পশ্চিমা সমাজে ইসলামের আদর্শ

এই বিষয়ে ২০১০ সালে, জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষনা হয়েছিল। গবেষনা করেছিলেন শেহেরাজাদে রেহমান ও হোসাইন আসকারী। গবেষনার বিষয় ছিল - কোন দেশ ইসলামিক জীবন ব্যাবস্থা বেশী অনুসরন করে।

দুঃখের বিষয়, ইসলামিক দেশগুলি এ ব্যাপারে পিছিয়ে আছে। তারা ইসলামকে তাদের বেশভুষা ও আচার ব্যাবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে, ইসলামিক উপায়ে জীবন চালায় না। উদাহরন - তারা ইসলামিক পোষাক পরে, কিন্তু ইসলামিক অর্থনীতি অনুসরন করে না। তারা হালাল খাবার খোজে, কিন্তু হালাল রোজগার খোজে না। 

অপরদিকে, পশ্চিমা দেশগুলিতে ইসলামিক জীবন ব্যাবস্থা অনুসরন করে। ভুল বুঝবেন না, পশ্চিমা দেশগুলি ইসলাম অনুসরন করে না। তবে, তাদের নিজস্ব আদর্শ ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সকলেই সৎ রোজগার করে, আফিসে ঘুষ দেওয়া লাগে না, কেউ আরেকজনের সম্পদ আত্মসাদ করে না, পুলিশ হল সততার প্রতীক, ধনী গরীব একই ধরনের আধিকার পায়। জ্বী, না জেনেই পাশ্চিমা দেশগুলি ইসলামিক আদর্শ আনুসরন করে। ওই গবেষনায়, বিশ্বের সকল দেশকে ইসলামিক জীবনযাত্রা পালনের মানদণ্ডে ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে। ইসলামিক নিয়মকানুন অনুসরন করা দেশগুলির নাম তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে। সেই তালিকার প্রথম সারির দেশগুলি হল ......

  1. আয়ারল্যান্ড
  2. ডেনমার্ক
  3. লুক্সেমবার্গ 
  4. সুইডেন
  5. যুক্তরাজ্য
  6. নিউ-জিল্যান্ড
  7. সিঙ্গাপুর
  8. ফিনল্যান্ড
  9. নরওয়ে
  10. বেলজিয়াম           

লক্ষ্য করুন, যে দশটি দেশ সবচেয়ে বেশী ইসলামিক জীবনযাত্রা অনুসরন করে, তাদের সবগুলিই পশ্চিমা  দেশ। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশগুলির নাম রয়েছে প্রথম ১৫টির ভেতরে। এই  তালিকাতে প্রথম মুসলিম-প্রধান দেশ মালয়েশিয়া রয়েছে ৩৩ নম্বরে। অর্থাৎ, প্রথম ৩২টি দেশই অনিসলামিক, তবুও তারা ইসলামিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত। শুধু তাই নয়, এই তালিকাতে সৌদি আরব রয়েছে ৯১ নম্বরে, আর চীন রয়েছে ৬২ নম্বরে। তার মানে, চীন সৌদি আরবের চেয়ে বেশী ইসলামিক জীবনযাত্রা আনুসরন করে। এই তালিকায়, ইন্দোনেশিয়া আছে ১০৭ নম্বরে, আর ভারত আছে ৯৭ নম্বরে। অর্থাৎ, সবচেয়ে বড় হিন্দু দেশটি সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশের চেয়ে বেশী ইসলামিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করে। আমাদের ৯০% মুসলিম জনসংখার বাংলাদেশ আছে ১৪১ নম্বরে। আমাদের সমাজে ১০০% হারাম ঘুষের টাকায় সংসার চলবে, ওদিকে সাবান ১০০% হালাল চাই। 

আবারও - ভুল বুঝবেন না। ইসলামিক সমাজ মানে চোরের হাত কেটে দেওয়া আর ব্যাভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করা নয়। ইসলামিক সমাজ হল, সাধারন একজন পুলিশ কনস্টবেল, দেশের প্রেসিডেন্টকে জরিমানা করতে পারে। ইসলামিক সমাজ হল, যেখানে দেশের প্রেসিডেন্ট কোন রকমের ভয় ছাড়াই রাস্তার জনগনের সাথে হাত মেলাতে পারে।  হ্যা, এমন ঘটনা পশ্চিমা দেশগুলিতে ঘটে। বিভিন্ন দেশের উপরে এই গবেষনা যে শতভাগ সঠিক, তেমন দাবী আমি করছি না। তবে পশ্চিমা দেশগুলির জীবনযাত্রা লক্ষ্য করলে, আপনি নিজেই এর সত্যতা দেখতে পাবেন। 

এতক্ষন অন্যের গবেষনার কথা বলেছি, এখন নিজের পর্যবেক্ষণের কথা বলছি...   

পশ্চিমা সমাজঃ অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহর। এক সন্ধ্যায় এক মাতালকে ফুটপাতের উপরে হাটতে দেখলাম। সেই মাতাল সামনে যাকে দেখছে, তাকেই গালি দিচ্ছে। ঘটনাক্রমে সেখানে একটি পুলিশের গাড়ি থামলো। পুলিশের গাড়িতে সবসময় একটি নারী ও একটি পুরুষ পুলিশ থাকে। নারী পুলিশ গাড়ি থেকে বের হতেই, মাতাল তাকে গালি দিল। গালিটি মেয়েদের জন্য খুবই অপমানজনক। অন্য সময় হলে, মেয়েটি হয়তো মাতালকে চড় দিতো। এখন সেটা পারছে না, কারন তার গায়ে পুলিশের পোষাক আছে। ডিউটিতে থাকা অবস্থায়, ব্যাক্তিগত রাগের কারনে জনগনকে ছোয়া যায় না। চোখের সামনে দুজন পুলিশ, মাতালের সামনে আসহায় হয়ে গেল। এর মধ্যে পুরুষ পুলিশটি বুদ্ধি করে, গাড়ির দরজা এমনভাবে খুলে দিল, যাতে মাতালের পথ বন্ধ হয়ে যায়। মাতাল তাল সামলাতে না পেরে, গাড়ির দরজায় গুতা খেয়ে কিছুটা ব্যাথা পেলো। গুতা খেয়ে, মাতাল রেগে গিয়ে পুলিশকে মারতে তেড়ে গেল। এবার আত্মরক্ষার আজুহাতে মাতালকে চেপে ধরে মাটিতে শুইয়ে রাখলো। এর পরে কি হয়েছিলে, সেটা আমি দেখিনি। তবে মাত্র দুটো জিনিস হতে পারে। তাকে ওভাবে কয়েক মিনিট ধরে রাখার পরে যদি শান্ত হয়, তাহলে ছেড়ে দিবে। যদি শান্ত না হয়, তবে পুলিশ স্টেশনে কয়েক ঘন্টা আটকে রেখে, শান্ত হবার পরে ছেড়ে দিবে। 

এই ঘটনাটা আপনাকে বলার কারন হল, পশ্চিমাদের আদর্শ দেখানো - ডিউটিতে থাকা পুলিশ, নিজের ব্যাক্তিগত রাগের কারনে, কাউকে ছুতে পারে না

ইসলামিক সমাজঃ সাহাবী আলী (রা) ছিলেন ইসলামের সেরা চার খালিফাদের একজন। তিনি সবচেয়ে বড় যোদ্ধা ছিলেন। একবার যুদ্ধের ময়দানে, একজন শত্রুকে মাটিতে ফেলে, তলোয়ার দিয়ে কোপ দিবেন... এমন মুহূর্তে সেই শত্রু তার মুখে থু-থু দিলো। আলী (রা) তখন থেমে গেলেন। এমন দৃশ্য দেখে সেই লোকটি আবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল - তুমি হটাত থেমে গেলে কেন? উত্তরে আলী (রা) বললেন - যখন তুমি থু দিয়েছো, তখন আমার খুব রাগ হয়েছে। মনে হয়েছিলো, তোমাকে আরো জোরে কোপ দেই। কিন্তু আমি সেটা করতে পারিনা। আমি ইসলামের জন্য যুদ্ধ করি, ব্যাক্তিগত রাগ থেকে আঘাত করতে পারি না।

এই ঘটনাটি আপনাকে বলার কারন হল, ইসলামের আদর্শ দেখানো - ডিউটিতে থাকা সেনা, ব্যাক্তিগত রাগের কারনে কাউকে ছুতে পারে না।           

 এখানে লক্ষ্যনীয়, এমন ইসলামিক আদর্শ, হাজার বছর আগে মুসলিমদের ভেতরে পাওয়া যেতো। এখন পশ্চিমারা এমন আদর্শ গ্রহন করেছে, আর মুসলমানেরা এসব থেকে অনেক দূরে থাকে। না জেনে, না বুঝেই, পশ্চিমা দেশগুলি ইসলামিক আদর্শ আনুযায়ী জীবন চালাচ্ছে। আর মুসলমানেরা শুধু বেশভুষা আর আবেগটাকে ধরে রেখেছে। 

ডাউনলোডঃ সেই গবেষনার রিপোর্ট (পিডিএফ ফাইল) 

Comments