যার হুজুর তার কাছে


মুসলিম জতির একটি ব্যার্থতা হল, তাদের মঝে একতা নেই । আমাদের বাঙ্গালী জাতি তো একতা জিনিসটাতে আরো দুর্বল। বাঙ্গালী মুসলমানের একতা  একবারেই নেই । চারিদিকে শুধু ভাঙ্গনের সুর। আমাদের সমাজে ওয়াজ জিনিসটা যুগ যুগ  ধরে চলে আসছে। ওয়াজ আসলে  ধর্মীয় বক্তব্য ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু কালে কালে এই ধর্মীয় বক্তব্য কিছুটা রাস্তার পাশে মলম বিক্রয় করার বিজ্ঞাপনের মতন নীম্নমানের হয়ে যাচ্ছে।

হ্যা ভাই,, আসেন আমাদের কাছে । গ্যারান্টি, এই মলম একবার মাখবেন, আর কখনো চুলকানি হবে না। কিছু কিছু (সকল নয়) ওয়াজে তো বক্তারা প্রায় এভাবেই গ্যারান্টি সহকারে জান্নাতে নিয়ে যাবার দাবী করেন।  একসাথে জিকির করতে গিয়ে লাফালাফি এমনকি নাচানাচি পর্যন্ত হয়ে থাকে।  এমন চটকদার কথা ও বিজ্ঞাপন মার্কা বক্তব্য শুনে ও দেখে আমারা এমন অভ্যস্ত যে, গঠনমুলক ধর্মীয় আলোচনা (সঠিক ওয়জ) মেনে নিতে পারি না। অসচতন বক্তার ভীড়ে যে গুটিকয়েক সচেতন বক্তা রয়েছেন, তাদের বিরোধীর অভাব নেই।   স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া বক্তারা নিজের ব্যাবসা টেকানোর জন্য বিরোধীতা করেন। আর জনগন বিরোধীতা করে অভ্যাসবসত, না বুঝে। 

শুরু থেকেই, মাদ্রাসা বা মসজিদ কেন্দ্রিক মানুষগুলোর প্রতি সমাজের একটু ভুল ধারনা রয়েছে। এই মানুষগুলোকে, দরিদ্র, দুর্বল, কম জ্ঞানী, সেকেলে মনে করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে তারা এমনই। কিন্তু ঢালাওভাবে সবাইকে এমন মনে করাটা আমাদের সমাজের ব্যার্থতা, আমাদের দুর্ভাগ্য। এমন সময় আমরা যখন  শিক্ষিত ও আধুনিক কোন বক্তাকে পাই, আমরা তাকে  ঠিক মেনে নিতে পারি না।

জাকির নায়েকের দোষ হল - উনি কেন টাই পরেন। ইসলাম ধর্মে পুরুষের পোষাকের শর্ত মাত্র দুটি। নাভীর উপর থেকে হাটুর নীচ পর্যন্ত অবশ্যই ঢাকা থাকতে হবে।  কাপড় পায়ের গোড়লীর নীচে যাবে না। দাড়ি গজানো বাধ্যতামুলক (ওয়াজিব) যদিও সেটা পোষাকের অংশ নয়।  গলায় রুমাল, মাফলার, টাই ,  যেটাই থাকুক না কেন, সেটা ইসলামের পোষাক শর্তের  বিরুদ্ধে যায় না।  আপনারা কি পোষাক চাইছেন ?  পাঞ্জাবী হল ভারতে পাঞ্জাব রাজ্যের পোষাক । জোব্বা, আলখেল্লা, ইত্যাদি হল আরবের (মরু অঞ্চলের) পোষাক ।  ইসলামীক লোকেরা ঢালোভাবে এই পোষাকগুলি পড়লেও, এগুলো ইসলামিক পোষাক নয়। যে কোন পোষাক, যেটা ইসলামের শর্ত পুরন করে, সেটাই ইসলামিক পোষাক।   

মিজানুর রহমানের দোষ, উনি কেন নামের শেষে "আজাহারী" যোগ করেছেন।  তিনি মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন।  এখানে প্রশ্ন হল, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাত্তন ছাত্ররা তো নিজের নামের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যোগ করে না। মিজানুর রহমান কেন সেটা করলেন? আল-আজহার হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয় (বয়স ১০৫০ বছর) । এর পরের পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্ভবত অক্সফোর্ড ইউনিভার্উসিটি (বয়স ৯২৪ বছর)। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যখন বানানো হয়েছে, তখন হয়ত আমাদের অঞ্চলের মানুষ থালায় ভাত খাওয়া শেখেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (বয়স ৯৯) এসবের কাছে শিশুর চেয়েও ক্ষুদ্র। বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন ও সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র, সেটা তো অবশ্যই বারবার বলতে হবে। সে কারনেই তিনি নামের সাথে "আজাহারী" কথাটা যোগ করেছেন।  যারা এসব জানেনা বা বোঝেনা, তারা তো বকবক করবেই।                 

কি পোষাক পড়ল, কি নাম রাখল, এসব না দেখে, আসুন আমরা দেখি...... সে কি কাজ করল। তিরিশ বছর ওয়াজ দিয়েও একজন বেনামাজীকে নামাজী বানাতে পারেন না। ওদিকে জাকির নায়েক ত্রিশ মিনিট বক্তব্য  দিয়ে (মাশাহ আল্লাহ) অমুসলিমকে মুসলমান বানান। মিজানুর রহমান গবেশনামুলক বক্তব্য প্রদান করেন। এই দুই বক্তাসহ আরো কিছু বক্তা যাদের মানুষ সমালোচনা করে, তারা গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে ইসলাম প্রচার করর চেস্টা করেন। আমরা তাদেরকে বুঝিনা, সেটা আমাদের দুর্বলতা আমাদের অজ্ঞতা। আর যারা বুঝেও বিরোধীতা করেন, সেটা তাদের শত্রুতা। আপনার সাথে একজনের মতের অমিল হতেই পারে, এজন্য তাকে গালি দেওয়া ও অতপর তাকে কাফের বলার অধিকার আপনার নেই।

এই অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় আছে আমাদের নতুন প্রজন্ম, আমাদের যুব সমাজের কাছে।  ১৯৮০-১৯৯০ দশকে বাংলাদেশে একটা ফ্যাশান শুরু হয়েছিল। সেটা হল - ব্যান্ড ( সঙ্গীত)। ৬০-৭০ দশকে, সঙ্গীত জিনিসটা ছিল অসহায়, দরিদ্র, ছন্নছাড়া ও পাগলাটে মানুষ্রর জন্য।  এর পরে ৮০-৯০ দশকে ব্যান্ড এমন এক ফ্যাশন হয়ে দাড়ালো যে, আলালের ঘরের দুলালেরা (ধনী বাবার ছেলে) বিভিন্ন ব্যন্ড বানাতে লাগলো। সঙ্গীত হটাত করেই শুরু করা যায় না। এর জন্য চাই অধ্যবসায় ও  অনুশীলন। এসব করেই সঙ্গীত শিল্পী হয়েছিল তখনকার নতুন প্রজন্ম। তাদের অনেকেই এখন বড় তারকা।  ২০১৩ সালে শাহবাগ সমাবেশ থেকে অরো  একটা ফ্যাশন শুরু হয়েছিল। সেটা হল, ব্লগ লেখা। নতুন প্রজন্ম, যুব সমাজ......... সবাই ব্লগার হতে লাগলো। আমি নিজেও, ওই সময়ে শুরু হওয়া ব্লগার।

বোঝা গেল, কাজটা কত মজাদার, কঠিন বা সহজ সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হল, ফ্যাশান। বড় কথা হল, একটা জোয়ার নিয়ে আসা। আমাদের নতুন প্রজন্ম, যুব সমাজ যদি ইসলাম চর্চার জোয়ার আনতে পারে, তাহলে সকল সমস্যা নিমেষেই সমাধান হয়ে যাবে  

Comments

  1. i need to talk to you about blog
    mail me- yeasirarafatpeam@gmail.com
    or - m.me/yeasirarafatpeam

    ReplyDelete

Post a Comment