স্বপ্নের সেতুর ফজিলত










অনেক আগে বাস-ট্রেনে বিভিন্ন ধরনের বই পত্র বিক্রি হতো।  এখন এসব তেমন দেখা যায় না। ভাগ্য গননার বই, আংটির পাথরের বিষয়ে বই, ইত্যাদি। এমনই এক জনপ্রিয় বই ছিল - স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা। 
এই ধরনের বইতে একেবারে ডিকশনারীর মতন তালিকা আকারে স্বপ্ন লেখা থাকে । কোন স্বপ্ন দেখলে কি হয়, সেটাও দেওয়া থাকে। গরু স্বপ্নে দেখলে ভালো স্বাস্থ্য,  জাহাজ স্বপ্নে দেখলে বিদেশ ভ্রমন, ডিম স্বপ্নে দেখলে চাকরী প্রাপ্তি, শকুন দেখলে মৃত্যু, ইত্যাদি। কি স্বপ্নে দেখেছে, তার উপর নির্ভর করে ভালো  খারাপ উভয়ই হতে পারে।  কয়েকদিন ধরে খুজছি - ব্রিজ স্বপ্নে দেখলে কি হয়। ব্রিজ স্বপ্নে দেখা ভালো নাকি খারাপ?  এটা জানা খুব জরুরী। কে জানে, আমাদের ভাগ্যে কি আছে। কারন, গত কয়েক বছর ধরে দেশের  কোটি মানুষ ব্রিজ স্বপ্নে দেখছে। এর ফলাফল জানা দরকার।   দুটি দেশে দীর্ঘ সময় থাকার সুযোগ হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সকল জাতির মানুষকে স্বচোক্ষে দেখতে পেরেছি। তবে, কোথাও বাংলাদেশীর মতন মেধাবী পাইনি।  আপনি যে কোন উন্নত দেশ বা জাতি কাছ থেকে দেখুন - বুঝতে পারবেন, তারা আসলে একটু সহজ-সরল টাইপের। ওদিকে, বাঙ্গালী দেখুন, একজন আরেকজনের চেয়ে বেশী চালাক। 

বাঙ্গালী এত মেধাবী যে, উচ্চ-শিক্ষিত দরকার নেই স্কুলের গোন্ডি পেরিয়ে কলেজে গিয়েছে, এমন একজনকে প্রশন করুন - আমাদের স্বপ্নের সেতু কেন দরকার ? এই সেতু দিয়ে কি উপকার হবে ? সেই মেধাবী বাঙ্গালী যায়গায় দাড়িয়ে দশটি কারন বলে দিতে পারবে। তাকে সপ্তাহখানিক সময় দিলে, অন্তত একশতটি উপকারিতা লিখে আনতে পারবে। আর উচ্চ-শিক্ষিত বা বুদ্ধিজীবি হলে তো কথাই নেই - এই সেতুর এত বেশী, প্রয়োজনীয়তা বের করবে যা আপনি সারা জীবনে গুনে শেষ করতে পারবেন না।  এমনিতেই কি এটাকে স্বপ্নের সেতু বলে ?

বিশ্বের অন্য কোন জাতির কোন লোককে এই জিনিসটা বলুন। তাকে বলুন, আমাদের দেশে স্বপ্নের ব্রিজ রয়েছে।  এই কথাটা তাকে বলে বোঝাতেই পারবেন না - ব্রিজ নিয়ে মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে, আর কিভাবে স্বপ্ন দেখে ?  যে জিনিসটা অন্য জাতি বোঝেই না, আমরা সেটার উপরে রচনা লিখতে পারি, থিসিস লিখতে পারি। বাঙ্গালীর মতন মেধাবী আর কেউ নেই। 

মেধায় সেরা হবার পাশাপাশি আমরা আরেকটি জিনিসেও সেরা। সেটা হল - দুর্নীতি। একসময়, সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ ছিল বাংলাদেশ। এখন শীর্ষ দশটি দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকার মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই।  বিষুয়টি আমাদের জন্য সুখকর হলেও উদ্বেগের আরেকটি ব্যাপার রয়েছে।  সেট হল, আমাদের দুর্নীতি সবচেয়ে  বেশী বিস্তৃত। 

রেস্টুরেন্ট এ বিল আসলো  চার হাজার টাকা, আপনাকে ওয়েটার প্রস্তাব দিলো - আপনি তাকে ৫০০ টাকা দিন, সে আপনার বিল আড়াই হাজার বানিয়ে দিবে।  সিরিয়ালে বসে রয়েছেন ডাক্তারের সাথে দেখা করার জন্য। ডাক্তারের এসিস্ট্যান্টকে বখশিশ দিলে আপনি ১০-১৫ জনকে ডিঙ্গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারবেন।  আমদের সমস্যা হল - সকল স্তরে দুর্নীতি। অন্যান্য দেশে দুর্নীতি হয়, তবে তার জন্য বিশেষ খাত, বিশেষ স্থান রয়েছে। আমাদের সকল যায়গাতে দুর্নীতি। অফিস আদালত তো আছেই,  রেস্টুরেন্ট, ডাক্তারের চেম্বার, ইত্যাদি জায়গাতেও দুর্নীতি রয়েছে। 

ফেরিতে ওঠায় জন্য গাড়ি ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকে। এর কারন কি ? এর একমাত্র কারন, অনিয়ম ও দুর্নীতি। ফেরির স্বল্পতা, যানজট, ইত্যাদি কোন ব্যাপার নয়।  ব্যাপারটা হল -অনিয়ম আর দুর্নীতি।  এটা সেটা বলে আমাকে বুঝ দেওয়া যাবে না। অমি ফেরির টিকিট কাউন্টারে কাজ করেছি। আন্দাজে মনগড়া ধারনা থেকে কথা বলছি না। কেন ফেরিতে উঠতে দেরি হয়, সেটা খুব কাছ থেকে দেখেছি। 

এখানে দুর্নীতিটা কেমন?  আপনার গাড়ি ফেরীতে ওঠানোর জন্য সিরিয়ালে রয়েছে। ওখানের কর্মচারী  বখশিশ দিলে - আপনি অন্য দশটি গাড়ি অতিক্রম করে আগেই ফেরিতে উঠতে পারবেন। এই টাকা কি শুধু অপনার কছে রয়েছে ? আপনার মতন  আরো দশজন বখশিশ  দিতে পারে । কেউ আবার ক্ষমতার দাপটে আগে যেতে চায়। কে যার আগে যেতে পারে, এই চেষ্টাতেই জট পাকিয়ে যায়। এভাবে দেরি হয়, সবারই ভোগান্তি হয়। বিভিন্ন কারনে ফেরিতে উঠতে ২-৩ ঘন্টা দেরি হতে পারে, তবে ৮-১০ ঘন্টা দেরী হওয়াটা অসম্ভব। এমন অসম্ভব কাজটিই এখন প্রতিদিন হচ্ছে। কারন, আমাদের মন্দ স্বভাবের কারনে, আমরা জোর করে এমন অবস্থা তৈরি করেছি। 

সেতু বানালেও মানুষের স্বভাব একাই থাকবে। ব্রিজ এর টোল দেবার কাউন্টারে ভিড় থাকবে, একজন আরেক জনের অগে যেতে চাইবে, সেতুর উপরে যানজট থাকবে। এখনকার মতন ৮-১০ ঘন্টা ভোগান্তি হবে না, তবে কিছু ভোগান্তি থাকবে।  যতকিছু দেন না কেন, মানুষের স্বভাব ভালো না হলে কোন লাভ নেই।  যদি স্বর্গেও রাখেন, তবুও ভালো হবে না। এ কারনেই, বাছাই করা ভালো স্বভাবের মানুষকে জান্নাতে নেওয়া হবে, সবাই জান্নাতে যেতে পারবে  না।  

একটা ব্রিজ থাকলে কি লাভ হয়? সহজে, কম সময়ে  অন্য পাড়ে যাওয়া যায়। এভাবে সহজে নদী পার হয়ে, আপনার কাছে কোন জিনিসটি দ্রুত আসবে ? দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, অরাজকতা  ও অনিয়ম। নদীর এক পাড়ে যা রয়েছে, অন্য পাড়ে সেটাই যাবে।  ফেরি পার হোক, ব্রিজ পার হোক,মুল কথা হল - আমাদের স্বভাব। 

Comments