ইসলামে গান-বাজনা হারাম কিভাবে?


কোন কিছুকে হালাল বা হারাম করার ক্ষমতা আছে আল্লাহর কাছে। একমাত্র আল্লাহর কাছে এই ক্ষমতা আছে। নবী-রাসুল কোন কিছু হারাম করতে পারে না। তারা আল্লাহর সিদ্ধান্ত/আদেশ আমাদেরকে জানাতে পারেন। হারাম করার ক্ষমতা আছে, একমাত্র আল্লাহর কাছে।

[সতর্কতাঃ আমি গান-বাজনাতে উৎসাহ দিচ্ছি না। তবে যেটা সঠিক, সেটা বলতে হবে]

কিছু কাজ আছে, যেটা সমাজের লোকজন মাঝে মাঝে করে, বা করতো। আল্লাহর আদেশে, রাসুল (স) সেই জিনিসগুলো হারাম ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন...

  • আলী আবু তালিব থেকে বর্নীত – খাইবরের যুদ্ধের দিন আল্লাহর রাসুল মুতা (অস্থায়ী) বিয়ে ও গাধার মাংশ খাওয়া নিষেধ করেন (Bukhari, Volume 5, Book 59, Number 527:)

সমাজে অল্প কিছু মানুষ গাধার মাংস খেতো, অস্থায়ী বিয়ে করতো। আল্লাহর আদেশে, রাসুল (সা) সেই কাজগুলো নিষেধ করেছিলেন। তবে, কিছু কাজ সমাজের সবাই ঢালাও ভাবে করতো। আল্লাহ, সেগুলো কোরআনে স্পষ্ট ভাবে হারাম করে দিয়েছেন।

  • মদ হারামঃ সুরা মায়েদা -৯০, সুরা মায়েদা -৯১
  • শুকরের মাংস হারামঃ সুরা বাকারা-১৭৩, সুরা মায়েদাহ - ৩, সুরা আনাআম - ১৪৫, সুরা নাহল - ১১৫
  • সুদ হারামঃ সুরা বাকারা - ২৭৫, ২৭৬, ২৭৮, সুরা ইমরান-১৩০, সুরা নিসা-১৬১,

আলহামদুলিল্লাহ্‌, কম্পিউটারের এই যুগে, সুইস টিপেই আয়াতগুলো বের করা যায়। "মদ" লিখে সার্চ করলে, সফটওয়্যার সেই মদের আয়াতগুলো দেখিয়ে দেয়। আপনিও এভাবে খুঁজে বের করতে পারেন।

কোনটা হারাম, সেটা আল্লাহ কোরআনে মধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। মদের কথা বলা আছে দুইবার। শুকরের মাংসের কথা ৪ বার। সুদের কথা বলা আছে ৫ বার। বোঝা যাচ্ছে, সবচেয়ে বড় হারাম হলো - সুদ।

এত বড় হারাম "গান-বাজনা" কোরআনে খুঁজে দেখুন। দেখুন, কোরআনে কতবার গান-বাজনা হারাম বলা আছে। আমি বিভিন্ন উৎস থেকে, কয়েকবার চেস্টা করে, "গান-বাজনা" কথাটা খুঁজে পাইনি। কোরআনে গান-বাজনা কথাটি নেই। আপনি নিজে খুঁজে দেখতে পারেন।

বোঝা গেলো, সুদ, মদ, শুকরের মাংস, ইত্যাদি যেমন হারাম ; গান-বাজনা তেমন স্পষ্ট হারাম নয়। কারন, গান-বাজনা তেমন গুরুত্বপুর্ন নিষিদ্ধ কাজ হলে, সেটা অবশ্যই কোরআনে লেখা থাকতো। অন্তত একবার লেখা থাকতো। গাধার মাংস ও অস্থায়ী বিয়ের কথা কোরআনে লেখা নেই, তবুও সেগুলো হাদিস থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে। আসুন, হাদিস থেকে গান নিষিদ্ধ হবার নির্দেশ দেখিঃ

  • “আমার উম্মাতের মাঝে এমন কিছু লোক আসবে যারা ব্যভিচার, পশম, মদ ও বাদ্য-যন্ত্রকে হালাল করে নিবে।” [সহীহ বুখারীঃ ৫৫৯০]
  • আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন। আর তাদের কিছুকে বানর ও শূকর বানিয়ে দিবেন। (ইবন মাজাহ ৪০২০)
  • অচিরেই শেষ যুগে দেখা দিবে ভূমি ধস, নিক্ষেপ ও বিকৃতি। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহ্’র রাসূল! তা কখন? তিনি বললেন, যখন বাদ্যযন্ত্র ও গায়ক-গায়িকারা বেশি হারে প্রকাশ পাবে। (ইবনু মাজাহ্ ২/১৩৫০)
  • এই উম্মতের জন্য ভূমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের আযাব রয়েছে। জনৈক মুসলিম ব্যক্তি তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কখন হবে তা? তিনি বললেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে এবং মদ্যপান দেখা দিবে। (তিরমিযী ২২১৫)
  • গায়িকা দাসী বিক্রি করবে না। এবং কিনবেও না। তাদের গান শিক্ষা দিবে না। এদের ব্যবসায়ে কোন কল্যাণ নাই। এদের মূল্য হারাম। (তিরমিযী ১২৮৫)

উপরে যে ৫টি হাদিস দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটিতেও গান-বাজনা সরাসরি নিষেধ বলা নেই। এই লিখাটির প্রথম দিকে, ওই "গাধার মাংস ও অস্থায়ী বিয়ে" হাদিসটি দেখুন, স্পষ্ট নিষেধ করা আছে। গান তেমন স্পষ্ট নিষেধ করা হয়নি। তবে, এই ৫টি হাদিস থেকে একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়, সেটা হলো - গান বাজনা একটি অকল্যাণকর জিনিস। রাসুল (স) অকল্যাণকর বলেছেন। এই কারনেই, একজন মুসলমান গান-বাজনা থেকে দূরে থাকবে।

ব্যায়াম, শরীর চর্চা, ইত্যাদির সাথে তামাক-সিগারেট যায় না। পর্দাশীল মহিলার জন্য, গভীর রাতে একা বাড়ী ফেরা বেমানান। ভালো ছাত্রর জন্য, স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখা মানায় না। ঠিক তেমনই - একজন মুসলিমের জন্য গান-বাজনা বেমানান।

ইসলামিক জীবনযাপন এর সাথে গান-বাজনা যায় না। রাসুল (স) বিভিন্নভাবে গান-বাজনার অকল্যান বর্ননা করেছেন। তাই আমরা অবশ্যই গান-বাজনা থেকে দুরে থাকবো। তবে, এই সত্যটা মানতে হবেঃ ইসলামে স্পস্টভাবে গান-বাজনা হারাম বলা নেই। বিষয়টা স্পষ্ট নয় বলেই, এই ব্যাপারে ইসলামিক পন্ডিতদের ভেতরে মতভেদ আছে

Comments