অসামাজিক নাকি অযৌক্তিক


পত্রিকা ও টেলিভিশনে কয়েকটি ভাষা সচারচর বলা হয়। অমুক হোটেলে নারী পুরুষ, অসামাজিক কার্যকলাপের সময়, পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। অমুক ব্যাক্তিকে তমুক নারীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে। এসব মার্জিত ভাষা ব্যাবহার করে আসলে, "অবৈধ যৌন সম্পর্ক" বোঝানো হয়। এই শব্দগুলি ওই বিষয়টির সঙ্গে কতখানি যুক্তিযুক্ত, সেটা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন ?

প্রাপ্তবয়স্ক দুজন নারী-পুরুষ পরস্পরের সম্মতিতে যদি নির্জনে যৌনকর্ম করে, সেটা ধর্ম ও সমাজের কাছে অপরাধ হতে পারে। তবে, দেশে প্রচলিত আইনের কত ধারাতে এমন যৌনকর্ম  অপরাধ হিসাবে গন্য হয় ? এই ধরনের কোন আইন যদি আপনার জানা থাকে, দয়া করে আমাকে জানান ।

বিভিন্ন আবাসিক হোটেল থেকে এসব জোড়াকে পুলিশ ধরে। বিভিন্ন অংকের টাকা দিয়ে, অনেকে সেখানেই রক্ষা পায়। অনেককে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ লেখা হয় - অসামাজিক কার্যকলাপ। অভিযোগে কিন্তু "অবৈধ সম্পর্ক" কথাটি লেখা হয় না। লেখা হয়, "অসামাজিক কার্যকলাপ"।  অর্থাৎ, বিষয়টি হল - তাদের সম্পর্কটাকে দোষ দেওয়া হছে না, দোষ দেওয়া হচ্ছে তাদের সামাজ বহির্ভুত কার্যকলাপকে।

বিয়ে জিনিসটা আসলে ধর্ম, সমাজ অথবা রাস্ট্রের একটা অনুমোদন। অমুক নারী ও তমুক পুরুষ একত্রে থাকার ও তাদের মধ্যে যৌনতার অনুমোদন। এই অনুমদোন না থাকলেও যদি যৌন যম্পর্ক হয়ে যায়, তাহলে ধর্ম, সমাজ ও রাস্ট্রের আইন এই তিনটি জিনিসই অমান্য করা হয়। বাংলাদেশ যেহেতু ধর্মীয় আইনে চলে না, তাই কোন একটি ধর্মীয় বিধান অমান্য করলে, রাস্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারে না। ওদিকে,  অবৈধ যৌন সম্পর্কর ব্যাপারে সুস্পস্টভাবে কোন আইন দেশে প্রচলিত আছে কিনা, সেটা আপাতত খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারনেই, এমন অবৈধ সম্পর্কের জন্য একজনকে আটকানোর রাস্তা একটাই - সামাজিকতার অজুহাত।

দুজন নারী পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক সমাজ বহির্ভুত। চোখের সামনে এমন চলতে থাকলে, এসব দেখে তরুন ও যুব সমাজ বিপথে চলে যাবে, এ কারনেই এটাকে অসামাজিক বলে, এসব বন্ধ করার চেস্টা করা হয়।  এবার  ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, দুজনের গোপনে মিলন কতজন দেখে?  কেউই দেখে না। যে জিনিসটি সমাজের কেউই দেখে না, সেই জিনিস সমাজের লাভ ক্ষতি করে কিভাবে ? গভীর রাতে হোটেলে হানা দিয়ে এক জোড়া নারী-পুরুষকে ধরে  সেটার নাম দেওয়া হল, অসামাজিক কার্যকলাপ। আরে ভাই, অসামাজিক তো তারা, যারা গভীর রাতে গিয়ে তাদের বিরক্ত করছে। ওই যুগল তো সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আড়ালে সবকিছু করছে। এসব প্রকাশ করেই তো জিনিসটা অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে। ওই যুগলের অসামাজিক হবার ইচ্ছে থাকলে, ওরা সবাইকে দেখিয়ে অনেক কিছু করতো।

প্রকাশ্য দিবালোকে পার্কে ঘনিস্ট হবার ঘটনাগুলিকে অসামাজিক নাম দেওয়া যেতে পারে। কারন এই দৃশ্য সমাজের অনেকে দেখে এবং এতে সমাজের লাভ-ক্ষতি আছে। কিন্তু একটি যুগল গোপনে যাই করুক না কেন, সমাজের কেউ সেটা দেখে না, কেউ সেটা জানে না। সমাজ যে জিনিসটি দেখে না বা জানে না, সেটা সামাজিক অথবা অসামাজিক হবার কোন যুক্তি নেই।

একই ধরনের ঘটনাতে অরেকটি কথা শোনা যায়, "আপত্তিকর অবস্থা"। ওমুক নারীকে তমুক পুরুষের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়,, আপত্তিটি কার ? ঐ যুগল তো দিব্যি উভয়ের সম্মতিতে, যেটা করার সেটা করছে। মাঝখানে বিরক্ত করতে লোকজন এসে হাজির। আপত্তিটা তাদেরই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আপত্তির কারন থাকে - এমন সৌভাগ্য আমার কেন হয় না?

এই লেখাটা পড়ে, আপনার হয়ত মনে হতে পারে, আমি যেনা ব্যাভিচার সমর্থন করছি। বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। এই বিষয়ে আমার সমস্যাটা হল - আমাদের দ্বিমুখি মনোভাব, আমাদের কপটতা। সহজ ভাষায় এটাকে ভন্ডামী বলে।  প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া অপরাধ, কিন্তু প্রকাশ্য ঘুষ খাওয়া অপরাধ নয়। পাঠ্যবইতে শেখাচ্ছি, পরস্পরের সম্মতিতে অনুভুতি প্রকাশে দোষ নেই। আবার সেই অনুভুতি প্রকাশ করতে গেলে সেটাকে অসামাজিক বলছি। নারী-পুরুষ একান্ত মিলনের বিরূদ্ধে সুস্পস্ট তেমন কোন আইন নেই, ওদিকে সেটা করতে গেলে আইনী ঝামেলাতে পড়তে হচ্ছে। আমরা শেখাচ্ছি এক, দেখাচ্ছি আরেক আর করছি আরেক।

এসবের সহজ সমাধান একটি। অবৈধ যৌনতা বিষয়ে সুস্পস্ট আইন প্রনয়ন করা এবং এর কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।

Comments

  1. আপনি লেখালেখি খুব কমিয়ে দিয়েছেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
      লেখালেখি আগের থেকে কমেছে।
      এখন অধিকাংশ সময়ে ইংরেজীতে লেখি
      এখানে দেখুনঃ
      https://smelite.wordpress.com


      -

      Delete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. উচিত কথা বলেছেন, ভাল লাগল।

    ReplyDelete

Post a Comment