ইংরেজী যেভাবে বলতে পরি


বেশ আগে আমার একটি লেখা ছিল ইংরেজী কেন শিখতে পারি না ভালো সাড়া পেয়েছি। বিডি-টুডে ব্লগ, আমার লেখাটিকে সেরা নির্বাচিত করেছিল। আগের লেখাটি ছিল সমস্যা নিয়ে। এবার এর সম্ভ্যাব্য সমাধান এর বিষয়ে লিখছি। আমার এই সামান্য লেখা থেকে ইংরেজী শিখে নেওয়া কিংবা প্রচলিত সমস্যার সমাধান খুজে পাওয়া অসম্ভব। সে চেস্টাও আমি করিনি। আমি শুধু আপনার জানা কিছু বিষয় মনে করিয়ে দিয়াছি। আগের লেখাটা পড়া থাকলে এই লেখাটা বুঝতে আরো সহজ হবে।
আমাদের প্রচলিত (কথ্য) বাংলা ভাষায় প্রায় শতকরা ২০ ভাগ ইংরেজী শব্দ রয়েছে। অনেক ইংরেজী শব্দের বাংলা আমরা জানিনা।(বেলুন এর বাংলা ফানুষ) অর্থাত একজন অশিক্ষিত লোকও ৫০ টির ও বেশী ইংরেজী শব্দ জানে। একজন যদি শুধুমাত্র এস এস সি পাস হয় তবুও সে তার স্কুল জীবনে দশ বছরে অন্তত কয়েকশত ইংরেজী শব্দ শিখে। একজন কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে পড়লে তার ইংরেজী শব্দ ভান্ডার আরো বড় হয়। সাধারন মানের এক কলেজের সাধারন মানের একজন ছাত্র অন্তত ৫০০ টা ইংরেজী শব্দ জানে। কিন্তু ইংরেজী বলতে বা লিখতে গেলে মাথা থেকে কিছুই বের হয় না। এর কারন একটাই – অভ্যাস।

লজ্জা কাটিয়ে অভ্যাস গড়ুনঃ গান গাইতে পারে না এমন লোক নেই। হ্যা, খারাপ করে হলেও, গান গাইতে সবাই পারে। ভালো গান গাইতে পারে তারা যাদের অভ্যাস আছে। ঠিক তেমনি যাদের ইংরেজী বলে অভ্যাস নেই তারা হয়ত একটু খারাপ (ভুল) ইংরেজী বলবেন। কিন্তু ইংরেজী সবাই বলতে পারে। লজ্জা কাটিয়ে ওঠা না গেলে অভ্যাস তৈরি করা যাবে না। যারা নাচ, গান, অভিনয় ইত্যাদি করেন তারা লজ্জা কাটিয়ে ওঠার পরেই অভ্যাসটি রপ্ত করতে পেরেছেন। ইংরেজীও তেমনি।

গ্রুপ তৈরি করুনঃ তাস খেলার জন্য, ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য আমাদের যেমন গ্রুপ থাকে তেমন গ্রুপ তৈরি করুন ইংরেজী বলার জন্য। কাছের বন্ধু, সহপাঠী, সহকর্মী যাদের মধ্যে লজ্জার দেওয়াল নেই এমন ২-৪ জনের একটি গ্রুপ তোইরি করুন। সিদ্ধান্ত নিন যে প্রতিদিন ১৫ মিনিট আপনারা ইংরেজী ছাড়া কথা বলবেন না। যে কথাটা ইংরেজীতে বলতে পারেন না সেটা ওই ১৫ মিনিট শেষ হওয়ার পরে বলবেন। আস্তে আস্তে এই সময়টা বাড়িয়ে নিন। একদিন দেখবেন সারাদিন ইংরেজীতে কথা বলতে পারছেন। প্রথম দিকে আমি ও আমার বন্ধু রাতে ফাকা ট্রেন স্টেশনের বেঞ্চে বসে ইংরেজী কথা বলার চর্চা করতাম। আধা ঘন্টা ইংরেজী বলে একেবারে ঘেমে যেতাম। প্রথম দিকে একটু কস্ট হবে এরপরে অভ্যাস হয়ে গেলে এটি খুব সহজ। যারা মোটর সাইকেল বা গাড়ী চালাতে যানেন তারা বিষয়টি বুঝবেন। প্রথমদিকে কেমন কস্ট হোত আর এখন কেমন সহজ হয়ে গেছে।

ভুল ধরবেন নাঃ
আপনার বন্ধু আপনার সাথে ভুল ইংরেজী বলছে। ওটাই ঠিক। ভুল ধরবেন না। আপনার বন্ধুও আপনার ভুল ধরবেন না। যে যা বলেন সেটাই ঠিক। গাড়ী চালানো শেখাটা প্রথমে দরকার, রাস্তার নিয়ম কানুন পরে শিখতে হবে। লজ্জা কাটিয়ে ইংরেজী বলার অভ্যাস করাটাই প্রথম কথা। এর পরে ভুল বলতে বলতে একদিন সঠিক বলতে পারবেন। কিন্তু প্রথম থেকেই একে অপরের ভুল ধরলে অভ্যাসটাই কখোনো গড়ে উঠবে না। আর ভুল নিয়ে ঠাট্টা, মশকরা আর হাসাহাসি একেবারেই করা যাবে না।

সহজ কথা বলুনঃ ওই ১৫ মিনিট সহজ কথা বলুন। সব কথা বলতে হবে না। আপনি যেটুকু ইংরেজীতে বলতে পারবেন সেটুকুই বলুন। হয়ত আপনার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে যে “গতকাল বাংলাদেশ খেলায় জিতেছে, ওমুক এত রান করেছে” ইত্যাদি। এসব বলা কঠিন হলে অন্য একটি সহজ কথা বলুন যেমন “আমার জামাটি লাল”। বন্ধু বলতে পারেন “সুন্দর জামা”। এভাবে সহজ কথা দিয়ে শুরু করুন। কয়েকদিন সহজ কথা বলতে বলতে আস্তে আস্তে এই কঠিন কথাও বলতে পারবেন। শুরুতেই কঠিন কথা বলতে গেলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

অনুবাদ করবেন নাঃ মনে মনে কোন বাংলা বাক্য সাজাবেন না। মনে মনে একটি দৃশ্য কল্পনা করুন। তারপরে, সেই দৃশ্য ইংরেজীতে বর্ণনা করুন। মনে রাখবেন, বাংলা কথা চিন্তা করবেন না, দৃশ্য চিন্তা করবেন। বানারে গিয়ে মাছ কেনার দৃশ্য কল্পনা করুন। এর পরে ইচ্ছামতন ইংরেজীতে বলুন - I go market, buy fish, First go market, then buy fish, I bring fish from market, I get fish in market । ইচ্ছামতন বলুন, ভুল বলুন, কিন্তু দৃশ্য অনুসারে সরাসরি ইংরেজী বলুন। বাংলাতে "আমি মাছ বাজারে গিয়েছি" এই কথাটি সাজাবেন না, এই কথাটা চিন্তাও করবেন না। কল্পনাতে দৃশ্য দেখুন, বাংলা বাদ দিয়ে, সরাসরি ইংরেজী চিন্তা করুন। মনে মনে বাংলায় চিন্তা করে মুখে ইংরেজী অনুবাদ করবেন না। মনে মনে ঘটনাটি চিন্তা করুন, কথাটি নয়।

সব শব্দের ইংরেজী জানতে হবে নাঃ অনেকের এই ভুল ধারনা আছে যে ইংরেজী বলতে হলে হয়ত অনেক ইংরেজী শব্দ জানতে হয়। আমি খুব বেশী ইংরেজী শব্দ জানি না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে, এমন কোন কথা নেই যা ইংরেজীতে বলতে পারব না। কারন আমি আমার বক্তব্যকে এমনভাবে সাজাই যেন আমার জানা শব্দগুলি দিয়েই তা বলা যায়। এটার জন্যই অভ্যাস প্রয়োজন। আপনার বক্তব্যকে ওভাবে সাজাতে হবে। আপনার কথাগুলো আপনার ইংরেজী দক্ষতা অনুযায়ী ইংরেজীতে সাজিয়ে নিন। সব শব্দের ইংরেজী জানতে হবে না।

আপনার ধারনার চেয়ে আপনি বেশী জানেনঃ
আপনার ইংরেজী জ্ঞান আপনার ধারনার চেয়ে অনেক বেশী। হয়ত মনে করেছিলেন যে খরগোশ ও কচ্ছপের গল্পটি ইংরেজীতে বলতে পারবেন না। এখন কিন্তু জেনে গেছেন যে আপনি পারেন। একটু চেস্টা করলেই, এভাবে পরিচিত অন্য কোন গল্প ইংরেজীতে বলতে পারবেন। অভ্যাস না থাকলে জানা ইংরেজী শব্দটিও মাঝে মাঝে মনে পড়ে না। এমন ক্ষেত্রে অন্য শব্দ দিন। যেমন দাড়িপাল্লা কথাটির ইংরেজী অনেকেই মনে করতে পারছেন না (দাড়িপাল্লা – scale)। কোন অসুবিধা নেই। অন্যভাবে বলুন। ওটাকে weight machine, measurement, counter ইত্যাদি কাছাকাছি একটা কিছু বলুন। 

এ্য এ্য করা যাবে নাঃ কথার মাঝে এ্য এ্য বলার অভ্যাস অনেকেরই আছে। ইংরেজী বলতে শেখার সময় ৯০% লোকেরই এ্য এ্য বলার একটা প্রবনতা থাকে। আসলে কোন একটি ইংরেজী শব্দ মনে না পড়লে তখন এ্য এ্য করতে থাকে আর শব্দটি মনে করতে থাকে। এই অভ্যাস একবার হয়ে গেলে আর কোনদিন ছাড়তে পারবেন না। এমনকি যখন দ্রুত ইংরেজী বলার অভ্যাস হয়ে যাবে তখনও বিভিন্ন শব্দের মাঝে দ্রুত এ্য চলে আসবে। এর থেকে বাচার উপায় একটিই। যখন কোন শব্দ মনে করবেন তখন মুখে কিছু উচ্চারন করবেন না। যেমন আপনি বলছেন My mobile is lost in এ্য এ্য এ্য the auditorium. এখানে auditorium শব্দটি  মনে আসছিল না। তাই এ্য এ্য এ্য চলে এসেছে। এমন ক্ষেত্রে বাক্যের সহজ অংশটুকু বলে, থেমে গিয়ে, বাকিটুকু চুপ করে চিন্তা করুন। এই চিন্তার সময় আস্তে আস্তে কমে যাবে। এ্য এ্য না বলে, মুখ বন্ধ রেখে চিন্তা করুন।

যা বলেছেন সেটাই ঠিকঃ আপনি কোন ইংরেজী সাহিত্যিক বা তারকা বা রাজনীতিবিদ নন। তাহলে আপনাকে শুদ্ধ ইংরেজী বলতে হবে কেন? আপনি যা বলবেন সেটাই ঠিক। বলার আগে এই চিন্তা কখনোই করবেন না “এটা বলা কি ভুল্ হচ্ছে?” ভুল হোক শুদ্ধ হোক আপনি বলুন। এভাবে নিজের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন। এর পরে ভুল গুলি একদিন শুধরে যাবে।

লজ্জা পরিহার করুন, চর্চা করুন, অভ্যাস গড়ে তুলুন। অনুবাদ করবেন না, আপনার জানা শব্দগুলি দিয়ে ইংরেজী বলা সম্ভব। এই লেখাটি শেখানোর জন্য নয়, বরং উতসাহ দেবার জন্যে। এই লেখাটি যদি একজনকেও ইংরেজী শিখতে উতসাহী করতে পারে তবে নিজেকে ধন্য মনে করব।

Comments

Post a Comment