জঙ্গী রিমান্ড


বেআইনী কাজ, আইনের অপব্যাবহার অথবা আইনের মাধ্যমে অত্যাচার আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত হল রিমান্ড। কোর্টে বিচার কাজের আগে আসামীকে পুলিশের হেফাজতে আটক রাখাকে, রিমান্ড বলে। এর সাথে অত্যাচার বা নির্যাতনের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমরা এখন রিমান্ড বলতে বুঝি, পলিশের নির্যাতন করার অনুমতি। রিমান্ডে পুলিশ কাউকে না মারলে আমরা অবাক হই। এছাড়াও এতে বিশাল বানিজ্যও আছে। অনেকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে পলিশের নির্দয় নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়। আমি আইনের লোক নই। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, "পুলিশ আসামীকে নির্যাতন করতে পারবে", এমন কোন কথা, বাংলাদেশের কোন আইনে লেখা নেই। এই নির্যাতনটা আসলে আইনের অপব্যাহার ছাড়া আর কিছুই নয়।

আইনের এই অপব্যাবহার একেবারে সীমা অতিক্রম করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ও কতিপয় অমানুষ পুলিশ সদস্যের কারনে। কোন কারন ছাড়াই একটি নিরাপরাধ ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে তার পরিবারে কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছে, এমন উদাহরন আছে। এমনকি নিরাপরাধ অনেকেই পলিশের গুলিতে পঙ্গু হয়েছে, জীবনও দিয়েছে। আর যখন রাজনৈতিক কারনে কাউকে গ্রেফতার করা হয় তখন তো এসব পারদর্শি অফিসারের উপরের কর্তারাই নির্যাতনের অর্ডার দিয়ে দেয়। এমনিতেই নাচুনে বুড়ি, এর উপরে আবার ঢোলের বাড়ি। নির্যাতন করে একেবারে আধমরা বানিয়ে ছাড়ে। 

এমনই একটি করুন ঘটনা শুনেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। একটি ছেলে রাজনৈতিক দন্দ্বের শিকার। পুলিশ তাকে ধরেছ, উদ্দেশ্য হল তার নামে অস্ত্র (বন্দুক) মামলা দেওয়া। ছেলেটি যে ফেরেশতা, তা নয়। তবে সত্যই তার কাছে অস্ত্র নেই। এখন অস্ত্র ছাড়া অস্ত্র মামলা দিলে কিভাবে হবে? এজন্য, রিমান্ডে নিয়ে, ছেলেটির উপরে শুরু হল অমানবিক নির্যাতন। দু-এক দিন পরে, সেই ছেলেটির বাবা-মা জেলখানায় গিয়েছে ছেলের সাথে দেখা করতে। ছেলেটি তার বাবা-মা কে বলছে - যেভাবেই হোক, টাকা-পয়সা খরচ করে আমাকে একটি অস্ত্র কিনে দাও, নইলে এরা আমাকে মেরে ফেলবে। তার মানে - প্রয়োজনে টাকা খরচ করে অস্ত্র কিনে, ইচ্ছে করে দায়ভার স্বীকার করে, দশ বছর জেল খেটে হলেও, এই নির্যাতন থেকে সে বাচতে চায়।  রিমান্ডের নির্যাতন কতটা অমানবিক হলে এমন অবস্থা হতে পারে !! আমরা বর্তমানে, খুব দ্রুত ওই ছেলেটির মতন অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই রিমান্ডের নাম হল - জঙ্গি রিমান্ড। ওই ছেলেটিকে যেমন "অস্ত্র আছে" এই কথাটা প্রমান করতে নির্যাতন করেছে। ঠিক তেমনি, "জঙ্গী আছে" এই কথাটা প্রমান করতেও, আমাদের পুরো জাতিকে নির্যাতন করা হচ্ছে। 

এর শুরুটা হয়েছে মন্দির ভাঙ্গা দিয়ে। মন্দির ভাঙ্গা হয়, প্রতিমা ভাঙ্গা হয়। বলা হয় এগুলো ইসলামিক জঙ্গীর কাজ। ওদিকে ধরা পড়ে দলীয় কর্মী। পত্রিকায় বড় করে ছবিও আসে। মন্দির ভাঙ্গার সময় বিভিন্ন স্থান থেকে, বিভিন সময়ে, একাধিকবার চেতনাধারী কর্মীরা ধরা পরলেও, কোনদিন কোন দাড়ি টুপিওয়ালা লোক ধরা পড়েনি। তখন জনগন বলে - এদেশে জঙ্গী নেই। 

এর পরে বিহারী সম্প্রদায়ের উপরে হামলা হয়। জঙ্গী আছে এমন আওয়াজ ওঠে, কিন্তু প্রমান পাওয়া যায় না। জনগন বলে - এদেশে জঙ্গী নেই। এর পরে পাচ জন ইসলাম বিরোধী ব্লগার ও একজন প্রকাশক হত্যা করা হয়। এই হত্যাগুলোর স্টাইলও ছিল এক ধরনের। দলীয় মিডিয়া এই ঘটনাগুলোকে জঙ্গীর কাজ বলে প্রমান করার অনেক চেস্টা করে। ভুয়া টুইটার পেজ থেকে হত্যার দায়ভার স্বীকার করা হয়, জঙ্গি সগঠন থেকে হত্যার দায় স্বীকার করে ইমেইল আসে। এফ বি আই এর মতন সংস্থা এসেও তদন্ত করে জঙ্গী খুজে পায় না। এমনকি নিহতের পরিবার কেউই জঙ্গী গল্পে বিশ্বাস করেনা। এসব দেখে জনগন আবার বলে - এদেশে জঙ্গী নেই। এর পরে শুরু হয় বিদেশী নাগরিক হত্যা। তাও আবার কোন টুরিস্ট নয়, এনজিও বা সেবামুলক কাজের সাথে জড়িত বিদেশী। এতে প্রচারে সুবিধা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। জনগন বলে - এদেশে জঙ্গী নেই। এর পরে খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতার উপরে হামলা হয়। এর পরেও জনগন বলে -এদেশে জঙ্গী নেই। সবশেষে, সম্প্রতি দেখা গেল, মসজিদে গুলি। মজার ব্যাপার, গ্রামের ওই মসজিদের গুলির খবর সারা দেশে ঠিকভাবে ছড়ানোর আগেই বিবিসিতে ছবি সহ নিউজ দেখা গেছে। বোঝাই যাচ্ছে, এই প্রচারটাও পুর্ব পরিকল্পিত ছিল। এসব দেখে জনগন বলছে - এদেশে জঙ্গী নেই।  

প্রসঙ্গত বলে রাখি, মসজিদে গুলি বোমা ইত্যাদি সাধারনত পাকিস্থানে হয়। বাংলাদেশে কোনদিনই এমন হয়নি। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার চেতনাধারী পাকিস্থান বিরোধীরা কিন্তু বাংলাদেশকে ওই পাকিস্থানের মতনই বানিয়ে ফেলছে। সারাদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি আওড়ায়, আর দেশটাকে পাকিস্থান বানায়। জনগনের কাছে আকুল আবেদন, ওরা থামবে না, তাই আপনারা থামুন। "এদেশে জঙ্গী নেই" এই কথাটা আর বলবেন না। দরকার হলে দাড়ি টুপিওয়ালা কিছু লোক জঙ্গী বলে ধরিয়ে দিন। তা না হলে, পাকিস্থানের মতন বোমা হামলা, এদেশের মসজিদে শুরু হয়ে যাবে। এই ভয়ঙ্কর খেলা আরো ভয়ঙ্কর হবে, আরো প্রানহানী হবে। সরকার যে বেডরুমের নিরাপত্তা দিতে পারে না - এ বানী তো অনেক আগেই শুনেছেন। মসজিদের নিরাপত্তা নেই সেটাও আজ জানলেন। আর রাস্তা ঘাটে নিরাপত্তার খবর তো সবারই জানা। তাই, এখন জান বাচাতে চাইলে উচ্চকন্ঠে আওয়াজ তুলুন – আমরা স্বীকার করছি, এদেশ জঙ্গীতে ভরে গেছে। হে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা, দয়া করে এবার আপনারা খ্যান্ত দিন।

Comments

Post a Comment