ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময় পৃথিবী


দুনিয়ার একমাত্র প্রানী মানুষ, যারা কিনা খাবারের জন্য কাজ করে, পয়সা দেয়, মারামারি করে এমনকি মরেও। অন্য সকল প্রানীয় জন্য খাবার ফ্রী। আমরা যেমন বাতাস, বৃস্টি, রোদ ইত্যাদি ফ্রী পাই। ঠিক তেমনি অন্য সকল প্রানী খাবার ফ্রী পায়। যদি আটকে না রাখা হয়, অন্য কোন প্রানী না খেয়ে মরে না। আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন বিশ্বে গড়ে প্রতি সাত জনের একজনের পেটে খাবার নেই। অর্থাৎ, সাতশো কোটি লোকের এই পৃথিবীতে, একশত কোটি লোক এখন না খেয়ে আছে। না, শখ করে নয়, তাদের কাছে খাবার নেই, বা খাবার কেনার পয়সা নেই। 

ক্ষুধার কস্ট যে কেমন, সেটা রোজা থাকলে বোঝা যায় না। রোজা তো আসলে ইচ্ছে করে না খেয়ে থাকা। কস্টটা তখনই বোঝা যায় যখন বাধ্য হয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। আমরা যখন ক্ষুধার কথা বলি, তখন আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর জরাজির্ন মানুষের ছবি। মনে পড়ে আমাদের দেশের রাস্তার পাশে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া পথ শিশুর ছবি। কিন্তু এর বাইরেও খাবারের সমস্যায় ভোগা লোক আনেক আছে। সেই সংখাটা আমাদের ধারনার বাইরে।     
  
ক্ষুধার কস্ট কমবেশি, বিশ্বের সবখানেই আছে। খাবারের জন্য, বিশ্বের সেরা দেশ যুক্তরাস্ট্র। খাবারের দাম কম, পরিমানে বেশী। মানুষ মোটা হয়ে যাচ্ছে, এটাই ওই দেশের সমস্যা। অনুন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করছি না। আমেরিকার ম্যকডনাল্ড বা কে এফ সি এর ছোট (Small) প্যাকেট, জাপানের বড় (Large) প্যাকেটের চেয়ে বড়। বিশ্বের সবচেয়ে খাদক জাতি হিসাবে আমেরিকানরা পরিচিত। সেই আমেরিকাতেই, গড়ে প্রতি ছয় জনের একজন জানে না পরের বেলায় কি খাবে। দয়া করে, ভুল বুঝবেন না, ওরা না খেয়ে থাকে না। তবে কি খাবে সেটার, জোগড় নেই, অনিশ্চয়তা। পরের বেলার খাবার জোগাড় করতে হবে, এমন একটা অবস্থায় থাকে প্রতি ছয় জনের একজন।   

খাবার আসলে কি? খাবার হল, কোন প্রানী বা উদ্ভিদের দেহের অংশ। আমরা হয়ত গবেষনাগারে স্বর্ন বা হীরা বানাতে পারি, তবে খাবার বানাতে পারি না। কারন, খাবার প্রানী দেহ থেকে আসে, আর কোন কিছুতে প্রান দেওয়া মানুষের সাধ্যের বাইরে। বৃস্টির পানি, বাতাস ইত্যাদির মতনই খাবার আল্লাহর দান। আমরা শুধুমাত্র দুইভাবে খাবার পাই। এক, গাছ লাগিয়ে (চাষাবাদ), দুই, প্রানী শিকার করে। এটা কিন্তু ওই বৃস্টির পানির মতনই। আমরা যেমন বৃস্টি নিয়ন্ত্রোন  করতে পারিনা, শুধুমাত্র পানি সংগ্রহ করতে পারি। ঠিক তেমনি, আমরা খাবার সংগ্রহ করি।               

আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী খাবার ছড়িয়ে আছে এই বিশ্বে। এর পরেও ক্ষুধার সমস্যার কারন হল, আমদের দুর্বল ব্যাবস্থাপনা আর অসম বন্টন। প্রানী জগতে দেখুন, খাবার কিভাবে বন্টন হয়। একটি বাঘ হরিন ধরে। তার যতটুকু লাগে, সেটুক খেয়ে বাকিটা ফেলে চলে যায়। এর পরে শেয়াল আসে, এর পরে শকুন, ইদুর, পোকা মাকড়। যে যার মতন খেয়ে, অন্যের জন্য রেখে চলে যায়। অনেক প্রানী খাবার জমিয়ে রাখে। তবে, ঠিক তার যতটুকু লাগে ততটুকু। মানুষের জগতে এমন হয় না। একজন, মানুষ লক্ষ মানুষের খাবার (বা সম্পদ) আটকে রাখে। এগুলো সে জীবনেও ভোগ করতে পারবে না, বেচে থাকতে অন্যকে দিবেও না। সারা বিশ্বের ৯০% সম্পদ আছে মাত্র ১০% মানুষের কাছে। মাত্র ১০০ জন লোকের কাছে সারা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশী সম্পদ আছে। 

এমন অসম বন্টন ছাড়াও আমাদের আরেকটি সমস্যা হল, ব্যাবস্থাপনার সীমাবদ্ধতা। এর ফলে, অনেক খাবার নস্ট হয়। উন্নত বিশ্বের ৩০% সবজী ক্ষেত থেকে তোলাই হয় না, শুধু দেখতে খারাপ হবার কারনে। পচা কিংবা নস্ট নয়, দেখতে খারাপ। এছাড়া বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে, খাবারের দোকানে, খাবারের মান ঠিক রাখতে, অনেক খাবার ফেলে দিতে হয়। আবার অনেকে যা খাবার কেনে, তার সব খেয়ে শেষ করতে পারে না, বাকিটা ডাস্টবিনে চলে যায়।  এতো গেল উন্নত বিশ্বের কথা। অনুন্নত দেশগুলোতে তো অনেক সময় ক্ষেতের ফসল, নদীর মাছ ইত্যাদি সময় মতন হিমাগারে পৌছাতে পারে না। সেগুলো পচে নস্ট হয়ে যায়। এভাবেই, সারা বিশ্বের প্রায় তিনভাগের একভাগ খাবার নস্ট হয়। ওদিকে, সাত জনের একজন না খেয়ে থাকে। 

বিশ্বের খাদ্য সমস্যা কখনোই পুরোপুরি সমাধান করা যাবে না। কিন্তু আমরা যদি একটু বুঝে শুনে, কম নস্ট করে, খাবারের সদব্যাবহার করি। আমরা যদি খাবার নস্ট না করে অসহায় ও ক্ষুধার্থকে দেই, তাহলে আমদের এই পৃথিবীটা আরো অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে। 

Comments

  1. ভাই আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগে, মনের মাঝে ঢেউ শুরু হয়। ভাই আপনার কি কোন লিখিত বই আছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহ খাইর।
      বই লেখার মতন অত বড় লেখক এখনো হইনি।
      তবে, অদুর ভবিশ্যতে বই প্রকাশ করাব, ইনশা-আল্লাহ

      Delete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. আল্লাহ্ যদি তৌফিক দেয় কাল থেকে এক বেলা খাবার কম খাবো
    শুধু মাত্র ওদের কথা ভেবে যারা অনাহারে থাকে

    ReplyDelete

Post a Comment