ইসলামে গনতন্ত্রের রূপ


ইদানিং একটা নতুন প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে। প্রশ্নটা এমন -আমি শুনেছি ইসলামে নাকি গনতন্ত্র হারাম। আবার এও শুনেছি ইসলামে নাকি গনতন্ত্র আছে। এর কোনটা সত্যি?
ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন আগে পরে শোনা গেছে। এসব প্রশ্নের বেশীর ভাগই শত বছর আগের। কিন্তু গনতন্ত্র নিয়ে এই প্রশ্নটি একেবারে নতুন। ৩০ বছর আগেও এই প্রশ্নটি কারো মাথায় আসেনি। এখন মাথায় আসার কারন হল ইন্টারনেটের যুগে বই পত্র, তথ্য ইত্যাদি অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে। সবাই পড়তে ও লিখতে শিখে গেছে। কেউ বলছে গনতন্ত্র হারাম। ইসলামে গনতন্ত্র নেই। কেউ বলছে যে, খোদ ইসলামিক রাস্ট্রেই তো গনতন্ত্র চলছে। ইসলামিক রাস্ট্রে মজলিসে শুরা থাকে যারা এক ধরনের ভোট এর মাধ্যমে সরকার প্রধান (খালিফা) নির্বাচন করেন। এটাই তো গনতন্ত্র। তাহলে ইসলামে গনতন্ত্র হারাম হলো কিভাবে? মুল কথা হল। ইসলামিক রাস্ট্রেই সীমিত হলেও, ভোটের ব্যাবস্থা আছে। এমনকি ইসলামের নিয়ম কানুনের বেলাতেও কোরআন, হাদিসে সুস্পস্ট কোন সমাধান খুজে না পাওয়া গেলে ইসলামিক পন্ডিতদের সংখাগরিস্ট মতামত (ভোট) এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটাকে ইজমা-কিয়াস বলে। তারাবীর নামাজ যে ২০ রাকায়াত পড়তে হবে সেটা ওই ইজমা এর মাধ্যমে এসেছে। এখানেও তো গনতন্ত্র হয়ে যাচ্ছে। তাহলে গনতন্ত্র হারাম হল কিভাবে?

একটা উদাহরন মনে পড়ছে। এক বন্ধু আর এক বন্ধুকে বলছে, জানিস, রবীন্দ্রনাথ ফুটবল খেলোয়ার ছিলেন। অপর বন্ধু তো কিছুইতেই মানবে না। তখন প্রথম বন্ধুটি বলল, শোন রবীন্দ্রনাথের গান “বল দাও, মোরে বল দাও”। রবীন্দ্রনাথ ওই গানে কিন্তু ফুটবল চাননি। তিনি বল (শক্তি) চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই বোকা বন্ধুটি বিষয়টি বুঝতে পারল না। আমাদের অবস্থাও হয়ছে ওই বোকা বন্ধুর মতন। আমরা ইসলাম ও গনতন্ত্র এই দুটি বিষয়েই ভুল বুঝে বসে রয়েছি। ইসলাম না জানলেও গনতন্ত্র বলে মুখে ফেনা তোলা এই জাতির তো অন্তত গনতন্ত্র জানা উচিত। আমরা সেটাও জানিনা। এবার মুল বিষয়ে আসি।

ভোট দিয়ে সরকার প্রধান নির্বাচন করাটা গনতন্ত্র নয়। ভোট হল সরকার প্রধান নির্বাচন করার পদ্ধতি মাত্র। ভোট, গনতন্ত্র নয়। তাহলে গনতন্ত্র কাকে বলে? গনতন্ত্র হল এমন এক রাস্ট্র পদ্ধতি যেখানে রাস্ট্রের মালিক (সমান অংশিদার) দেশের জনগন। সহজ করে বলছি - গনতন্ত্র মানে হল দেশের মালিক দেশের সবাই। আমরা সবাই রাজা

একটি দেশে কোন তন্ত্র চলে তা নির্ভর করে ওই দেশের মালিক কে , তার উপরে। রাজতন্ত্র হল, দেশের মালিক রাজামশাই। পুরো দেশটিই তার সম্পত্তি। এজন্যই তার মৃত্যুর পরে তার ছেলে উত্তরাধিকার সুত্রে বাবার সম্পত্তি অর্থাত দেশের মালিক হয়। সেই হয় নতুন রাজা। ভোটের দরকার নেই। গনতন্ত্রে দেশের মালিক হলো জনগন। সবাই মিলে দেশ চালানো সম্ভব নয়। তাই ভোট দিয়ে নিজেদের মধ্য থেকে রাস্ট্র প্রধান নির্বাচন করে। ভোট হলো রাস্ট্র প্রধান নির্বাচন করার পদ্ধতি। দেশের মালিক সব সময়ই জনগন। ইসলামিক শাশন ব্যাবস্থায় দেশের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ নিজে এসে তো দেশ শাশন করেন না। তাই একজনকে খালিফা (প্রতিনিধি) নির্বাচন করা হয়। সেই খালিফা হয় রাস্ট্রপ্রধান।

রাজতন্ত্র - রাজা দেশের মালিক - নিজেই রাস্ট্র প্রধান হয়।

গনতন্ত্র - জনগন দেশের মালিক - নির্বাচিত ব্যাক্তি রাস্ট্র প্রধান হয়।

ইসলামিক শাশন - আল্লাহ দেশের মালিক - মনোনিত ব্যাক্তি রাস্ট্র প্রধান হয়।

কোন পদ্ধতিতে রাস্ট্র প্রধান নির্বাচন বা মনোনয়ন হবে সেটা অনেক পরের কথা। প্রথম কথা হল দেশের মালিক কে। এই মালিকের উপরেই নির্ভর করে এটা কোন তন্ত্র। ইসলামিক রাস্ট্রে দেশের মালিক আল্লাহ, জনগন নয়। অর্থাৎ গনতন্ত্রের প্রথম বিষয়টিই ইসলাম অগ্রাহ্য করছে। গনতন্ত্র ও ইসলামিক তন্ত্র , এ দুটো সম্পুর্ন ভিন্ন দুই জিনিস। এর পরেও কেউ যদি বলে যে ইসলামে গনতন্ত্র আছে তার মানে সে ইসলাম তো চেনেই না, সেই সাথে গনতন্ত্রও চেনে না।

Comments