আল্লাহ মানুষকে কি থেকে সৃষ্টি করেছেন?


 আল্লাহ কি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খোজার আগে, একটি বিষয় মনে করুন - "পাঠ্যবই কোন কাগজে ছাপা হয়েছে" এই প্রশ্নটি কোন পরীক্ষাতে থাকে না। দুনিয়াতে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। পরীক্ষাটা হলো, আমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলি কিনা। "মানুষকে কি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে", এই প্রশ্নটা আমাদের পরীক্ষার অংশ নয়। এটা জেনে, আমাদের ঈমান ও আমলের কোন উপকার হয় না।

মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে কোরআনে কি তথ্য আছে ……

  • মাটি থেকে সৃষ্টি (সুরা হিজর - ২৬ || সুরা রহমান - ১৪ || সুরা সাফফাত - ১১)
  • জমাট বাঁধা রক্ত থেকে সৃষ্টি (সুরা আলাক - ২)
  • (সকল জীব) পানি থেকে সৃষ্টি (সুরা নুর - ৪৫)

তিন ধরনের তথ্য দেখে ভুল বুঝবেন না। এই তিনটি তথ্যর সমন্বয় করার চেস্টা করবো , ইনশা-আল্লাহ্‌।

প্রথমে এটা চিন্তা করুন - আপনার মতন ৫+ ফুট লম্বা একজন মানুষ, মাত্র কয়েক ফোটা পানি (বীর্য) থেকে কিভাবে জন্ম হয়?

সবাই এমনই দেখে আসছে। বিশ্বের সবাই কয়েক ফোটা পানি থেকেই জন্ম নিয়েছে। প্রতিদিন মানুষ এভাবেই জন্মাচ্ছে। এমন কিভাবে হয়? সামান্য কয়েক ফোটা পানি থেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ কিভাবে জন্মে?

পাঁচ বছরের একটি বালক, তার মা কে গর্ভবতী অবস্থায় হাসপাতালে যেতে দেখে। পরে, সেই মহিলা হাসপাতাল থেকে একটি শিশু নিয়ে বাড়ি ফিরে। বালকটি বোঝে, হাসপাতালে বাচ্চা পাওয়া যায়। নারী কিভাবে গর্ভবতী হয়, কিভাবে বাচ্চা প্রসব করে, এসব তথ্য সেই বালকটি জানতে পারে না। কেউই তাকে সেসব তথ্য জানায় না। কারন, ওই বালকের এসব তথ্য বোঝার ক্ষমতা নেই। সে দেখেছে হাসপাতাল থেকে বাচ্চা আসে, তাই সে বুঝেছে, হাসপাতালে বাচ্চা পাওয়া যায়। আসলে বাচ্চা কিভাবে হয়, সেটা বোঝার ক্ষমতা ওই বালকের নেই।

আমাদের অবস্থাটাও ঠিক একই রকম। আমরা নারীকে গর্ভবতী হতে দেখি, কয়েক ফোটা পানি থেকে একটি রক্তপিন্ড, সেই রক্তপিন্ড থেকে একটি পরিপুর্ন শিশু জন্মাতে দেখি। আসলে রক্তপিন্ড থেকে কিভাবে একটি পুর্নাঙ্গ মানুষ জন্মে সেটা আমরা জানিও না বুঝিও না। সেটা বললেও আমরা বুঝবো না। আমাদের ওই বিষয় বোঝার ক্ষমতাই নেই।

মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়, কি দিয়ে তৈরি, এসব একমাত্র আল্লাহই জানেন। কিভাবে সৃষ্টি, কি দিয়ে সৃষ্টি, ইত্যাদি বোঝার ক্ষমতাই মানুষের নেই।

পাঁচ বছরের বালককে আমরা যেমন হাসপাতাল দেখাই, আল্লাহ তেমনই আমাদের বীর্য, শুক্রানু, ডিম্বানু, জমাট বাধা রক্ত, ইত্যাদি দেখান। আমরা অতটুকুই দেখি, অতটুকুই বুঝি।

শুধু মানুষ নয়, যে কোন প্রানী, যে কোন জীবন, সবই আল্লাহর আদেশে, আল্লাহর কুদরতে সৃষ্টি হয়। এর জন্য কোন উপাদান লাগে না। আল্লাহ ইচ্ছা করেন - তাতেই সেই জিনিসটা সৃষ্টি হয়ে যায়। সুবহান-আল্লাহ।

এবার কোরআনের তিনটি তথ্য সমন্বয় করি……

মাটিঃ আল্লাহ ইচ্ছা করলেন আর আদম সৃষ্টি হয়ে গেল। তেমন না করে, আল্লাহ প্রথমে মাটি দিয়ে আদম এর দেহ বানিয়ে, ফেরেশতাদের দেখিয়েছেন। পরে, সেই দেহে প্রান দিয়েছেন। মাটি দিয়ে একমাত্র আদম এর দেহ বানানো হয়েছিল। আপনাকে মাটি দিয়ে বানানো হয়নি।

জমাট বাধা রক্তঃ আপনাকে বানানো হয়েছে জমাট বাধা রক্ত থেকে। মায়ের পেটে জমাট বাধা রক্ত থেকে পুর্নাঙ্গ মানুষ তৈরি হয়। ঠিক যেমন, একটি বীজ থেকে পুর্নাঙ্গ গাছ তৈরি হয়।

পানিঃ মানুষের দেহের উপাদানের ৬০% ই পানি। অর্থাৎ, বলা যায়, মানুষের দেহ পানির তৈরি। বীজ থেকে উতপন্ন গাছে দেহ যেমন কাঠের তৈরি হয়েছে। ঠিক তেমনই, জমাট বাধা রক্ত থেকে উতপন্ন মানুষের দেহ পানির তৈরি হয়েছে।

  • বিষয়টি এক কথায় বললে - আল্লাহ প্রথম মানুষটির দেহ মাটি দিয়ে বানিয়ে দেখিয়েছিলেন। পরবর্তী সকল মানুষ তৈরির বীজ (মুল) হলো জমাট বাধা রক্ত। পুর্নাঙ্গ মানুষের দেহের উপাদান হলো পানি

এভাবে কোরআনের তিনটি তথ্য সমন্বয় হলো।

ছোট বীজ থেকে একটি বড় গাছ তৈরি হয়। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কিভাবে বীজ থেকে গাছ হয় সেটা জানি না। ঠিক তেমনই, আমরা জানি জমাট বাধা রক্ত থেকে মানুষ তৈরি হয়। কিন্তু কিভাবে হয় সেটা জানি না।

মানুষ আল্লাহর আদেশে, আল্লাহর কুদরতে তৈরি হয়েছে। মানুষ তৈরির পদ্ধতি, উপাদান, এসব একমাত্র আল্লাহই জানেন। সেটা আমাদের জানার ও বোঝার ক্ষমতার বাইরে।

দ্রস্টব্যঃ অনেকে ওই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করতে চাইবেন…… শুধু আদম মাটি থেকে সৃষ্টি, অন্য মানুষ মাটি থেকে সৃষ্টি নয়।

  • যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং কাদা মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন। (সুরা আস-সাজদাহ - ৭)

এখানে সুচনা (শুরু) বলা আছে। সুচনা, অর্থাৎ প্রথম মানুষ (আদম) মাটি থেকে শুরু হয়েছে।


Comments