পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করার সহজ উপায়


বাংলাদেশের মুসলমান নামাজের গুরুত্ব জানে ঠিকই, কিন্তু একটি কথা জানে না ; সেটা হলো - নামাজ না পড়লে মুসলমানের খাতা থেকে নাম কাটা যায়। নামাজ না পড়লে কাফের হয়ে যেতে হয়। এটা আমার কথা নয়। রাসুল (স) বলেছেন - কাফের ও মুসলমানের পার্থক্য হলো, নামাজ
আলহামদুলিল্লাহ্‌ ; বাংলাদেশে নামাজ পড়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ৫০ বছর আগে, কেবলমাত্র ৬০+ বয়সের মানুষ নামাজ পড়তো। ২০ বছর আগে, শুধুমাত্র ৪০+ বয়সের মানুষ নামাজ পড়তো। বর্তমানে ২০ (+/-) বয়সের তরুনেরা নামাজ পড়ে।

বাংলাদেশের মুসলমানেরা যদি এটা জানতো যে নামাজ না পড়ার কারনে সে কাফের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে তারা ঠিকই নামাজ পড়তো। এই বিষয়টি নিজে জানুন ; আশেপাশের সবাইকে জানান - নামাজ না পড়লে কাফের হয়ে যায়। নামাজের ব্যাপারে রাসুল (স) বলেছেনঃ

  • মানুষের ঈমান এবং শির্ক কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য সালাত ছেড়ে দেওয়া («بين الرجل وبين الشرك أو الكفر ترك الصلاة») সহীহ মুসলিম
  • আমাদের (মুসলমান) ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে যে পার্থক্য তা হলো সালাত। অতএব, যে সালাত ছেড়ে দিল সে কুফুরী করল («العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر») আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ।

নামাজের গুরুত্ব বোঝে, নিয়মিত নামাজ পড়ার ইচ্ছা আছে, তবু অনেক তরুন নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করতে পারছে না। এই লেখাটি সেই তরুনদের জন্য। নামাজ শুরু করার পেছনে দুটি বাধা আছে -

  1. সবসময় পোশাক পরিষ্কার রাখা লাগে। তরুনদের তো রাস্তার পাশে প্রস্রাব করে অভ্যাস। তারা তাদের পোশাক পরিষ্কার রাখতে পারে না।
  2. তরুনেরা সবসময় খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ভিডিও দেখা, চ্যাটিং করা, গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলা, ইত্যাদি গুরুত্বপুর্ন (!) কাজে ব্যাস্ত থাকে। তেমন ব্যাস্ততার মধ্য থেকে আধা ঘন্টা সময় বের করে নামাজ পড়াটা কস্টকর।

ইনশা-আল্লাহ ; একে একে এই দুটি সমস্যারই সমাধান করবোঃ

যখন আজান দিবে, তখন দৌড়ে গিয়ে নামাজ পড়ুন। আপনার ওই অপরিস্কার পোশাক নিয়েই নামাজ পড়ুন। আজকে এমন অপবিত্র পোশাকে নামাজ পড়ুন ; কালকে অপবিত্র পোশাকে নামাজ পড়ুন ; পরশু একই কাজ করুন। এভাবে কয়েকদিন অপবিত্র পোশাকে নামাজ পড়ার পরে, আপনার মনে এমন চিন্তা আসবে - "আমি অযথা নামাজ পড়ছি ; আমার তো নামাজ সঠিক হচ্ছে না"। এরপর আপনি নিজেই পোশাক পরিষ্কার রাখা শিখে যাবেন। আপনি নিজেই বুঝে ফেলবেন, নিজের পকেটে টিস্যু পেপারের প্যাকেট রাখলে নিজের পোশাক পরিষ্কার রাখা যায়।

  • লক্ষ্য করুন, ভবিষ্যতে কবে পোশাক পরিষ্কার রাখতে পারবেন, তারপর নামাজ শুরু করবেন ; এমন ভুল করবেন না। অপরিস্কার পোশাকে নামাজ শুরু করুন ; তারপর পোশাক পরিষ্কার রাখা শিখে ফেলবেন। অপরিস্কার পোশাকে শুরু না করলে, কখনোই নামাজ শুরু করতে পারবেন না। প্রথমে অপরিস্কার পোশাকেই নামাজ শুরু করুন।

২৪ ঘন্টায়, ফরজ নামাজ মাত্র ১৭ রাকাত। আপনি শুধুমাত্র ফরজ নামাজ পড়ুন। সুন্নত নামাজ পড়তে হবে না। আবারও বলছি - সুন্নত নামাজ পড়তে হবে না। দুই-চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে সর্বচ্চো ৫-১০ মিনিট সময় লাগে। ওই অল্প সময়ের মধ্যে নামাজ সেরে এসে, আবার আপনার কাজে যোগ দিন। এই "কাজে যোগ দেওয়া" কথাটি হয়তো বুঝতে পারেন নি। আপনি বন্ধুদের সাথে তাস খেলছেন। নামাজের সময় হলে, ৫-১০ মিনিটে নামাজ পড়ে এসে, আবার তাস খেলা শুরু করুন। আপনি বাস্ট্যান্ডে বসে, বন্ধুদের সাথে কলেজগামী মেয়েদের দেখছেন আর নিজেরা বলাবলি করছেন, কোন মেয়েটির চোখ সুন্দর, কোন মেয়েটির ঠোঁট সুন্দর। নামাজের সময় হলে, ৫-১০ মিনিটে নামাজ পড়ে এসে, আবার কলেজগামী মেয়ে দেখা শুরু করুন। এভাবে আপনার দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজের ফাঁকে নামাজ পড়ুন।

  • লক্ষ্য করুন, কয়েক মাস এমন নামাজ পড়ার পরে, আপনি বুঝবেন আপনার মতন একজন ঈমানদার মানুষের জন্য, তাস খেলা আর কলেজগামী মেয়েদের দেখাটা শোভা পায় না। তখন ধীরে ধীরে এমনিতেই ওসব বদঅভ্যাস ত্যাগ করতে পারবেন। সেই সাথে আপনি ধীরে ধীরে ফরজের সাথে সুন্নত নামাজও পড়া শুরু করে দিবেন। কিন্তু, আপনি যদি চিন্তা করেন, আগে বদভ্যাস ত্যাগ করবেন, তারপর নামাজ শুরু করবেন ; তাহলে কখনোই নামাজ শুরু করতে পারবেন না। আপনার বদভ্যাসের ফাঁকে নামাজ পড়ুন।

আমাদের মুল সমস্যা হলো - আমরা ত্রুটিপুর্ন নামাজ চাই না। আমরা চাই, একবারে নিখুত চরিত্র আর নিখুত নামাজ। সেই নিখুত করার ইচ্ছার কারনে তরুনেরা নামাজ শুরু করতে পারে না। হোঁচট না খেলে হাটা শেখা যায় না। ভুল বলে অভ্যাস না করলে ইংরেজী বলা শেখা যায় না। বাইসাইকেল থেকে না পড়লে, সাইকেল চালানো শেখা যায় না। ঠিক তেমনই - আপনিও পাপ করার ফাঁকে ত্রুটিপুর্ন নামাজ পড়ুন। পাপ করতে করতে নামাজ পড়ুন। আল্লাহর রহমতে, এমনিতেই আপনার পাপ কমে যাবে।

Comments