দিতে পারি। ওদিকে কিন্তু স্বল্পমূল্যের মাদ্রাসা খুজি। স্বল্পমূল্যের কোন ইংরেজী স্কুলে কেউ তার ছেলে মেয়েকে ভর্তি করবে না। কারন তারা জানে, স্বল্পমুল্য হলে তার তার মান কেমন হয়। এই বুঝটা আমাদের মাদ্রাসার বেলায় থাকে না। আমরা বিনামুল্য বা স্বল্পমুল্যের মাদ্রাসার শিক্ষার মানকে তুলনা করি উচ্চমুল্যের ইংরেজী স্কুলের সাথে। ওদিকে আবার মাদ্রাসার ছাত্ররা বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। এতক্ষন তো শুধু ইসলামী শিক্ষার অবহেলার কথা বললাম। শুধু শিক্ষা নয়, ইসলাম ধর্মটাকে আমরা বিশ্বাসীরাই অবহেলা করতে করতে অবহেলিত বানিয়ে ছেড়েছি।

ইসলাম ধর্মের মুল কথা হল আল্লাহর একত্ববাদ। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। কোরআন আমাদের জীবন পরিচালনা করার মুল বই। ব্যাবহারিক বই হাদিস। একজন মুসলমান কিভাবে চলবে সেটা নিজে করে দেখিয়েছেন মহানবী (সা)। ইসলাম অন্য যে কোন ধর্ম থেকে আলাদা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই ইসলামিক হতে হবে। তাহলেই তো আমরা মুসলমান। আমাদের শিক্ষা, ফ্যাশান, শিল্প, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, খাদ্য, বন্ধু, চালচলন, কথাবার্তা, স্বভাব, অভ্যাস ইত্যাদি সবকিছু ইসলামিক হতে হবে। আমরা নিজেকে মুসলিম দাবী করি কিন্তু ফ্যাশানের সময় ভারতীয় নায়ক-নায়িকা অনুসরন করি। নিজেকে মুসলিম দাবী করি কিন্তু অর্থনিতীর ক্ষেত্রে ইহুদী পদ্ধতি অনুসরন করি। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পশ্চিম বঙ্গের অনুসরন করি। খাবারের ক্ষেত্রে আমি আমেরিকার বার্গার ও ইটালীর পিজা অনুসরন করি। চালচলন কথা বার্তার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য ধাচ অনুসরন করি। এভাবেই আমরা আধুনিক হওয়ার প্রতিযোগীতায় নেমেছি। ইসলামকে তো আমার কাছে পিছিয়ে পড়া মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।

আসলে, আমরা তরুন প্রজন্মকে ইসলাম চেনাতে ব্যার্থ হয়েছি। আমরা তাদেরকে ইসলাম বলে যেটা চিনিয়েছি তা হল একটা পুরাতন অবহেলিত নীতিমালা যা পালন করাটা ঐচ্ছিক ব্যাপার। আসলে ইসলাম এমন নয়। ইসলাম হল প্রথমে নিজেকে সমর্পন করা। এর পরে আগা গোড়া পুরো মুসলমান হয়ে যাওয়া। ইসলামের গোণ্ডির ভেতরে থেকেই সবকিছু করা যায়। ফ্যাশান, শিল্প, সংস্কৃতি, গান, ছবি আঁকা, আড্ডা দেওয়া, খেলাধুলা, সিনেমা দেখা, আনন্দ ভ্রমন করা ইত্যাদি সবই ইসলামিক উপায়ে করা যায়। এসবে চর্চা আমাদের মাঝে নেই। আমরা মনে করি ইসলামিক হলেই সে বন্দী টাইপের এক অবহেলীত জীবন জাপন করবে। তার এটা ওটা সব করতে মানা। আসলে ইসলামে স্বাভাবিক কোন কাজ করতে নিষেধ নেই। কাজটাকে শুধু ইসলামিক পদ্ধতিতে করতে বলা আছে। এই জিনিসটাই আমরা নতুন প্রজন্মকে দিতে ব্যার্থ হয়েছি। এটা দেবার সামর্থ আমাদের আছে, নেই শুধু ইচ্ছাটা।

মানুষ আনন্দের সাথে বিশেষ উতসবে মাটির পাত্রে পান্তাভাত খায়, গামছার মতন দেখতে গ্রামীন চেক এর কাপড় পড়ে।কারন জিনিসটা ফ্যাশান হয়ে গেছে। সাবাই জানে কোন লাভ হয় না, তারপরেও মানুষ খুশিমনে মোমবাতি জালিয়ে প্রতিবাদ করে। কারন ওটা ফ্যাশান হয়ে গেছে। এভাবে ইসলামকে ফ্যাশান বানাতে পারলেই তো নতুন প্রজন্ম ইসলামের দিকে ঝুকবে। অনেকে আবার বলতে পারেন, মানুষ ইসলামের ফ্যাশান দেখে ইসলামে ঝুকবে নাকি আদর্শ দেখে ঝুকবে? হ্যা, কথা সত্য। ইসলাম মানুষকে আদর্শ দিয়েই আকৃস্ট করে। কিন্তু সেই আদর্শবান মুসলমান আমরা হতে পারিনি। আমরা একেকজন আদর্শবান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ইত্যাদি হই বা হতে চাই। আদর্শবান মুসলমান কেউ হতে চাই না। কাজেই নতুন প্রজন্মকে ইসলামের দিকে আকৃস্ট করার মতন আদর্শবান আমরা নই।

এখন দেখি , ইসলামের ফ্যাশান (চালচলন) কেমন হতে পারে। স্কুলে টিফিন এর সময় ১০ মিনিট বাড়িয়ে দিয়ে সকল ছাত্র শিক্ষককে নিয়ে যোহরের নামাজ পড়াটা প্রত্যেক স্কুলের ফ্যাশান হতে পারে। ড্রাইভার, দারোয়ান সহ, সকল কর্মচারীকে নিয়ে নামাজ পড়াটা অফিসের বড় সাহেবের ফ্যাশান হতে পারে। বিরতিতে মাঠের কোনায় পুরো দলটি একসাথে নামাজ পড়া ক্রিকেট খেলোয়াড়ের ফ্যাশান হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষামুলক সিনেমা দেখার আয়োজন করা যেতে পারে। দেশের গুণী সিনেমা নির্মাতারা ইসলামিক ধাচের সিনেমা বানাতে পারেন। ইসলামিক পোষাক দিয়ে ফ্যাশান শো এর আয়োজন করা যেতে পারে। বাচ্চাদের জন্য বানানো যেতে পারে ইসলামিক কাটুন। টিভিতে যেভাবে গানের শিল্পীর প্রতিযোগীতা হয়, যেভাবে তারা রাতারাতি তারকা বনে যায়। ঠিক একই ভাবে সেরা কোরআন তেলোয়াতকারী বা অন্য কোন ইসলামিক প্রতিভাকে তারকা বানানোটা ফ্যাশান হতে পারে। শুরু হতে পারে ইসলামিক টক শো। হতে পারে দেশব্যাপী ইসলামিক প্রতিযোগীতা।

এমনভাবে ইসলামকে ফ্যাশান বানানোর মতন প্রতিভাবান লোক আমাদের দেশে অনেক আছে। কিন্তু কেউই এই চেস্টা তো দুরের কথা চিন্তাও করেনা। দেশের নামকরা নায়ক, গায়ক, খেলোয়াড়, এদেরকে যদি ইসলামিক পোষাক পড়িয়ে একটা ফ্যাশান শো করা যায়, দু একটা বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মান করা যায় এবং সেটা ঘুরে ফিরে টিভিতে দেখানো যায় - আমি শতভাগ নিশ্চিত, বাংলাদেশের তরুন প্রজন্ম ওই ইসলামিক ফ্যাশান শুরু করবে। আমাদের ফ্যাশানের মধ্যে আমরা ইসলামকে ঢুকাতে পারিনি। আমাদের জুতা ৫টা থাকলেও, টুপি থাকে মাত্র একটা। আমাদের কাছে শপিং মলে ১০০০ টাকা খুব ছোট মনে হয় কিন্তু মসজিদে ১০০ টাকা বড় মনে হয়। নোংরা রাজনীতি নিয়ে টক শো বানাতে পারলেও ইসলাম নিয়ে টক শো আমরা বানাতে পারি না।

মানুষ আধুনিক হচ্ছে। আরো আধুনিক হবে। এর থেকে পেছনে ফেরার কোন উপায় নেই। ইসলামকে আধুনিক করা যায় না। কিন্তু আধুনিকতাকে তো ইসলামিক করা যায়। নতুন প্রজন্মের অবস্থা দেখে এটা বোঝা যায় - আমরা যদি প্রতিটি আধুনিক জিনিসের ইসলামী সংস্করন তাদের সামনে তুলে ধরতে না পারি তাহলে ওরা ইসলাম থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাবে।  

Comments