আত্মহত্যা, না করলে কি হয়?

নায়কের শশুর, ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করেছে।আপনি সেই ভিডিওটা দেখেছেন তো? অন্যের মৃত্যু দেখার জন্য মানুষের কত আগ্রহ !! সুশীল শ্রেণীর কিছু লোকজন আছে। তারা এমন ঘটনার জন্য বিভিন্নভাবে সমাজকে দায়ী করেন। যারা আত্মহত্যা করে, তাদের কোন দোষ বা ব্যর্থতা নেই। সকল দোষ সমাজের।

শখ করে কেউ মরে না। একজন মানুষ অনেক বড় কষ্ট নিয়ে আত্মহত্যা করে। অবাক ব্যাপার, সেটার চেয়েও বড় কষ্ট নিয়ে, লক্ষ মানুষ দিব্যি বেঁচে রয়েছে। পরীক্ষায় পাশ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে, এমন উদাহরণ আছে। ওদিকে, লক্ষ ছাত্র ফেল করে বেঁচে আছে। চাকরির ইন্টারভিউতে টিকতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে, এমন উদাহরণ আছে। ওদিকে, লক্ষ বেকার বেঁচে রয়েছে। প্রিয় তারকার মৃত্যুর সংবাদ শুনে আত্মহত্যা করেছে, এমন উদাহরণ আছে। ওদিকে, কয়েক কোটি মানুষ আছে, যারা নিজের বাবার মৃত্যুর খবর শুনে দিব্যি বেঁচে রয়েছে।
যে পরিস্থিতিতে লক্ষ মানুষ বেঁচে থাকে, সেই পরিস্থিতিতে যদি কেউ আত্মহত্যা করে, তাহলে সেটা কি পরিস্থিতির দোষ, নাকি ওই লোকটির দোষ? যে লোকটি আত্মহত্যা করে, সকল ব্যর্থতা তার নিজের। ওটা তার নিজের দোষ।

বিভিন্ন পরিস্থিতি মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু, আত্মহত্যার মূল কারণ একটাই - নিরাশা, হতাশা। মানুষ "আশা" ছাড়া বাঁচতে পারে না। যখন কোন "আশা" খুঁজে পায় না, তখন আত্মহত্যা করে। যারা আত্মহত্যা করে, তাদের দোষটা ওখানেই। তারা "আশা" হারিয়ে ফেলে। অন্যরা "আশা" টিকিয়ে রেখে বেঁচে থাকে।
আশা টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো - আল্লাহর উপর ভরসা। আপনি নিজের জন্য যে পরিকল্পনা করেছেন, আল্লাহ আপনার জন্য তার চেয়ে হাজার গুন ভালো পরিকল্পনা করে রেখেছেন। আপনার পরিস্থিতি থেকে, সেই সময়ে, সেই ভালো পরিকল্পনাটা দেখা যায় না। এ কারণেই আপনি আশাহত হন। আপনি একটি কঠিন পরিস্থিতি দেখছেন, অথচ এর পেছনে খুব ভালো একটি ভবিষ্যৎ লুকিয়ে রয়েছে।
প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। ভারতের পাঞ্জাবের এক নতুন মডেল। শহরের ভেতরে এদিকে সেদিকে, ফ্যাশন শো তে মডেলিং করে। সেই ছেলেটি একবার অন্য শহরে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলো। আয়োজক কোম্পানী তার জন্য, বেঙ্গালোর যাবার বিমানের টিকিটও দিয়েছে। ছেলেটি তো খুশিতে অস্থির। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ছেলেটি সকালে বিমান মিস করলো, বেঙ্গালোর যেতে পারলো না। বেঙ্গালোর এর আয়োজক বকঝকা করে অস্থির। বোঝা গেল, এই ছেলেটিকে দিয়ে কোন কাজ হবে না। এমন পরিস্থিতিতে, ছেলেটি "আশা" হারিয়ে আত্মহত্যা করতে পারতো। কিন্তু, সে সেটা করেনি।
সকালে বিমান মিস করা ছেলেটি, বিকালে এক সিনেমা পরিচালকের কাছে ইন্টারভিউ দিতে গেল। সেই পরিচালক তার সিনেমার জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। পরিচালক ছেলেটিকে পছন্দ করলো। এরপরে ছেলেটি একটি, দুইটি, সিনেমার করতে করতে, অনেকগুলো সিনেমা করে ফেলেছে। সে এখন বিখ্যাত নায়ক। হ্যাঁ, বলিউড এর বিখ্যাত নায়ক অক্ষয় কুমার এর কথা বলছিলাম। অক্ষয় কুমার যদি বেঙ্গালোর গিয়ে মডেলিং করতো, তাহলে এত বড় তারকা হতে পারতো না। সেই বিমান মিস করার জন্য সে এত বড় তারকা হয়েছে।
আজকে যে ছেলেটি পরীক্ষায় ফেলে করে আত্মহত্যা করছে, বেঁচে থাকলে সে হয়তো একজন বড় নেতা হতে পারতো, মন্ত্রী হতে পারতো। আজকে যে তরুণ চাকুরী না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে, বেঁচে থাকলে সে হয়তো একজন শিল্পপতি হতে পারতো। আজকের কঠিন পরিস্থিতি দেখে, তারা নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বুঝতে পারেনি। তাই, "আশা" হারিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
কখনো আশাহত হবেন না। যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করুন, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আপনার জন্য কত ভালো ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না।
আত্মহত্যা না করলে, মানুষ বেঁচে থাকে, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হয়।

Comments