পাবজীর পেছনের বাপ-জী

 

বয়স্ক মানুষ  কম্পিউটার বা মোবাইল ইত্যাদি একটু কম বোঝে। আমার বাবার, গত বছর আমাকে  জিজ্ঞেস করেছেন - এপস (apps) জিনিসটা কি? উত্তর দিলাম - এপস হল সফটওয়ার।  জিনিসটার আসল নাম  application,সংক্ষেপে apps বলে। হটাত, আমার বাবার কেন এপস জিনিসটা জানার দরকার হল? কারন তিনি এই এপস নামটা বারবার শুনেছেন। গত বছর, ভারতের  কোন বড় সরকারী সংস্থা, ক্ষতিকারক চাইনিজ এপস বের করেছে।  এই এপসগুলি নাকি ভারতের কত বড় ক্ষতি করছে।  শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত,  তারা সেগুলো বন্ধ করে দেবার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিলো।

এপস কিভাবে ক্ষতি করে, সেসব জটিল আলোচনার ভেতরে গেলাম না। সহজভাবে যেটা বোঝা যায়, সেটা হল - এত বড় ক্ষতিকারক জিনিসগুলি তারা এতদিন চালিয়েছে কেন? তাছাড়া এর ক্ষতির ব্যাপারটি এত দিন পরে বুঝলো কেন? ক্ষতির ব্যাপারটা এখন না বুঝতে পারলে ভারতের কি অবস্থা হতো?

এমন ক্ষতিকারক এপসের একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আলোচিত হয়েছিল  Tik-Tok। তরুন-তরুনী Tik-Tok এ ভিডিও বানাতো। ক্ষতি ঠেকাতে ভারত Tik-Tok বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কতখানি ক্ষতি থেকেয়াতে পেরেছে, সেটা জানিনা তবে একটা পরিবর্তন আবশ্যই হয়েছে। সেটা হল - আগে যারা Tik-Tok এ ভিডিও প্রকাশ করতো, তারা এখন ইউ-টিউব বা ফেসবুকে সেই একই ভিডিও প্রকাশ করে। 

এসব জিনিসের পেছনে ঘটনা একটিই। সেটা হল ব্যাবসা। Tik-Tok একটি চীনা কোম্পানি। ভারতের সাথে চীনের রেষারেষি চলছে। চীনের একটি কোম্পানি, ভারতের তরুণ প্রজন্মের কারনে, কোটি ডলার আয় করবে, সেটা হতে দেওয় যায় না। তাছাড়া, ভারতের নিজস্ব কোম্পানীগুলিও ব্যাবসা করতে চায়। এই কারনেই, Tik-Tok কে বলা হয়েছে ক্ষতিকারক। Tik-Tok বন্ধ হলে, চীন কোটি ডলার থেকে বঞ্চিত হবে, আর ভারতের কোম্পানীগুলো ব্যাবসার সুযোগ পাবে।  

এই একই কারনে, ভারত প্রথমে চাইনিজ wechat বন্ধ করে ভারতীয় Hike চালু করেছে। এখন আবার PUBG (পাবজি) এর পেছনে লেগেছে। যাদিও PUBG চীনের নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার। ভারতের মতন দেশের জন্য এই জিনিসটা ঠিক আছে। তারা  নিজেরা এমন প্রযুক্তি ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম, আর সেই কারনে অন্যকে ব্যাবসা করতে দিতে চায় না। ওদিকে বাংলাদেশ আমরা বিদেশী কোম্পানীকে আবাধে ব্যাবসা করতে দেই, এবং সেসব প্রযুক্তি বা ব্যাবসা করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। তার পরেও আমরা না বুঝে, ভারতের সাথে একই তালে নাচি। ভারতে  বলে Tik-Tok ক্ষতিকর, আমরাও বলেছি  ক্ষতিকর। ভারত বাপজির কথামতন, আমরা পাবজি কে ক্ষতিকর বলছি। 

PUBG (PlayerUnknown's Battlegrounds) একটি অনলাইন গেম। আপনি হয়তো অনলাইন chatting করেছেন। Chatting হল আড্ডা দেওয়া। যে যেখানেই থাকুক না কেন,  ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে আড্ডা দেওয়া যায়।  বিশ্বের অন্য প্রান্তের আচেনা মানুষের সাথেও আড্ডা দেওয়া যায়।  PUBG হল তেমন গেম। বিশ্বের অপর প্রান্তের অচেনা মানুষের সঙ্গে এই গেম খেলা যায়। 

আমাদের জন্য এই গেমের ক্ষতিকারক দিকটি হল - আসক্তি। তরুন প্রজন্ম এই গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে, তাদের লেখাপড়াকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। সেই কারনে, এই গেমটি বন্ধ করে দেবার পরিকল্পনা চলছে। এই গেমটি বন্ধ করলে, একটি গেম বন্ধ হবে, কিন্তু খেলোয়াড় বন্ধ হবে না। তারা অন্য গেম খেলবে। 

এই PUBG এর মতন আরো গেম আছে। নীচে কয়েকটি উদাহরন দেওয়া হল।  

  • Call of Duty
  • Garena Free Fire
  • Modern Strike Online
  • ScarFall
  • Free Survival

একটি গেম বন্ধ করটা, একটি খেলার মাঠ বন্ধ করার মতন। খেলোয়াড় ঠিকই আরেকটি মাঠ খুজে নিয়ে খেলা চলিয়ে যাবে। তাই PUBG বন্ধ করলে, তারা অন্য খেলা খেলবে। এসব খেলোয়াড়দের আসক্তি PUBG তে নয়। তাদের আসক্তি হল এই ধরনের অনলাইন গেমের প্রতি। 

তাহলে, তরুন প্রজন্মকে এই আসক্তি থেকে রক্ষা করার উপায় কি? উপায় একটাই - অনলাইনে গঠনমুলক কোন কিছু করার পদ্ধতি চালু করতে হবে। বিশ্বে কোন বিষয়ের উপরে সবচেয়ে বেশী ওয়েব-সাইট আছে, সেটা জানেন? বিশ্বে সবচেয়ে বেশী সংখক ওয়েব-সাইট হল - পর্ণ ওয়েবসাইট। মাত্র ১০ বছর আগেই,   সবচেয়ে বেশী ভিঊ হতো পর্ণ ওয়েবসাইট। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ভিউ পর্ণ কে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ, ফেসবুক, টুইটার, ইউ-টিউব, এমন মাত্র কয়েকটা কোম্পানী, মানুষকে পর্ণ থেকে সরিয়ে সামাজিক যোগাযোগের ভেতরে এনে দিয়েছে। আমরা এত বড় একটি কাজ করতে না পারলেও, অনলাইন গেমের আসক্তি কমিয়ে দিতে পারি। 

অনলাইনে, স্কুল, অফিস, ইত্যাদি সবই হচ্ছে। আমরা তরুন প্রজন্মের জন্য, অনলাইনে গঠনমুলক ও শিক্ষনীয় কোন বিষয় এনে দিতে পারি।  ভারতীয় সিনেমার প্রতি আমাদের একটি আকর্ষণ আছে, কারন তেমন সিনেমা আমরা বানাতে পারি না। ভারতের সিনেমা বন্ধ করে এই আকর্ষণ কমানো যাবে না। ভারতে মতন সিনেমা বানাতে পারলে, আমাদের আকর্ষণ এমনিতেই কমে যাবে। 

ঠিক তেমনি PUBG বন্ধ করে অনলাইন গেমের আসক্তি কমানো যাবে না। অনলাইনে গঠনমূলক আকর্ষণী অন্য কোন জিনিস দিতে পারলে, গেমের আসক্তি এমনিতেই কমে যাবে। এর জন্য যতখানি দক্ষতা ও প্রযুক্তি দরকার, সেটুক আমাদের আছে। আমাদের কমতি হল প্রচারে। আমরা নতুন কোন অনলাইন মাধ্যম তৈরি করে, সেটার যদি যথাযত প্রচার করতে পারি, তাহলে তরুন প্রজন্ম তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। কোন বাবাজী আর পাবজী খেলবে না। 

Comments