দেশের মালিক কে ?


একটি দেশের মালিক কে, সেটা জানার জন্য প্রথমে দেখতে হবে সেই দেশে কোন শাশন ব্যাবস্থা চলে। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে পুরাতন শাশন ব্যাবস্থা হল - রাজতন্ত্র। এই ব্যাবস্থায়, একটি দেশের মালিক হলেন রাজামশাই। তিনি হয় উত্তরাধিকার সুত্রে দেশটি পেয়েছেন অথবা দখল করে নিয়েছেন। রাজার অবর্তমানে, দেশটির মালিকানা পায় তার পরিবারের লোকেরা। তাদেরই একজন হয় নতুন রাজা, দেশের মালিক। রাজতন্ত্রে রাজার কথাই আইন, রাজা যেটা চান, সেটাই হয়। রাজাকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। তিনিই দেশের মালিক, একছত্র অধিপতি।

আধুনিক সময়ে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় শাশন ব্যাবস্থা হল - গণতন্ত্র। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও আমরা গণতন্ত্র জিনিসটাকে ভালোভাবে বুঝি না। গণতন্ত্র হল এমন একটি শাশন ব্যাবস্থা, যেখানে দেশের মালিক হল - জনগন। বাংলাদেশের পুরা নাম হল - গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ । সবাই মিলে একসাথে দেশের মালিক। এত লোক মিলে, একসাথে তো আর দেশ শাশন করা যায় না। এজন্য জনগনের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হয়। এসব প্রতিনিধিরাই আমাদের নির্বাচিত নেতারা। জনগন যদি দেশের মালিক হয় তাহলে নেতারা কি? রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা তাহলে কি? 

ধরুন আপনারা ৫০ জনের একটি দল পিকনিকে যাচ্ছেন। সবাই চাদা (টাকা) জমা দিয়েছেন এবং সেই টাকাটাই পিকনিকে খরচ করা হবে। এত বড় একটি দল নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। গাড়ী যোগাড় করা, বাজার-ঘাট, রান্না-বান্নার আয়োজন, নিরাপত্তা, টাকার হিসাব ইত্যাদি সুস্টভাবে করতে হলে এর জন্য লোক লাগবে। ওই দলের মধ্যে থেকেই কয়েকজনকে অনুরোধ করা হল সেচ্ছাসেবক হবার জন্য। সবাই সমান টাকা দিয়েছে এবং সমান মজা করার অধিকার সবারই আছে। যারা সেচ্ছা সেবক হবে তারা কাজ করেই কুল পাবে না, মজা করবে কোন সময়? কাজেই বিনামুল্যে এমন কাজ করতে বেশীরভার লোকই রাজী হয়না। তার পরেও, এমন অনেকে আছেন যারা নিজে একটু কস্ট সহ্য করে হলে মানুষকে খুশী দেখতে চান। এমন লোকেরাই যেচ্ছাসাবী হয়। সেচ্ছাসেবীদেরকে পাওয়ার পরে, কার কি দায়িত্ব সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। আনন্দ বিসর্জন দিয়ে, কাজ করেই সেচ্ছাসেবকেরা মুক্তি পায় না। অন্যরা তাদের ভুলত্রুটি খুজে বের করে বেশ দু-কথা শুনিয়েও দেয়। 

গনতান্ত্রিক রাস্ট্রের ব্যাবস্থাটাও কিছুটা এমন। সমাজে যেসব সেচ্ছাসেবকেরা বিনা পয়সায় জনসেবা সেবা করে, তাদেরকে আমরা নেতা বলে জানি। দেশের মালিকেরা (জনগন) ভোটের মাধ্যমে  সেরা সেচ্ছাসেবকদেরকে বাচাই করে, তারা একেকজন একেটা দায়িত্ব পায়। এমন দায়িত্ব প্রাপ্তদেরকে, ছোট-বড় বিভিন্ন পদে বসানো হয়। এরা সবাই দেশের কর্মচারী। কেউ ডাইরেকটর, কেউ ম্যানেজার, কেউ একাউন্টেন্ট ইত্যাদি। দেশের কর্মচারীদের যে বিশাল দল থাকে, সেই দলের সর্বোচ্চ পদবীটি পান রাস্ট্রপতি। এর পরে আসে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মত্রীগন। যদিও সংসদীয় গনতন্ত্রে সর্বচ্চো ক্ষমতাধর পদটি প্রধানমন্ত্রীর। গনতন্ত্রের সবচেয়ে অসাধারন বিষয়টি হল - জবাবদিহিতা। ক্ষমতাধর নেতারা আসলে রাস্ট্রের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মচারী এবং তারা তাদের কাজের জন্য জনগনের কাছে জবাব দিতে বাধ্য।    

এতক্ষন যা বললাম, তা হল গনতন্ত্রের সঠিক রূপ। আমাদের দেশ তো দুরের কথা, সার্কভুক্ত কোন দেশেই এমন গণতন্ত্র নেই । আমাদের ভারত উপমহাদেশের অবস্থা তো আরো করুন। আমাদের এই দেশগুলোকে হাজার বছর ধরে রাজতন্ত্র ছিল। গনতন্ত্রের বয়স একশত বছরও হয়নি। আমাদের রক্তে এখনও সেই রাজতন্ত্র রয়ে গেছে। এর ফলেই, এই দেশগুলোতে পরিবারতন্ত্র খুব ভালো চলে। 

Comments

  1. ভাই আপনার আর্টিকেল পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকি। অনেক দিন পর একটি লেখা পোষ্ট করলেন তাও অসমাপ্ত মনে হচ্ছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
      আপনার মতন একজন শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হয়।
      আপনি যদি whatsapp, viber ইত্যাদি ব্যাবহার করেন, তাহলে নম্বরটা আমাকে myelitemail@gmail.com অথবা www.facebook.com/smelite পাঠিয়ে দিন।
      আপনার সাথে কথা বলতে পারলে খুব ভালো লাগতো।

      Delete

Post a Comment