কাবাঘরে পাখির তাওয়াফ - একটি ফাঁদ


অতিভক্ত ও অতি উতসাহি মুসলমানদের জন্যই এসব বোঝানোর ও ছড়ানোর সুযোগ পায় ইসলাম বিরোধীরা। ওরা সব সময়, এমন একটি বিষয় আমাদের সামনে এনে দেয়, আমরা এগুলো দেখে ও শুনে সুবহান আল্লাহ বলি, আমিন বলি আর অতি উতসাহে এগুলো প্রচার করি। ওরা সেটাই চায়। পরে এগুলো নিয়েই আমাদের সঙ্গে মজা করে, আমাদেরকে বোকা প্রমান করে । এভাবেই আমাদের ঈমানকে দুর্বল করে দেবার চেস্টা করে তারা। তাই ওদের ফাদে পা দিবেন না।

যেটা শোনা যাচ্ছে ঃ করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কয়েকদিন কাবাঘরের আশেপাশে জনগনের প্রবেশ বন্ধ ছিল। এ সময়ে আল্লাহর কুদরতে, পাখির ঝাক উড়ে এসে কাবাঘর তওয়াফ (প্রদক্ষিন) করেছে। (এই লেখার শেষে পাখির তাওয়াফের ভিডিও আছে)

আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও অসীম ক্ষমতার অধিকারি। তিনি কতখানি শক্তিমান ও তার কতখানি সন্মান, সেটা পরিমাপ করার ক্ষমতাই আমাদের নেই। আল্লাহর ক্ষমতা কোন আশ্চর্য জিনিসের মধ্যে দেখা যায় না। আল্লাহর ক্ষমতা দেখা যায় প্রতিদিন, প্রতিটি স্বাভাবিক বিষয়ে।

আপনি এক শহর থেকে আরেক শহরে গাড়ী চালিয়ে যেতে গেলে, মানচিত্র, জিপিএস, রাস্তার সাইনবোর্ড, মানুষের পরামর্শ, কতকিছু লাগে। ওদিকে পাখির ঝাক, দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, মহাসাগর পাড়ি দিয়ে উড়ে যায়। আবার ঠিকই পথ চিনে ফিরে যায়। শীতের সময়, ঠান্ডা দেশের পাখীরা গরম দেশে যায় আবার শীত ফুরোলে ফিরে যায়। ওরা ক্যালেন্ডার ছাড়া, আবহাওয়া অফিসের খবর ছাড়াই  শীত ওদের দেশের শীত শেষ হয়েছে এটা বুঝে সঠিক সময় ফিরে যায়। ফেরে যেতে ওদের মানচিত্র, জিপিএস কিছুই লাগে না।

অংক, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি কিছুই জানে না, হাতও নেই। তার পরেও বাবুই পাখি শুধু ঠোট দিয়ে কত সুন্দর বাসা বানায়। বাবুই পাখির বাসাকে এপার্ট্মেন্ট বলা চলে। এর ভেতরে কয়েকটি ঘর থাকে। একটাতে বসে জানালে দিয়ে মুখ বাড়িয়ে রাখে (ড্রয়িং রুম)। আরেকটা ঘরে ঘুমায় (বেড্রুম)। আবার বাথরুম করার জন্য, বাবুই পাখির বাসার নিচে ছিদ্র আছে। বেড্রুমে, জোনাকী পোকা গুজে রাখে, আলোকসজ্জার জন্য। মুলত পুরুষ বাবুই পাখি ওই বাসা বানায়, মাঝে মাঝে স্ত্রী পাখি তাকে এই কাজে সাহায্য করে।  ঊদ্দেশ্য একটাই, একটি পছন্দনীয় বাসাতে দুজন সুখে শান্তিতে বাস করবে।

মৌমাছি, অংক, জ্যামিতি কিছুই জানে না, তার পরেও প্রতিটি সমান সাইজের প্রকোষ্ঠ থাকে এমন মৌচাক বানায়। মৌমাছিদের একটি দল থাকে যারা ফুলের উতস সন্ধান করে। এর পরে ফিরে এসে মধু সংগ্রহ করে এমন মৌমাছির দলকে সেই ঠিকানা বলে দেয়। কথা বলতে পারে না, ঠিকানা বলে কিভাবে?  ওরা দল বেধে এক ধরনের নৃত্য করে যেখানে ওরা বুঝিয়ে দেয়, ফুলের উতসটি সুর্য থেকে কত ডিগ্রি কোনে অবস্থিত। ওরা সেই কোনে মেপেই মধু সংগ্রহ করতে বের হয়। পিপড়ে সহ অনেক কীট পতঙ্গ অনেক দূরে গিয়েও তার ঘরে ফিরে আসে চন্দ্র সুর্য ও তারার অবস্থান দেখে পথ চিনে।

এতক্ষন যা বললাম, সেটা প্রত্যেকদিন, আপনার চোখের সামনে ঘটে। এসব আল্লাহর ক্ষমতা। এগুলো দেখে আপনি অবাক হন না। ওদিকে আপনি অবাক হন - কাবা ঘরের চারিপাশে কিছু পাখি উড়লে।  আপনার এই অযৌক্তিক অবাক হওয়ার ফায়দা লুটে ওরা। এভাবেই ওরা আপনাকে বোকা বানায়। 

কাবা ঘরের চারিদিকে যে মসজিদ আছে, তাতে লক্ষাধিক মানুষ একত্র নামাজ পড়তে পারে। দিন রাত সব সময়ে, কয়েক হাজার মানুষ কাবা ঘরের আশে পাশে থাকে। কাবা ঘরের চারপাশের মসজিদটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এত বড় দালানের আনাচে কানাচে কয়েক হাজার পাখি স্থায়িভাবে বাস করে। এসব পাখিরা কাবা ঘরের আশেপাশে সবসময় হাজার মানুষ দেখেতে পায়।  ওই কয়দিন কাবাঘর জনশূন্য ছিল, এ কারনেই পাখিরা নির্ভয়ে, মুক্তভাবে উড়ে বেড়িয়েছে।

আল্লাহর ক্ষমতা ও কুদরত প্রতিদিন, প্রতিটি মুহুর্তে,  স্বাভাবিক বিষয়ে দেখা যায়। কেউ যদি কোন নতুন বা অস্বাভাবিক বিষয় দেখিয়ে সেটাকে আল্লাহর কুদরত বলে - সেখান থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকুন। ঈমান রক্ষা করুন। 

  <পাখির তাওয়াফের সেই ভিডিও দেখুন> 




Comments