রাস্ট্রধর্ম ইসলাম – নাম আপনার, রেজিস্ট্রশন অন্যের


অনেকবার আমাদের দেশপ্রেম, ও ইসলাম ধর্মের প্রতি ভালোবাসার কথা বলেছি। এটা ঠিক ভালোবাসা নয়, আবেগ। ভালোবাসা জিনিসটার সাথে কোন এক সময়ে দায়িত্ব জিনিসটা চলে আসে। কিন্তু আবেগ তো শুধু আবেগই। দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি আবেগ আছে। সেটাকে আমরা “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” বলে চিনি। দায়িত্বজ্ঞানহীন বলছি তার কারন হল, এই আবেগ আমাদেরকে দেশের বর্তমান লাভ-ক্ষতি ভাবতে শেখায় না। এই আবেগ আমাদেরকে ৪৫ বছর আগে কি হয়েছিল, সেই ইতিহাসের ব্যাবচ্ছেদ করতে শেখায়। এই আবেগ, আমাদেরকে ৪৫ বছর আগের ধর্ষনের বিচার চাইতে শাহবাগের মোড়ে জড়ো করে, কিন্তু গতকালের ধর্ষনের বিচার চাইতে, প্রতিবাদ করতে শেখায় না। এজন্যই “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” নামক ওই আবেগকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলছি।


একইসাথে, আমাদের ইসলাম ধর্মের প্রতিও দায়ীত্বজ্ঞানহীন একটা আবেগ রয়েছে। ইসলাম ধর্ম সঠিকভাবে পালন করা, সমাজে সেটা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি থেকে আমরা বহু দূরে থাকি। আমরা ব্যাস্ত আছি, কে রাসুল (সা) কে কটুক্তি করল, কে পর্দা, কুরবানী ইত্যাদি নিয়ে কটুক্তি করল, কে ইসলামের নামে বাজে কথা বলল, ইত্যাদি নিয়ে। হ্যা, এসব বাজে কথার জবাব দেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বড় প্রয়োজন সমাজে নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। অনেক বড় প্রয়োজন সমাজ থেকে শিরক (পীর, মাজার, তাবিজ, যাদু টোনা) দূর করা। এসব ক্ষেত্রে আমাদেরকে খুজে পাওয়া যায় না। আমাদের সমাজে ইসলামি শিক্ষিত লোকদের  আছে আরেক সমস্যা। তারা সামান্য খুটি-নাটি বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব ও ব্যাবধান করে রাখেন যে কোনদিন ঐক্যমতে পোঁছতে পারেন না। তাই তাদের একতাও হয় না । তারা সর্বদাই দুর্বল থাকেন। আমাদের এমন দায়ীত্বজ্ঞানহীন আবেগী ইসলামের কারনেই আমরা সংখায় ৯০% হওয়া সত্বেও, কতিপয় অসভ্য মানুষ, এদেশে ইসলামের নামে কটুক্তি করার সাহস পায়। আর এই সুযোগে রাজনীতিবিদেরা একটু রাজনীতিও করে নেয়।

এমনই এক রাজনীতি চলছে কয়েক মাস ধরে। সেটা হল – “রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম” বাতিল করা। এ নিয়ে অনেক কথা বার্তা চলছে। ইসলাম বিরোধী ভদ্রলোকেরা এটাকে যুগান্তকারী একটা পদক্ষেপ বলছেন। একটা ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে এটা নাকি দরকার। ওদিকে আমরাও বলছি, ৯০% মুসলমানের দেশে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম কেন হবে না? তাছাড়া রাস্ট্রধর্ম ইসলাম থাকাতে  অন্য ধর্মালম্বীদের কোন রকমের সমস্যা কোনদিন হয়নি। তাহলে “রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম” বাতিল করা, কেন? 

এই “ধর্ম নিরপেক্ষতা” কথাটি দিয়ে বাংলাদেশে প্রায় সব মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখা ছয়েছে। বাংলা অভিধানে (dictionary) দেখুন। “নিরপেক্ষ” কথাটি অর্থ – পক্ষহীন। যার কোন পক্ষ নেই, সেই নিরপেক্ষ। আসলে ধর্ম নিরপেক্ষতা হল ধর্মহীনতা। যাই হোক, সেই দিকে না যাই।  আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা বলছেন , সংবিধানে “বিসমিল্লাহ” থাকলে আর  “রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম” থাকলে দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ হয় না। কথাটা শুনে খুবই যুক্তিযুক্ত মনে হয়। ওদিকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের শ্লোগান বা নীতিবাক্য (Motto) হল In God we Trust (আমরা ঈশ্বরে আস্থা রাখি)। আমেরিকার মুদ্রা ডলারের উপরেও এই কথাটা লেখা থাকে। আমেরিকা দেশটির বয়স প্রায় ২৪০ বছর। দেশটিতে অনেক বড় জ্ঞানী গুনী থাকে। তাদের কারো মাথায় এতদিনে এটা আসেনি যে  “আমরা ঈশ্বরে আস্থা রাখি” কথাটা বলাতে আমেরিকার ধর্ম নিরপেক্ষতা নস্ট হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে আমাদের দেশে যারা বুদ্ধি বিক্রি করে খায় (বুদ্ধিজীবি), তাদের মাথাতে এই আইডিয়া ঠিকই এসেছে। এর সবটাই আসলে ভন্ডামী। এটা ইসলাম বিরোধীতা করার একটা ছুতো। আসলে, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে কিছু নেই। সকল গনতান্ত্রিক রাস্ট্রই ধর্ম নিরপেক্ষ। আমাদের দেশেও সঠিক গনতন্ত্র চালু করলে, দেশ এমনিতেই ধর্ম নিরপেক্ষ হয়ে যাবে। 
  
এখন প্রশ্ন হল, “সংবিধানে বিসমিল্লাহ” আর “রাস্ট্রেধর্ম ইসলাম” এই দুটি জিনিস কি মুসলমানদের আসলেই দরকার ?  কিংবা, ইসলাম কি এই দুইটা জিনিস দাবি করে? উত্তর হল – না, ইসলামে এমন দাবী করে না, মুসলমানদের এটির কোন দরকারও নেই। এই দুটি বহাল থাকা আর না থাকা আমাদের জন্য সমান।  কারন আমাদের দেশের সংবিধান ও শাশন ব্যাবস্থা তথা পুরো দেশটিই অনিসলামিক। কাজেই এতে “বিসমিল্লাহ” থাকুক,  “রাস্ট্রেধর্ম ইসলাম” থাকুক, এতে কিছুই আসে যায় না।  তাছাড়া “রাস্ট্রধর্ম ইসলাম” জিনিসিটা “রাস্ট্রভাষা বাংলার” মতন কিছু নয়। আমাদের যেমন জাতীয় পশু বাঘ, জাতীয় ফুল শাপলা। ঠিক তেমনি জাতীয় ধর্ম ইসলাম। আমাদের দেশে, কোন ক্ষেত্রেই ইসলাম মেনে চলা হয় না। কাজেই জাতীয় ধর্ম যাই হোক না কেন, কিছুই যায় আসে না। 

একটি বাড়ির নাম “গোলাপী মঞ্জিল” হলে, গোলাপী বেগম কিন্তু ওই বাড়ির মালিক হয়ে যান না। সেই বাড়ির মালিক হলেন সেই ব্যাক্তি, যার নামে বাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করা। ধর্মের ব্যাপারে আমাদের দেশেরও একই অবস্থা। নামে “রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম” আছে ঠিকই কিন্তু দেশটি রেজিস্ট্রশন (সংবিধান ও শাশন ব্যাবস্থা) করা আছে ধর্ম নিরপেক্ষ (অনইসলামিক) ব্যাবস্থায়। তাই “জাতীয় ধর্ম ইসলাম” নিয়ে টানটানি বা দ্বন্দ আসলেই অপ্রয়োজন। সংবিধানের শুরুতে “বিসমিল্লাহ” থাকুক আর না থাকুক, জাতীয় ধর্ম ইসলাম থাকুক আর না থাকুক – বাংলাদেশ সব সময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ ছিল, আছে থাকবে। ইসলাম প্রতিস্টা করতে হলে পুরো সংবিধানটাই ইসলামিক হতে হবে। আর তা না হলে, আবেগের বসে, শুরুতে বিসমিল্লাহ আর নাম মাত্র জাতীয় ধর্ম ইসলাম রেখে কোন লাভ নেই।  

Comments

  1. একেবারেই ঠিক😃 তবে সংবিধান বানানোর আগে মানুষকে সত‍্য ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে

    ReplyDelete

Post a Comment