চাঁদের ফাটা দাগ - লুকানো ছবি বেরিয়ে পড়ল

রাসুল (সা) এর হাতের ইশারায় চাঁদ দিখন্ডিত হয়েছিল। এই ঘটনা তো সবাই জানেন। কাফেরদের দাবী ছিল, তিনি যদি সত্যই আল্লাহর রাসুল হন তাহলে চাঁদ দিখন্ডিত করে দেখান। আল্লাহর কুদরতে তিনি সেট দেখেতে পেরেছিলেন। এই ঘটনা হাজার বছর ধরে মুসলমানদেরকে গর্বিত করেছে। সেই সাথে অবিশ্বাসীদেরকে সন্দেহে ফেলেছে। চাদে একাধিকবার রকেট পাঠানোর পরে চাঁদ থেকে অনেক বালি, মাটি, পাথর ইত্যাদি সংগ্রহ করা গেছে। সংগ্রহ করা গেছে হাজার হাজার ছবি। এর কিছু ছবিতে চাদের ফাটা দাগ দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষনা কেন্দ্র নাসা (NASA) প্রাথমিকভাবে এমন ছবি দেখে চমকে ওঠে। ধারনা করেছে এটা কোন ভীনগ্রবাসীর কাজসাজি হবে। এই কারনে গোপনীয়তা রক্ষা করতেই ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়নি। 


যথারীতি চাঁদের ফাটল এলাকা থেকে আনা পাথর মাটি ইত্যাদি পরীক্ষা নিরিক্ষা করে জানা গেল দেড় হাজার বছর আগে ওখানে কোন বিস্ফোরন বা এমন কিছু হয়েছিল। এর পরে বিজ্ঞানীরা খুজতে লাগল যে দেড় হাজার বছর আগে চাদে কোন বিস্ফোরন হয়েছে এমন কোন তথ্য পুরাতন কোন বইতে লিপিবদ্ধ আছে কিনা। বেশীদুর খুজতে হল না। রাসুল (সা) চাঁদ দিখন্ডিত করেছিলেন সেটা খুব দ্রুত জানা গেল। বিজ্ঞানীদের আর বুঝতে বাকি রইল না। তারা আরো সতর্কতার সাথে সেই ছবি ও তথ্যগুলো গোপন করে ফেলল। 

এর অনেক বছর পরে, এই বছরের প্রথম দিকে, ইন্টারনেটে এমন কয়েকটি ছবি প্রকাশিত হয়। যদিও শক্তিশালী মিডিয়াগুলো এই ব্যাপারে রহস্যজনক নিরবতা পালন করেছে। তারপরেও শেষ রক্ষা হল না। ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে এই ছবিগুলো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। বিশেষজ্ঞেরা পরীক্ষা করে দেখেছে যে ছবিগুলো আসল। এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাসার একজন অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী এই ঘটনা স্বীকারও করেছেন। সত্য চাপা দিয়ে রাখা যায় না। একদিন এভাবেই বেড়িয়ে পড়ে। ইসলাম ধর্ম একমাত্র সত্য ধর্ম, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। 

এবার কাজের কথায় আসি। উপরের এই লেখাটি আমি নিজে লিখলেও এই ছবি ও তার সাথে ইসলামকে সমর্থন করে একই ধরনের বিভিন্ন লেখা ইন্টারনেটে ঘোরাঘুরি করছে। এর কিছুদিন আগে মাছি নিয়েও আরেকটি লেখা ঘুরপাক খাচ্ছিল। কোন একজন বিজ্ঞানী, মাছির ডানার জীবানূ নিয়ে গবেষনা করে দেখেছেন যে মাছির এক ডানাতে ক্ষতিকারন জীবানূ ও অন্য ডানাতে রোগ প্রতিরোধক জীবানূ থাকে। তিনি আরো দেখেছেন যে মাছিকে এক গ্লাস পানিতে চুবালে সেই পানির ক্ষতিকারক জীবানুর কার্যক্ষমতা কমে যায়। এগুলো সবই রাসুল (সা) এর কথার সত্যতা প্রমান করে। মাছির কাহিনির আগে, ইন্টারনেটে ঘুরপাক খাচ্ছিল জমজম কুপের কাহিনী। জাপানের কোন বিজ্ঞানী জমজম কুপ নিয়ে গবেষনা করে আশ্চর্য তথ্য পেয়েছেন। এমনই বিভিন্ন ইসলামিক লেখা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। সেই লেখাগুলো লাইক ও শেয়ারের অভাব হয় না। আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ইত্যাদি তো আছেই। 

যে তিনটি ঘটনা শুনলেন, চাঁদ, মাছি ও জমজম কুপ। এই ঘটনাগুলো শুনলে আমাদের নিজের অজান্তেই ইসলামের প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যায়। কিন্তু কোন একদিন যদি প্রকাশ হয় যে এই ছবি ও লেখাগুলো মিথ্যা ছিল, তখন কি হয়? তখন অবিশ্বাসের ভাটায় আরো অনেক কিছুই টেনে নিয়ে যায়। তখন আমরা সন্দেহ করতে শুরু করি। যখন শুনি জাপানী বিজ্ঞানী বলেছেন জমজমের পানি দুনিয়ার সব পানির থেকে আলাদা, পুস্টিগুন সম্পন্ন। তখন ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে। ওই পানিটি বিশেষ বরকতময় মনে হয়। যখন জানি যে, জাপানের কোন বিগানী এমন বলেননি। তখন মনে মনে ভাবি, ও আচ্ছা, এতাই তাহলে জমজম। এই সাধারন পানি দিয়েই হাজার বছর ধরে মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে। যখন যানি মাছির গবেষনার কথাটা ভুয়া তখন মনে হয় রাসুল (সা) মাছি নিয়ে এমন কথা কখনো বলেননি। আর বললেও ভুল বলেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। নিজের অজান্তেই রাসুল (সা) কে অবিশ্বাস করা শুরু করি। যখন জানি যে চাদের এই ফাটলের ছবি ভুয়া তখন রাসুল (সা) এর মুযেজা অবিশ্বাস করি। এভাবে বিভিন্ন ভাবে আমরা কিন্তু মুলত ইসলামকেই আংশিক হলেও অবিশ্বাস করি। এভাবে আমাদের বিশ্বাস নস্ট করে দেবার জন্যি এমন ইসলামিক (!) ছবি ও লেখা বানানো হয়। আমরা দৌড়ে গিয়ে এই ফাদে পড়ি।

জাপানের বিজ্ঞানী, আমেরিকার বিজ্ঞানী, মহাকাশ গবেষনা কেন্দ্র ইত্যাদির কথা শুনলেই আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ি। না দেখে, না জেনে, না যাচাই করেই সেটা দৃঢ় বিশ্বাস করা শুরু করি। জাপানের বিজ্ঞানী বলেছেন, তাহলে নিশ্চই সত্য। ওদিকে রাসুল (সা) বলেছেন, সেটাকে চোখ বুজে সত্য বলে মানতে পারিনা। এমনই মুসলমান আমরা। এভাবেই বিভিন্ন বিজ্ঞানের কথা বলে মিথ্যা গল্প বানিয়ে ইসলমের কোন একটি বিষয় সমর্থন করা হয়। এই ঘটনা সবাই যখন বিশ্বাস করে তখন একদিন প্রকাশ হয় যে কথাটা মিথ্যা। এর পরে মুসলমানদেরকে দোষারোপ করা হয় - ওরা তো এমনই ফালতু জিনিস বিশ্বাস করে। এগুলো সবই ইসলামের শত্রুদের চক্রান্ত। 

আমরা এই ফাদে পা দেই এজন্য নয় যে আমরা বিজ্ঞান কম জানি। এজন্য নয় যে আমরা সংবাদ কম জানি। আমরা ফাদে পা দেই কারন আমাদের ঈমান দুর্বল। রাসুল (সা) যে কথা বলেছেন সেটা চোখ বুজে মেনে নেওয়াটা ঈমান। জাপানী কোন বিজ্ঞানী কি বলেছেন সেটা শুনে আমাদেরকে রাসুল (সা) এর কথা বিশ্বাস করতে হবে? এমন মুসলমান আমরা? চাদের ফাটা দাগ দেখে বুঝতে হবে যে রাসুল (সা) চাঁদ দিখন্ডিত করেছিলেন। আরে ভাই, চাঁদ দিখন্ডিত ও জোড়া লাগা সবই তো আল্লাহর কুদরতে হয়েছিল। জোড়া লাগার পরে যদি ফাটা দাগই দেখা গেল তাহলে সেটা কেমন কুদরত হল? আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছিল নাকি যে দাগ দেখা যাবে? আল্লাহর কুদরতে জোড়া লাগা। কোন ফাটলই থাকবে না। একেবারে পুর্বের ন্যায় অক্ষত অবস্থায় ফিরে যাবে। 

আমরা ইসলামকে বিশ্বাস করব কোরআন ও হাদিস অনুসারে। ইসলামের যে কোন কথা যদি বিজ্ঞান সমর্থিত করে, বা না করে - এতে আমাদের কিছু যায় আসে না। বিজ্ঞানের উপরে নির্ভর করে ইসলাম বিশ্বাস করাটা আসলে একটা প্রতারনা। একটা ভন্ডামী। একজন নিজেকে মুসলিম দাবী করে, ওদিকে বিজ্ঞানে সমর্থিত হলে ইসলামের কথা বিশ্বাস করে। এমন ভন্ডকে ইংরেজীতে hypocrite বলে যেটার আরবী সমার্থক শব্দ হল - মুনাফেক। ইসলামের তথ্যমতে মুনাফেকের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ঈমান অর্জন করার ক্ষমতা দিন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন। 

Comments