লাইলাতুল কদর - ইবাদতের বোনাস

আমাদের দেশের অন্য অনেক দিবসের মাঝে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই লাইলাতুল কদর।  আরবী এই কথাটির অর্থ হল মহিমান্বিত রাত। এই রাতে কোরআন নাজিল হয়েছিল । এই বিশেষ রাতের মহিমা বর্ননা করতে কদর নামক একটি  সুরা আছে কোরআনে। সেই সুরাতেই বলা আছে, এই রাতটি হাজার রাতের চেয়ে শ্রেস্ট।  এত বড় সুযোগ বলেই এটাকে অন্য কোন দিনের মতন প্রকাশ্ না করে গোপনে রাখা হয়েছে।  


রমজানে মাসের শেষ দশ দিনের বেজর রাতের মধ্যে লুকানো আছে এই লাইলাতুল কদর। অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭ ও ২৯ তম রাতের যে কোন একটি রাতে লুকানো থাকে লাইলাতুল কদর। এই পাচটি রাতের যে কোন একটি রাত হতে পরে। তাছাড়া আরবী তারীখ গননার পদ্ধতিটিও আলাদা। ক্যালেন্ডারের তারিখ শুরু হয় সুর্যাস্তের পরে। প্রথমে রাত আসে, এর পরে দিন। অর্থাৎ ২০ তম রোজার ইফতারীর পরে যে রাতটি আসে সেট আসলে ২১ তম রাত।  যাই হোক, লাইলাতুল কদর পেতে হলে ওই পাচটি রাতেই খুজতে হবে। আমাদের দেশের ভ্রান্ত কায়দায় শুধুমাত্র ২৭ তম রাতে সারা রাত নামাজ পড়ে ক্লান্ত হয়ে যায়। আর বাকী চারটি রাতে কোন খবর থাকে না।  এটা একটা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।  তাছাড়া ইবাদত সম্পর্কে আমাদের ধারনাও কম আছে। 

ইসলামের গোন্ডির ভেতরে থেকে যে কাজ করা হবে সেটাই ইবাদত। কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুসারে জীবন জাপন করাটা ইবাদত। শুধুমাত্র নামজ রোজা ইবাদত নয়। মুমিন মুসলমানের প্রতিটা কাজই ইবাদত হতে পারে। ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য করার জন্য দুটি শর্ত। এক, সকল ইবাদত আল্লাহর সন্তস্টির জন্য হতে হবে। দুই, সেই ইবাদত কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা ব দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী হতে হবে। ২৭ তম রমজানের  রাতে,  সারা  রাত ধরে নামাজ পরার শিক্ষা হাদিসে নেই। কাজেই এত কস্ট করে করা ইবাদত গ্রহনযোগ্যতা পায় না। 

তাহলে আমরা কি করতে পারি? পাচটি রাতেই সারা রাত ইবাদত করব? এটা তো অনেক কস্টসাধ্য। আসলে বছরে একদিন সারা রাত নামাজ পড়া আর অন্যদিন কোন খোজ নেই, এমন ইবাদতের পদ্ধতি ইসলামে নেই। তাছাড়া হাদিসের বর্ননামতে, আল্লাহর কাছে পছন্দের ইবাদত হল সেটা, যেটা অল্প হলেও নিয়মিত করা হয়। লাইলাতুল কদরে হাজার গুন বেশী বোনাস দেওয়া এজন্যি, যাতে অল্প নামাজ পড়ে সারা রাত নামাজ পড়ার নেকী পাওয়া যায়।  সারা রাত ধরে যদি নামাজ পড়তে হবে, তাহলে এই বোনাসের দরকার কি?

তাহলে কি করবেন? ওই পাচটি রাতের প্রতিটি রাতে মাত্র দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। সেই দুই রাকাতই দুই হাজার রাকাতের চেয়ে বেশি হবে। প্রতিদিন মাত্র ১০টাকা দান করুন। সেটাই হবে ১০ হাজার টাকার চেয়ে বেশী। প্রতিবেশীর খবর নিন, আত্মীয়র সাথে সুসম্পর্ক রাখুন, বাবা মায়ের সেবা করুন, যা করবেন তাতেই হাজার গুন বেশী নেকী। পাপ থেকেও বেচে থাকতে হবে। কারন, পাপেরও বোনাস হয়। লাইলাতুল কদর বিষয়ক বিভিন্ন ইসলামিক কথাবার্তা, নিয়ম কানুন, পদ্ধতি, ফতোয়া ইত্যাদি শুনে বিভ্রান্ত না হই। কিছু বইপত্র ও লেখাতে এত জটিল আলোচনা করা আছে যা দেখলেই মানুষ সেতাকে অনেক কঠিন মনে করে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ইসলামে কঠিন, অতিরিক্ত বা বারাবাড়ি কিছু নেই। শুধু এটুকু মনে রাখি, সেই এই পাচটি রাতের যে কোন এক রাত, লাইলাতুল কদর। তাই প্রতিটি রাতে অল্প করে ইবাদত করলে লাইলাতুল বরাত পাওয়া যাবে আর আমাদের ভাগ্যে জুটবে হাজার গুন বেশি সাওয়াব।
            

       

Comments