খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশযাত্রা


বিষয়টি পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রস্তাব দিয়েছে এবং সেটা এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রস্তাবটি হল - এক হাজার সরকারী কর্মকর্তা খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশে যাবে। এই সংবাদের পরে, যথারীতি শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনা। 

এই খিচুড়ি জিনিসটা বিশ্বের কতগুলি দেশ চেনে, কতগুলো দেশ খায়, আর এই ট্রেনিং কোন দেশ থেকে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রকল্পের প্রস্তাবকারী বলেছেন, তিনি ভারতের স্কুলে খিচুড়ি রান্না ও বিতরণ জিনিসটা দেখেছেন। হতে পারে, সেখান থেকেই তিনি এই আইডিয়া পেয়েছেন। 

আসলে, বিদেশে গেলে খরচটা অনেক কম হবে। প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। একই প্রকল্প দেশে করলে, এর দশগুণ খরচ হতো। এক কেজি ডালের মূল্য ধরা হতো ১০ হাজার টাকা, চালের কেজি ৭ হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্নভাবে নেতাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে টাকা পৌছে যেতো। একটুও বাড়িয়ে বলছি না। এর আগে, সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকল্পে, একটি বালিশ চার তলায় ওঠাতে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৬০ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি নারিকেল গাছ কেনা হয়েছে। আড়াই কোটি টাকা টিনের ঝুপড়ি কেনা হয়েছে।  এমন অবস্থায় ৭-১০ হাজার টাকায় চাল-ডাল এর কেজি হতেই পারে। এজন্য, বিদেশে ট্রেনিং হলে, খরচ অনেক কম হয়।

এই ট্রেনিং ভারতে হলে, এর অনেক সুবিধা রয়েছে 

১। ইউরোপ আমেরিকার মতন সবকিছু ডলার বা পাউন্ডে কিনতে হবে না। 
২। ট্রেনিং এ  গিয়ে ওই দেশে হারিয়ে যাবার (থেকে  যাবার) ভয় নেই/।
৩। অসুস্থ হয়ে পড়লে কম খরচে চিকিত্সা করতে পারবে 
৪।  অনেকে এই সুযোগে পুরাতন কোন জটিল রোগের চিকিতসা করাতে পারবে
৫। কেউ দেখে ফেলার ভয় ছাড়াই কলিকাতা বা মাদ্রাজ হারবাল ইত্যাদির প্রধান কার্যালয়ে যাওয়া যাবে।
৬।  মাঝে মাঝে বার-বি-কিউ ও বুফের খরচ বাচিয়ে, খিচুড়ী দিয়েই লাঞ্চ-ডিনার সারা যাবে । 
৭।  বিনামূল্যে ভারতীয়দের কাছ থেকে অর্থ সাশ্রয় ও দেশপ্রেমের শিক্ষা নিতে পারবে
৮। ভারত যে বাংলাদেশের বন্ধু রাস্ট্র, সেটা আবার প্রমানিত হবে।
৯। উন্নয়নের জোয়ারে দেশের মানুষ খিচুড়ি রান্না ভুলে গেছে, এটা প্রমানিত হবে। 
১০। অনেকে আবার এর মধ্যে নতুন একটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন খুজে পাবে। 

এত সুবিধাজনক প্রজেক্ট এর সমালোচনা হবে কেন? আশা করব দায়ীত্বশীলেরা অতি দ্রুত এই প্রজেক্ট এর অনুমোদন দিবেন এবং শিঘ্রই এর বাস্তবান শুরু হবে। কম খরচে বিভিন্ন প্রজেক্ট সফল করার জন্য বিদেশ যাত্রার কোন বিকল্প নেই। সেটা ভারতে হলে তো আরো ভালো। এই উদাহরন কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে এমন ধরনের আরো অনেক প্রজেক্ট এর আইডিয়া আসতে পারে। যেমন, চা বানানো শিখতে, পানি গরম করা শিখতে, মই বেয়ে ওঠা নামা শিখতে, হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা শিখতে, আমরা দলে দলে সরকারী কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠাতে পারি। 

আয়োজন বা ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তাদের কাছে অধমের বিনীত নিবেদন - আগেকার দিনে, কেউ বিদেশে ডক্টরেট করতে গেলে পত্রিকায় যেমন ছবি ছাপা হতো, ঠিক তেমন একটি ব্যবস্থা করা হোক। পত্রিকায় ছবিসহ নাম আসবে আর লেখা থাকবে- খিচুড়ি শিক্ষার্থে বিদেশ গমন। 
   

Comments