পাপ করতে করতে নামাজ পড়ুন


বাংলাদেশের মুসলমান নামাজের গুরুত্ব জানে। নিয়মিত নামাজ পড়ার ইচ্ছা আছে, তবুও অনেক তরুন-তরুণী নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করতে পারছে না। এই লেখাটি সেই তরুন-তরূনীদের জন্য। নামাজ শুরু করার পেছনে, তাদের শুধুমাত্র একটি বাধা আছে -

  • তরুন তরুণীরা সবসময় খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ভিডিও দেখা, চ্যাটিং করা, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড ইত্যাদি গুরুত্বপুর্ন (!) কাজে ব্যাস্ত থাকে। তেমন ব্যাস্ততার মধ্য থেকে আধা ঘন্টা সময় বের করে নামাজ পড়াটা কস্টকর।

ইনশা-আল্লাহ ; আজকে সেই সমস্যার সমাধান করবোঃ

২৪ ঘন্টায়, ফরজ নামাজ মাত্র ১৭ রাকাত। আপনি শুধুমাত্র ফরজ নামাজ পড়ুন। আপাতত, সুন্নত নামাজ পড়তে হবে না। আবারও বলছি - সুন্নত নামাজ পড়তে হবে না। দুই-চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে সর্বচ্চো ৫-১০ মিনিট সময় লাগে। 

আপনি বন্ধুদের সাথে তাস খেলছেন। নামাজের সময় হলে, ৫-১০ মিনিটে নামাজ পড়ে এসে, আবার তাস খেলা শুরু করুন। আপনি বাস্ট্যান্ডে বসে, বন্ধুদের সাথে কলেজগামী মেয়েদের দেখছেন আর নিজেরা বলাবলি করছেন, কোন মেয়েটির চোখ সুন্দর, কোন মেয়েটির ঠোঁট সুন্দর। নামাজের সময় হলে, ৫-১০ মিনিটে নামাজ পড়ে এসে, আবার কলেজগামী মেয়ে দেখা শুরু করুন। তরুণীরাও এমন করবেন। নিজেদের মধ্যে ফ্যাশন ও মেকাপ নিয়ে আলোচনা করছেন, নামাজের সময় হলে, ৫-১০ মিনিটে নামাজ পড়ে এসে, আবারও ফ্যাশন আর মেকাপ নিয়ে আলোচনা করুন। টিভি সিরিয়াল দেখছেন ; লুডু খেলছেন। যেটাই করুন না কোন ; আজান হলে, ৫-১০ মিনিটে নামাজ পড়ুন। তারপর ফিরে এসে সেই কাজটিই করতে থাকুন।  

  • এভাবে আপনার দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজের ফাঁকে নামাজ পড়ুন। নামাজের জন্য কোন কাজ বাদ দিবেন না। কোন বদভ্যাস ত্যাগ করবেন না। বদভ্যাসের ফাঁকে ফাঁকে নামাজ পড়ুন। পাপ করতে করতে নামাজ পড়ুন। 

এভাবে নামাজ পড়তে পড়তে, একসময় আপনার বদঅভ্যাস ত্যাগ করতে পারবেন। সেই সাথে আপনি ধীরে ধীরে ফরজের সাথে সুন্নত নামাজও পড়া শুরু করে দিবেন। কিন্তু, আপনি যদি চিন্তা করেন, আগে বদভ্যাস ত্যাগ করবেন, তারপর নামাজ শুরু করবেন ; তাহলে কখনোই নামাজ শুরু করতে পারবেন না। আপনার বদভ্যাসের ফাঁকে নামাজ পড়ুন। পাপ করতে করতে নামাজ পড়ুন। একসময় পাপ বন্ধ হবে। 

আলহামদুলিল্লাহ্‌ ; বাংলাদেশে নামাজ পড়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ৫০ বছর আগে, কেবলমাত্র ৬০+ বয়সের মানুষ নামাজ পড়তো। ২০ বছর আগে, শুধুমাত্র ৪০+ বয়সের মানুষ নামাজ পড়তো। বর্তমানে ২০ (+/-) বয়সের তরুনেরা নামাজ পড়ে।

মেয়েরা খুবই পরিচ্ছন্ন থাকে। তবে, ছেলেদের একটি সমস্যা আছে। তারা টয়লেটে টিস্যু ব্যাবহার করে না। তাদের প্যান্ট সবসময়ই নোংরা থাকে। তেমন অবস্থায় ওজু-নামাজ হয় না। তাই রাস্তাঘাটে ঘরাফেরার অবস্থায় নামাজ পড়তে পারে না। 

  • প্যান্ট নোংরা কিনা, সেটা দেখার কোন দরকার আপাতত নেই। যখন আজান দিবে, তখন দৌড়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ুন। আপনার ওই অপরিস্কার প্যান্ট নিয়েই নামাজ পড়ুন। দুপুরে এমন অপবিত্র পোশাকে নামাজ পড়ুন ; বিকালে অপবিত্র পোশাকে নামাজ পড়ুন ; রাতেও একই কাজ করুন। 

এভাবে মাত্র দুই-একবার অপবিত্র পোশাকে নামাজ পড়ার পরে, আপনি ঠিকই বুঝতে পারবেন - আপনি অযথা নামাজ পড়ছেন ; আপনার নামাজ সঠিক হচ্ছে না। এরপর আপনি নিজেই পোশাক পরিষ্কার রাখা শিখে যাবেন। আপনি নিজেই বুঝে ফেলবেন, নিজের পকেটে টিস্যু পেপারের প্যাকেট রাখলে নিজের পোশাক পরিষ্কার রাখা যায়।

লক্ষ্য করুন, ভবিষ্যতে কবে পোশাক পরিষ্কার রাখতে পারবেন, তারপর নামাজ শুরু করবেন ; এমন ভুল করবেন না। অপরিস্কার পোশাকে নামাজ শুরু করুন ; তারপর পোশাক পরিষ্কার রাখা শিখে ফেলবেন। অপরিস্কার পোশাকে শুরু না করলে, কখনোই নামাজ শুরু করতে পারবেন না। প্রথমে অপরিস্কার পোশাকেই নামাজ শুরু করুন।

আমাদের মুল সমস্যা হলো -  আমরা চাই, একবারে নিখুত চরিত্র আর নিখুত নামাজ। সেই নিখুত করার ইচ্ছার কারনে তরুনেরা নামাজ শুরু করতে পারে না। হোঁচট না খেলে হাটা শেখা যায় না। ভুল বলে অভ্যাস না করলে ইংরেজী বলা শেখা যায় না। বাইসাইকেল থেকে না পড়লে, সাইকেল চালানো শেখা যায় না। ঠিক তেমনই - আপনিও পাপ করার ফাঁকে ত্রুটিপুর্ন নামাজ পড়ুন। পাপ করতে করতে নামাজ পড়ুন। আল্লাহর রহমতে, একদিন আপনার নামাজ শুদ্ধ হবে ; আপনার পাপও কমে যাবে।


বোনাসঃ 

এবার অভিভাবকদের বলছি। নামাজ না পড়লে মুসলমানের খাতা থেকে নাম কাটা যায়। নামাজ না পড়লে কাফের হয়ে যেতে হয়। এটা আমার কথা নয়। রাসুল (স) বলেছেন - কাফের ও মুসলমানের পার্থক্য হলো, নামাজ।

  • মানুষের ঈমান এবং শির্ক কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য সালাত ছেড়ে দেওয়া («بين الرجل وبين الشرك أو الكفر ترك الصلاة») সহীহ মুসলিম
  • আমাদের (মুসলমান) ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে যে পার্থক্য তা হলো সালাত। অতএব, যে সালাত ছেড়ে দিল সে কুফুরী করল («العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر») আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ।

আপনার ছেলে-মেয়েকে কত কস্ট করে লেখাপড়া শেখান। সেটার দশ-ভাগের একভাগ কস্ট করে তাদেরকে নামাজ শেখান না। এভাবে তাদেরকে জাহান্নামী বানাচ্ছেন। শুধু তাই নয়। এই ছেলে-মেয়ে হাশরের ময়দানে আপনাদের দোষারোপ করবে। আপনাদেরকে ঠেলে জাহান্নামে নিতে চাইবে।  

Comments