ইসলাম কেন নারীকে সীমাবদ্ধ করেছে


শুধু নারী দেখলেন, পুরুষ দেখলেন না? নারীকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে দেখলেন, পুরুষের সীমাবদ্ধতা দেখলেন না? বিষয়টা বোঝার জন্য, প্রথমে অন্য ধর্মের সাথে ইসলামের তুলনা করুন

  • একজন হিন্দু সারা জীবন মন্দিরে যাবে না, হিন্দু ধর্মের সকল দেব-দেবীকে অস্বীকার করবে, তবুও হিন্দু ধর্ম অনুসারে তার কোন ক্ষতি নেই। একজন খ্রিষ্টান, সারা জীবনে কোনদিনই গির্জায় যাবে না, তবুও খ্রিষ্টান ধর্ম অনুসারে তার কোন ক্ষতি নেই। অথচ, যে মুসলমান কোনদিন মসজিদে যায়নি সে ইসলাম থেকে বহিস্কার হয়ে যাবে।
  • একজন হিন্দু বা খ্রিষ্টান হলো ইশ্বরের কাছে পুত্রের মতন। ইশ্বরের হলো তাদের পিতার মতন। অথচ, একজন মুসলমান হলো আল্লাহর বান্দা, দাস, গোলাম।

ইসলাম কথাটার অর্থ "আত্মসমর্পণ"। ইসলাম মানে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। সীমাবদ্ধ না হয়ে আত্মসমর্পণ করা যায় না। ইসলাম হলো পরিপূর্ণ নিয়ম কানুনের ধর্ম। মানুষ কি করবে, কি খাবে, কিভাবে আয় করবে, কাকে বিয়ে করবে, টাকা কিভাবে খরচ করবে, কিভাবে দেশ চালাবে, ইত্যাদি যাবতীয় নিয়ম-কানুন আছে ইসলামে। ইসলাম মানুষকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।

বেশীরভাগ মুসলমান যেটা করে, সেটা ইসলাম নয়। সৌদি-আরব যেটা করে, সেটা ইসলাম নয়। ইসলাম হলো - যেটা কোরআন ও হাদিসে আছে।

প্রথমে, কোরআন অনুসারে, নারী মর্যাদা দেখুন

  • ‘তিনি তোমাদের একই সত্তা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার জীবনসঙ্গিণীকে একই উপাদান হতে সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১)
  • ‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও পুরুষদের উপর ন্যায় সঙ্গত অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’ (সুরা বাক্বারাহ ২২৮)

লক্ষ্য করুনঃ নারী ও পুরুষকে উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। নারী ও পুরুষ উভয়কেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

কোরআন অনুসারে নারীর অধিকার দেখুন

লক্ষ্য করুনঃ হাজার বছর আগে, নারীকে সম্পত্তির ভাগ, সঠিক নারীকে বিয়ে, ইত্যাদি বিষয়ক আইন কোরআনে দেওয়া আছে। আমেরিকার আইনে নারী, সম্পত্তির অধিকার পায় মাত্র ১৭০ বছর আগে। ব্রিটেনের আইনে নারী সম্পত্তির আধিকার পায় মাত্র ১৫০ বছর আগে। অর্থাৎ, ইংল্যান্ড-আমেরিকার আইনে, নারীরা ২০০ বছর আগেও সম্পত্তির ভাগ পেতো না, কিন্তু ইসলামিক আইনে নারীরা দেড় হাজার বছর আগেও সম্পত্তির ভাগ পেতো। ইসলাম নারীকে সীমাবদ্ধ করেছে, নাকি ইউরোপ-আমেরিকা সীমাবদ্ধ করেছে?

ইসলাম নারীকে কোন আমলে সম্পত্তির আধিকার দিয়েছে

  • যখন জীবন্ত পুঁতে-ফেলা কন্যা-শিশুকে জিজ্ঞেস করা হবে। কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (তাকবীর ৮-৯)

লক্ষ্য করুনঃ যে যুগে মানুষ কন্যা-শিশুকে জীবন্ত কবর দিতো, সেই যুগে ইসলাম নারীকে সম্পত্তির ভাগ দিয়েছে, সঠিক আধিকার দিয়েছে। এমনকি মায়ের পায়ের তলে সন্তানের জান্নাত এনে দিয়েছে। ইসলাম নারীকে সীমাবদ্ধ করেছে, নাকি উচ্চ-মর্যাদা দিয়েছে?

অন্য ধর্ম করেনি, কিন্তু ইসলাম নারীকে তেমন নির্দেশনা দিয়েছে

  • ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলে দিন যে, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না’ (আহযাব ৫৯)
  • ‘হে নবী! আপনি ঈমানদার নারীদের বলে দিন। তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তাদের গ্রীবা ও হবদেশ চাদর দ্বারা ঢেকে রাখে’ (নূর ৩১)

লক্ষ্য করুনঃ এভাবে নারীকে ঢেকে ও শালীন ভাবে থাকার আদেশ করেছে। এটা দেখে নারী স্বাধীনতা নিয়ে চাপাবাজি করা লোকজন খুবই অখুশি হয়। তারা যুক্তি দেয়, এভাবেই নারীকে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ঢেকে ও শালিনভাবে থাকলে, শুধু নারী কেন? পুরুষও শালীনভাবে থাকতে হবে।

তাহলে, দেখুন পুরুষকে কিভাবে শালীন থাকতে বলা হয়েছে

  • ’হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।‘ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)

নারী পুরুষ উভয়কেই সংযত থাকতে বলা হয়েছে

  • আর তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার কাছাকাছি যেও না।।’ (সুরা আল-আনআম : আয়াত ১৫১)
  • আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩২)

লক্ষ্য করুনঃ এখানে নারী ও পুরুষ উভয়কেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

যে সতী নারীর নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়, সেই পুরুষের কি হবে?

  • ’যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’ (সুরা নুর : আয়াত ২৩)

লক্ষ্য করুনঃ এখানে নারীর পক্ষ নিয়ে, পুরুষকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

বোঝা গেলো, ইসলামে শুধু নারী নয়, পুরুষকেও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। নারী পুরুষ উভয়কেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ নিয়ম-নীতির ধর্ম। ইসলামে সবাইকেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।



Comments