প্রধানমন্ত্রীর বেঈমান ভক্তরা


রিজেন্ট হাসপাতালের শাহেদের কথা মনে আছে? সে ১৫ হাজার মানুষকে পরীক্ষা না করেই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিয়েছিল। সে বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতাদের সাথে ছবি তুলে বেড়াতো। এসব ছবি দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা করতে পারতো। সেসব ছবি মিডিয়াতে এসেছে। নেতাদের সাথে শাহেদের সেই ছবি দেখে, কেউ কি কোনদিন সেই মিডিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছে? কেউ কি বলেছে - অমুক মিডীয়া রাজাকার? কেউ কি বলেছে - তমুক মিডিয়া বিএনপি-জামায়াত পন্থী? সবাই শাহেদের বিচার চেয়েছে। কেউ কেউ আবার নেতাদের সতর্ক করেছে - যার তার সাথে ছবি তুলবেন না। কিন্তু, কেউ সেই মিডীয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলেনি। 

একই ধরনের আরেকটি ঘটনা। কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী নিজেদেরকে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিস্ট লোক বলে দাবী করে। সেসব দাবী বিশ্বাসযোগ্য করতে, তাদের কাছে বিভিন্ন ছবিও আছে। এভাবেই তারা দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা করে আসছে। এদের দু-একজন মৃত্যুদন্ড থেকে ক্ষমা পাওয়া আসামী। এরা তো পরীক্ষিত খারাপ লোক। এরা মিথ্যা বলে ঠকাবে, এটাই স্বাভাবিক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর ঘনিস্ট লোক, এমন যে বলেনি, সেটাই ভাগ্য। আল-জাজিরা টেলিভিশন এই দুষ্কৃতিকারীদের দেখিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করেনি। তারা এই কয়েকজনকে দায়ী করেছে। এই কয়েকজন নিজেদেরকে "প্রধানমন্ত্রীর লোক" বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারনা করছে, সেটাই দেখিয়েছে আল-জাজিরা। 

এর পরেই শুরু হয়ে গেল খেলা। আল-জাজিরা রাজাকার, এটা বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র, মানহানীর মামলা করা হবে - এমন আরো কত কিছু। দেশে অন্তত ৮-১০ কোটি প্রধানমন্ত্রীর ভক্ত মানুষ আছে। 

এদের মধ্যে একটা মানুষও এই কথা বলল না - ওই কয়েকজন মানুষের কারনে প্রধানমন্ত্রীর বদনাম হচ্ছে, ওদেরকে সাজা দেওয়া হোক। 

কেউ এই কথা বলল না - আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশপ্রেমিক ও সৎ। কোনদিনও দুষ্কৃতিকারীদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর কোন সম্পর্ক নেই। ওই কয়েকজন মিথ্যা বলে মানুষকে প্রতারনা করছে। তারা মোটেই প্রধানমন্ত্রীর ঘনিস্ট লোক নয়। 

এসব কথা কেউ বলতে পারেনি। সবাই শুধু আল-জাজিরার পেছনে লেগে আছে। 

শাহেদের ঘটনা আর এই কয়েকজনের ঘটনা প্রায় একই রকমের। শাহেদ নেতাদের সাথে ঘনিস্টতার কথা বলে প্রতারনা করতো। এই লোকগুলিও প্রধানমন্ত্রীর সাথে ঘনিস্টতার কথা বলে প্রতারনা করছে। শাহেদের সময় কেউ মিডিয়াকে দোষারোপ করেনি। কিন্তু এই কয়েকজনের সময়, মিডিয়াকে কেন দোষারোপ করছে? একই ধরনের ঘটনাতে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া কেন?

কারন - প্রধানমন্ত্রীর এই ৮-১০ কোটি ভক্তরা প্রধানমন্ত্রীকে সম্পূর্ণ  নির্দোষ মনে করেনি। তারা কিছুটা সন্দেহে আছে। এই ভক্তরা প্রধানমন্ত্রীর উপর পুরোপুরি আস্থা রাখেনি। এ কারনেই, তারা আল-জাজিরার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সন্মান রক্ষা করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই অবিশ্বাসকারী ভক্তদেরকে - হিন্দি বা উর্দু ভাষায়, বেঈমান বলে। তারা, বেঈমান ভক্ত।  ঈমান মানে বিশ্বাস, বেঈমান মানে - অবিশ্বাসী। 

আরো একটি ছোট কারন আছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনের নামটি "প্রধানমন্ত্রীর লোক"। এই নাম শুনে মনে হয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কিছু বলা হয়েছে। আসলে সেই প্রতিবেদনে এমন কয়েকজন লোকের কথা বলা হয়েছে, যারা নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর লোক দাবি করে, প্রতারনা করে। প্রতিবেদনটি ঐ কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী বিষয়ক, প্রধানমন্ত্রী বিষয়ক না।  ইংরেজীর নাম শুনলেই ভয় পাওয় জাতি আমরা। তাই আল-জাজিরার ইংরেজী মুল প্রতিবেদনটি না দেখে, বিভিন্ন বাংলা চ্যানেলে, উদ্দেশ্যমুলক ব্যাখ্যা দেখেছে। এসব দেখেই মানুষ ভুল বুঝেছে। 

আমার এই লেখার শিরোনামে "বেঈমান" কথাটি আছে বলেই আপনি লেখাটি পড়তে আগ্রহী হয়েছেন। ঠিক তেমনি,  আল-জাজিরা তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম "প্রধানমন্ত্রীর লোক" দিয়েছে, যাতে মানুষ আগ্রহ সহকারে সেটা দেখে। এটা প্রচারের এক কৌশল। নামটি অমন, কিন্তু সেই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছুই বলেনি।     

ঘটনাটা সেখানে থেমে গেলেও একটা সমাধান হতো। এখন আবার ভক্তরা আরেক ধরনের ঘটনা শুরু করেছে। আমাদের দেশপ্রেম তো ফেসবুকে উপচে পড়ে। অনেক ভক্ত নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে "আমি প্রধান-মন্ত্রীর লোক" এমন মনোগ্রাম লাগাচ্ছে, এমন দাবী করছে। তারা কেন এমন করছে, তার দুটি কারন আছে। 

১। কয়েকদিন আগে, প্রধানমন্ত্রীকে আবিশ্বাস করে যে পাপ করেছিল, সেটার অনুশোচনা করতে চাইছে।

২। লাখো কোটি প্রধানমন্ত্রীর লোকের ভীড়ে, কে যে দুষ্কৃতিকারী সেটা যেন আর না চেনা যায়।

আপনার দল আর মত যাই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী হলেন দেশের সবার অভিভাবক। সন্তানের অন্যায়ের জন্য নির্দোষ বাবা-মাকে কথা শুনতে হয়। ঠিক তেমনি, দেশের কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর দোষের জন্য, প্রধানমন্ত্রীর সন্মান হানী হয়। এটা ঠেকাতে গেলে সেই দুষ্কৃতিকারীদের থামাতে হবে। যারা (মিডিয়া) এসব দুষ্কৃতিকারীদের খুজে বের করে, তাদেরকে অযথা গালাগালি করে লাভ নেই। দুষ্কৃতিকারীদের থামান। 

Comments