ইসলামে নারীবাদ নেই কেন?


ইনশা-আল্লাহ, আজকে নারীবাদ (feminism) জিনিসটা খুব ভালভাবে শিখিয়ে দিব। সেটার আগে দেখি, কারা ইসলামে নারীবাদ খোজে।

১৪০০ বছর আগে, উত্তরাধিকার সুত্রে নারীকে সম্পত্তি দেবার আইন প্রচলন করে ইসলাম (সুরা নিসা - ১১,১২)। সেই সময় মূর্তি-পূজারীরা নারীকে তার মৃত স্বামীর সাথে পুড়িয়ে হত্যা করতো। মাত্র ১৭০ বছর আগে, ব্রিটিশরা নারীকে সম্পত্তি দেবার আইন করে। তখনও মূর্তি-পূজারীরা নারীকে তার মৃত স্বামীর সাথে পুড়িয়ে হত্যা করতো।

আজকের দিনে, মূর্তি-পূজারীরা বিধবা নারীকে পুড়িয়ে হত্যা করেনা ঠিকই, তবে নারীকে সম্পত্তি দেওয়াটা এখনও শিখতে পারেনি। সেই মূর্তি-পূজারীরা ইসলামে নারীবাদ খোজে।

নারীবাদ বোঝার আগে, নারীকে বুঝুন:

অনেক বছর বিদেশে থেকে, ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পরিশ্রমের কাজ করেছি। আমাকে যদি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন - সবচেয়ে পরিশ্রমের কাজ কি? একটুও চিন্তা ভাবনা না করে বলব - শিশু-পালন। হ্যাঁ, শিশু-পালন সবচেয়ে পরিশ্রমের কাজ।

ঘটনা বিস্তারিত বলে সময় নষ্ট করবো না। দুগ্ধপোষ্য শিশুকে কিছুক্ষণ ধরে রাখাটা খুব মজার। কিন্তু কয়েক ঘন্টা লালন-পালন করলে আসল মজা বোঝা যায়। বাধ্য হয়েই তেমন করার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার ছেলের ৩ মাস থেকে ৯ মাস বয়স পর্যন্ত, প্রায় প্রতিদিন ১০-১২ ঘন্টা, আমি লালন-পালন করেছি।

এত পরিশ্রমের কাজ আমি আর কখনো দেখিনি। শিশু পালনের সময় মিনিট নয়, সেকেন্ডে কাজ করতে হয়। ১০ ঘন্টায় ৩৬,০০০ সেকেন্ড হয়। এই ৩৬ হাজার সেকেন্ড এর মধ্যে, ৩৬ সেকেন্ড সময়ও পাওয়া যায় না। প্রতিটি সেকেন্ড সতর্ক থাকতে হয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অসতর্কতায় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

কোন মহিলাকে শিশু-পালন করতে দেখছেন? তারা কত সহজে, রান্না, কাপড় ধোয়া, ইত্যাদি কাজের ফাকে শিশু-পালন করে। এত পরিশ্রমের একটা কাজ করছে, সেটা টেরই পাওয়া যায় না !!

নারী জাতিকে স্যালুট। এ শুধু আপনারাই পারেন।

আমি শিশু-পালন এর চেষ্টা করতে পেরেছি। কিন্তু, আরো অনেক বিষয় আছে, যেগুলো চেষ্টা করার কোন উপায় নেই। গর্ভবতী নারীর ১০ মাসের বেদনা ও পরিশ্রম ; প্রসব বেদনা ; শিশুকে দুধ পান করানো। ইত্যাদি বিষয় কোন পুরুষের চেষ্টা করার উপায় নেই।

পুরুষেরা একটি সহজ পরীক্ষা করবেন। এক কেজি ওজনের একটি পাথর, পেটের সাথে বেধে রাখবেন। একমাস ধরে, তেমন পাথর বেধে রাখতে পারবেন তো?

সন্তান জন্মের সময় যে প্রসব বেদনা হয়, সেটা হলো মানব জাতির সবচেয়ে বড় শারীরিক বেদনা। এই বেদনা নাকি ২০টি হাড় ভেঙে যাবার মতন ব্যথা। কোন পুরুষকে এমন ব্যথা দিলে, সে তখনই মরে যাবে।

বিষয়টা গভীরভাবে ভেবে দেখুন -

  1. একজন নারী ১০ মাস ধরে গর্ভধারণ এর পরিশ্রম করে।
  2. তারপর, সন্তান জন্মের সময় ব্যথায় প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যায়।
  3. তারপর, নিজের দেহে সন্তানের জন্য খাবার (দুধ) উতপন্ন করে, সেটা সন্তানকে খাওয়ায় (অন্তত ২ বছর)।
  4. তারপর শিশু-পালনের পরিশ্রম করে।

সবচেয়ে বড় কথা, নারী এমন পরিশ্রম একাধিকবার করে। প্রতিটা সন্তানের জন্য আলাদাভাবে করে।

এতক্ষণ যা বলেছি, সেটার মুল কথা হলো - নারী এমন কিছু পরিশ্রম করে, যেটা পুরুষের জন্য অসম্ভব। নারী জাতি এই অসম্ভব কাজগুলো না করলে, মানব জাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতো।

নারীকে দিয়ে তেমন অসম্ভব পরিশ্রম করাবেন। এরপর তাদেরকে বুদ্ধি দিবেন - নারী পুরুষ সমান অধিকার। তাদেরকে শেখাবেন - পুরুষেরা (বাইরে) যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, নারীরা সেগুলো সবই করতে পারে। এমন পরিশ্রম করাটা নাকি সমান অধিকার।

এভাবে, সমান অধিকারের কথা বলে, নারীকে দিয়ে ঘরে ও বাইরে সকল পরিশ্রমের কাজ করিয়ে নেওয়ার ফন্দিকে নারীবাদ (feminism) বলে।

Comments