রমজান – ইসলামের অনুশীলন






বিশ্বের প্রায় সকল প্রধান ধর্মেই এমন না খেয়ে থাকার পদ্ধতি চালু আছে। না খেয়ে থাকতে মানুষের কস্ট হয়। আর এই কস্ট স্বীকার করে সৃস্টিকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্যই এই না খেয়ে থাকার পদ্ধতি। দুনিয়াতে ইসলাম আসার আগেও এই পদ্ধতি চালু ছিল। তবে ইসলামে প্রচলিত রমজানের সাথে অন্যান্য ধর্মের উপোষ এর পার্থক্য আছে বৈকি। প্রথম পার্থক্য হল, একেবারে কিছুই খাওয়া বা পান করা যায় না। অন্যান্য ধর্মে সামান্য কিছু খাবার-পানি গ্রহন করা যায়। দ্বিতীয়ত, এমন একমাস ধরে না খায়ে থাকার পদ্ধতি অন্য ধর্মে নেই। তৃতীয়ত, এটা কোন উপোষ নয়, বরং সংযম। পাপা কাজ এমনকি যৌনকর্ম থেকে বিরত থাকতে হয়। চতুর্থত, নামাজ ছাড়া রোজা হয় না। পঞ্চমত, এমন রোজা সবার জন্য অবশ্যই পালনীয়। বিনা কারনে পালন না করলে ক্ষতিপুরন স্বরুপ এক টানা দুই মাস রোজা রাখতে হয়।

এত কঠিন নিয়ম কানুনের ইসলামিক উপোষের (রোজা) কঠিন উপকারিতাও আছে।  চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃস্টিতে এর উপকারিতা রয়েছে। তাছাড়া মানুষ চেস্টা করলে তার বদাভ্যাস (যেমন সিগারেট) ত্যাগ করতে পারে। এগুলো শরীরের উপকার। সংযমের ফলে মানুষের মধ্যে পাপ কাজ করার হার কমে, এটা সমাজের উপকার। এমন বহুবিধ উপকারিতা আছে রমজানের। তবে আজকে বলছি। একজন মুসলমানের জন্য রমাজান কি উপকার বয়ে আনে।       

তাকওয়াঃ  ইসলামের প্রথম কথা হল, তাওহিদ (আল্লাহর একত্ববাদ)। এর সঙ্গে তাকওয়া (আল্লাহর ভীতি) ওতপ্রতভাবে জড়িত। আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তার সন্তস্টি অর্জনের জন্য সংযম করাটাই একজন মুসলমানের দায়ীত্ব। সেই সংযম করাটা সবচেয়ে সহজ হয় রোজার সময়। আল্লাহ আছেন, আমাকে সবখানেই তিনি দেখতে পান। তার কাছ থেকে লুকানোর কোন উপায় নেই। এমন চিন্তা করেই একজন রোজাদার গোপনে পানাহার করেন না। এটা আল্লাহর প্রতি মুসলমানদের বিশ্বাসের বড় একটি প্রমান। এমন আল্লাহ ভীতি রমজানেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

সংযমঃ আল্লাহ ভীতি কাজ করলে খাবারের সাথে, পাপ থেকেও বিরত থাকতে হয়। মিথ্যা বলা যায় না। প্রায় এক মাস যদি মিথ্যা না বলে থাকা যায়, তাহলে একজন বড় মিথ্যুকও মিথ্যা থেকে বেচে থাকতে পারবে। অনেকে আছে, যে কোন পাপ কাজে অভ্যাস্ত হয়ে গেছে, ছাড়তে পারছে না। এই এক মাসে তার পাপ ছেড়ে দেবার সুযোগ তৈরি হয়। কারন, কেউ যদি কোন কাজ একমাস না করে থাকতে পারে, তাহলে চেস্টা করলে বাকী জীবনটাও পারবে।

বোনাসঃ রমজান মাস একটি বোনাসের মাস। না, বেতনের বোনাস নয়, সাওয়াবের বোনাস। বিভিন্ন কাজে দশগুন, সত্তর গুন, সাতশ গুন, হাজার গুন সাওয়াব হয়। বেশিরভাগ ভালো কাজেই রমজান মাসে আছে বোনাস নেকী। দান করলে অনেকগুন বেশি সাওয়াব। কাউকে ইফতার করালে বোনাস সওয়াব। সবচেয়ে বড় বোনাস হল – কদরের রাত। এই রাত হাজার রাতের চেয়ে উত্তম।

দোয়া কবুলঃ  কয়েকটি বিশেষ সময় বা স্থানে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। এগুলোর মধ্যে একটি হল – রোজা থাকা অবস্থায়। এই সুযোগ সবাই নিতে পারে। অন্যান্য দোয়া কবুল হবার স্থানে বা সময়ে সবাই পৌছাতে পারে না। কিন্তু প্রায় সবাই রোজা পালন করতে পারে।

মানবতাঃ এই বোনাস এর সুযোগ নিতে গিয়েই দান খয়রাত বেড়ে যায় রমজান মাসে। মানুষকে ইফতার করানো বেড়ে যায়। এর এভাবেই অনেকের পরিচয় হয় অভাবী মানুষের সাথে। মানবতা বেড়ে যায়, এবং ক্ষেত্র বিশেষে সেটা মানুষ ধরে রাখে।  

পরকালের লাভঃ রোজাদারে মুখের গন্ধ হবে (সুগন্ধী) কস্তুরীর মতন। রোজাদারের জন্য আছে জান্নাতের বিশেষ দরজা। রমজান মাসে জান্নাতের রদজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে বেধে রাখা  হয় (ক্ষমতা স্থগিত করা হয়)।      

রমজান আমাদের জন্য এক অনুশীলনের মাস। কিসের অনুশীলন? মুসলমান হবার অনুশীলন। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে, তাকে ভয় করে, তার দেওয়া জীবনযাত্রা অনুসরন করার নামই ইসলাম। রমজান মাসে এমন জীবন যাপনের অনুশীলন করার সুযোগ হয়। সহজ কথায়, রমজান আমাদেরকে খাটি মুসলমান হবার ট্রেনিং দেয়। 

Comments