নামাজের সময় এলোমেলো চিন্তা দূর করার উপায়


সবাই জানে, নামাজের মধ্যে এলোমেলো চিন্তা করা নিষেধ। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই তেমন চিন্তা দুর করতে পারে না। ইনশা-আল্লাহ, আজকে আমরা খুবই সহজ পদ্ধতি শিখব।

প্রথমে, একজন মুসলমানকে তার নিজের স্ট্যাটাস বুঝতে হবে। অপরাধীরা যেমন কারাগারে বন্দী থাকে ; ঠিক তেমন, আল্লাহ আপনাকে দুনিয়াতে বন্দী করে রেখেছেন। কারাগারে যখন সাইরেন বাজে, তখন সকল বন্দীরা দৌড়ে এসে লাইনে দাড়িয়ে যায়। যে অবস্থায় থাকুক না কেন, সবকিছু বাদ দিয়ে, লাইনে দাঁড়ায়। মসজিদের আজান আপনার জন্য তেমন একট সাইরেন। সকল কাজ ফেলে, দৌড়ে গিয়ে নামাজে দাঁড়াবেন। মনে রাখবেন, দুনিয়াতে আপনি একজন কয়েদী (আসামী)। আজান হলেই মসজিদে গিয়ে নামাজে দাঁড়াবেন। এটাই আপনার স্ট্যাটাস।

আবার, নামাজে দাঁড়ানোটা আপনার জন্য - সরাসরি আল্লাহর সাথে যোগযোগ। রাসুল (স) বলেছেন, নামাজ মুসলমানদের জন্য মিরাজের মতন (আল্লাহ সাথে সাক্ষাৎ)। বিষয়টাকে আজকের যুগের ভিডিও কলের সাথে তুলনা করতে পারেন।  

বোঝা গেলো, নামাজ একদিকে কয়েদীর মতন লাইনে দাঁড়ানো ; আরেকদিকে ভিডিও কল (সরাসরি আল্লাহর সাথে যোগাযোগ)

যদি কখনো দেশের প্রেসিডেন্ট এর সাথে ভিডিও কল এর সৌভাগ্য হয়, তখন আপনি কতখানি সতর্ক থাকবেন? কোন জামা পরবেন, কিভাবে দাঁড়াবেন, কি কথা বলবেন, ইত্যদি বিভিন্ন সতর্কতা থাকবে। মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে ভিডিও কল (নামাজ) এর সময়, কতখানি সতর্ক থাকেন?

নামাজের গুরুত্ব ও মনোযোগ এর জন্য, এই দুটি বিষয় বোঝা খুবই জরুরী

  1. নামাজ হলো কারাগারের কয়েদির মতন লাইনে দাঁড়ানো।
  2. নামাজ হলো সরাসরি আল্লাহর সাথে ভিডিও কল

এবার নামাজের ভেতরে কার্যকলাপ দেখবো। রসুল (স) আমাদেরকে নামাজের নিয়ম কানুন শিখিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, সকল মুসলমান সেই নিয়ম কম-বেশি জানেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষ যেটা জানে না, আজকে সেটা বলবো।

আপনি লেখাপড়া শেষ করে, এখনো চাকরি পান নি। এখনো বিয়ে করতে পারছেন না। মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা কষ্টকর। বাবার অবসরের পরে, এখনো পেনশনের টাকা পায়নি। বিভিন্ন অফিসে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত। এমন অবস্থায় আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট এর সাথে ভিডিও কল এর সুযোগ পেলেন। সেই সুযোগে আপনি নিজের সমস্যার কথা বলে, প্রেসিডেন্ট এর কাছে সাহায্য চাইবেন। কেউই এমন সুযোগ হাতছাড়া করবে না।

সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে সরাসরি যোগযোগ, নামাজের মধ্যে এমন সুযোগ হাতছাড়া করেন কেন? সিজদায় তিনবার "সুবহানা রব্বিআল আলা" বলার পরে, বাংলায় বলুন - আল্লাহ, আমাকে চাকরি দিন। পরের বার সিজদায় তিনবার "সুবহানা রব্বিআল আলা" বলার পরে, বাংলায় বলুন - আল্লাহ আমার বাবার পেনশন এর টাকার ব্যবস্থা করে দিন। এভাবে নামাজের সকল সিজদার সময় নিজের প্রযোজনীয় একটি চাহিদা (দোয়া) নিজের ভাষায় যোগ করুন। 

রসুল (স) বলেছেন - তোমরা সিজ্দার সময় বেশি বেশি দোয়া করো।

নামাজের সময় শয়তান আপনার মনে এলোমেলো চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়। চাবি কোথায় রেখেছেন, দরজা বন্ধ কেন, ওই ঘরে ফ্যান চলে, মসজিদ থেকে জুতা চুরি হবে কিনা, ইত্যাদি আবোল তাবোল চিন্তা হয়। যতই চেষ্টা করেন, এসব চিন্তা বন্ধ করা যায না। 

এই ব্যপারে মানুষের সবচেয়ে বড় ভুল হলো - জোর করে চিন্তা বন্ধ করতে চায়।

জোর করে চিন্তা বন্ধ করবেন না। চিন্তা আসতে দিন। তবে, শয়তানের দেওয়া ফালতু চিন্তা নয়। আপনার নিজের প্রয়োজনীয় বিষয় চিন্তা করুন। নামাজে দাড়িয়ে প্রথম রাকাতে চিন্তা করুন - এবার সিজদার সময়, আল্লাহর কাছে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট চাইবো। দ্বিতীয় রাকাতে চিন্তা করুন - এবার সিজদার সময়, আল্লাহর কাছে বেতন বৃদ্ধি চাইবো। এভাবে প্রতিটি সিজদায় যে কোন একটি জিনিস চাইবেন। কি চাইবেন, সেটা নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় চিন্তা করে নিবেন। এভাবেই আবোল তাবোল চিন্তা থেকে দুরে থাকতে পারবেন। প্রয়োজনীয় চিন্তা করবেন।

কাজটি আরো ভালোভাবে করতে চাইলে, সুরার অর্থ জানুন।

  • নামাজে দাড়িয়ে আপনি সুরা হুমাজা এর ৭ নম্বর আয়াত পড়ছেন - আল্লাতি তাত্তালিউ আলাল আফইদা ( الَّتِیۡ تَطَّلِعُ عَلَی الۡاَفۡـِٕدَۃِ ؕ) অর্থ - যে (আগুন) হৃৎপিন্ড পর্যন্ত পর্যন্ত পৌঁছাব। এই লাইনের অর্থ বুঝলে "চাবি কোথায় রেখেছি" এমন চিন্তা আসবে না।
  • নামাজে আপনি সুরা ক্বরিয়াহ এর ৪ নম্বর আয়াত পড়ছেন। ইয়াওমা ইয়া কুনুন নাস উকাল ফারাসিল মাবসুস (یَوۡمَ یَکُوۡنُ النَّاسُ کَالۡفَرَاشِ الۡمَبۡثُوۡثِ) অর্থ - সেদিন (কেয়ামত) মানুষ পোকা মাকড়ের মতন ছুটাছুটি করবে। এই লাইনের অর্থ বুঝলে "মসজিদে জুতা চুরি হবে কিনা" এমন চিন্তা করতে পারবেন না।
  • নামাজে সুরা তাকাসুর এর ১ ও ২ নম্বর আয়াত পড়ছেন। আল হাকুমুত তাকাসুর ( اَلۡهٰکُمُ التَّکَاثُرُ) হাত্তাজুর তুবিল মাকবির ( حَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ ؕ ) অর্থ - কবরে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত, তোমরা সম্পদের প্রতিযোগীতায় ব্যাস্ত থাকো। এই লাইনের অর্থ বুঝলে "কত টাকা পকেটে নিয়ে বাজারে যাবো" এমন চিন্তা আসবে না।

এতক্ষন যা বলেছি, সেগুলো সহজে এক কথায় গুছিয়ে লিখলে এমন দাঁড়ায়ঃ নামাজ আপনার জন্য আল্লাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগের একটি সুযোগ। সেই সুযোগে, সিজদায় আল্লাহর কাছে সবকিছু চাইবেন। এই সুযোগে আপনার সব সমস্যা সমাধান করে ফেলবেন। নামাজে দাঁড়িয়ে, সিজদার আগে, সেই চাওয়ার বিষয়গুলো একটি একটি করে সাজাবেন। সম্ভব হলে, নামাজে যেসব সুরা পড়েন, সেগুলোর অর্থ জানবেন।

মনে রাখবেন, এলোমেলো চিন্তা বন্ধ করার চেস্টা করবেন না। আল্লাহর কাছে বিভিন্ন জিনিস চাওয়ার জন্য এত বেশী ব্যাস্ত থাকবেন যে, এলোমেলো চিন্তার সময়ই পাবেন না।

সতর্কতাঃ আল্লাহর রহমতে, বিশ্বের প্রায় সকল জাতির মানুষ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বিভিন্ন জাতির দোষ ত্রুটি দেখেছি। তবে, সুরা তাকাসুর এর ২ নম্বর আয়াত (কবরে যাবার আগ পর্যন্ত প্রতিযোগিতা) পড়ে মনে হয় - এই আয়াতে বাংলাদেশীদের কথা বলা হয়েছে। অন্য কোন জাতির মধ্যে আমি এমন প্রতিযোগিতা দেখিনি। আল্লাহ আমাদের দেশ ও জাতিকে হেদায়েত দান করুন। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।


Comments